এসিএলের প্রথম ম্যাচে একাধিক সুযোগ নষ্ট দিমিত্রিদের, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টুয়ে রভশানের কাছে আটকে গেল মোহনবাগান
মোহনবাগান – ০
রাভসন এফসি – ০
পাসের ছড়াছড়ি, অজস্র সুযোগ নষ্ট। ‘পরম্পরা, আবেগ, ঐক্য, এগিয়ে চলেছে নৌকো।’ ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে গ্যালারিতে এই পোস্টার চোখে পড়ে। কিন্তু মাঠে তার প্রতিফলন ঘটেনি। বুধবার এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টুর গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে রাভসন এফসির কাছে আটকে গেল মোহনবাগান। ম্যাচের স্কোরলাইন গোলশূন্য। সপ্তাহের মাঝে ১৮,৯০৮ জন সমর্থক মাঠ ভরায়। জয়ের উল্লাস করতে করতে ফেরার সুযোগ ছিল। কিন্তু সেটা হল না। জেতা ম্যাচ ড্র করল মোহনবাগান। প্রথমার্ধ ম্যাড়ম্যাড়ে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের শেষ ২৫ মিনিট পুরোটাই সবুজ মেরুনের। বিশেষ করে শেষ ১৫ মিনিট। কিন্তু দুটো সিটার নষ্ট দিমিত্রি পেত্রাতোসের, একটা জেসন কামিন্সের। দিমি সম্পূর্ণ ফিট থাকলে ম্যাচের রেজাল্ট অন্যরকম হতে পারত। তবে গ্রেগ স্টুয়ার্টকে আগে নামাতে পারতেন হোসে মোলিনা। অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক মনোভাবের খেসারত দিতে হল। ম্যাচের ৬৩ মিনিটে লিস্টন কোলাসোকে নামানোর পর খেলা ঘোরে। কিন্তু দলের এই পারফরম্যান্সের পরও কেন ৭৭ মিনিট পর্যন্ত স্টুয়ার্টকে সাইডলাইনে অপেক্ষা করতে হল জানা নেই। শেষ ১৫ মিনিট যে ফুটবল খেলল বাগান, সেটা প্রথম থেকে খেললে তিন পয়েন্ট নিশ্চিত ছিল।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে ফরমেশন বদলান মোলিনা। সরাসরি ৪-৪-২ ছকে শুরু করেন। সামনে জেসন কামিন্স এবং দিমিত্রি পেত্রাতোস। গ্রেগ স্টুয়ার্টকে প্রথম একাদশে রাখেননি। দু’জন রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডারকে খেলাতে গিয়ে জায়গা হয়নি স্কটিশ স্ট্রাইকারের। এই প্রথম আঠারোজনের দলে জায়গা পান জেমি ম্যাকলারেন। কিন্তু সবুজ মেরুন জার্সিতে অভিষেক হয়নি। প্রথমার্ধে দলের পারফরম্যান্স হতাশাজনক। সাহাল এবং মনবীরকে দেখাই যায়নি। উইং প্লে কার্যত শূন্য। মাঝমাঠে নিজেদের মধ্যে অসংখ্য পাস খেললেও, আক্রমণে উঠতে পারেনি বাগান। যা পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট। প্রথমার্ধে কোনও কর্নার পায়নি মোহনবাগান। গোলের সুযোগও শূন্য। বরং দুটো সুযোগ পায় রাভসন। ম্যাচের ২৫ মিনিটে বাইরে মারেন নাজারভ। তার দু’মিনিটের মাথায় আবার সুযোগ তাজিকিস্তানের। ম্যাচের ২৭ মিনিটে মহম্মদ রাহিমভের শট বাঁচান বিশাল কাইত। এটা ছাড়া বিশেষ পরীক্ষার মুখে পড়তে হয়নি বাগান কিপারকে।
বুধ সন্ধেয় একেবারেই ফিকে কামিন্স এবং দিমিত্রি। ফিটনেসের অভাব রয়েছে পেত্রাতোসের। অস্ট্রেলিয়ানের নড়াচড়া থেকেই যা স্পষ্ট। বলের জায়গায় পৌঁছতেও পারছেন না। কামিন্সও তথৈবচ। মোহনবাগানের প্রথম কর্নার ম্যাচের ৫৬ মিনিটে। এই পরিসংখ্যানই ম্যাচের গতি প্রকৃতি বলে দিচ্ছে। তবে দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচে ফেরে সবুজ মেরুন। লিস্টন, আপুইয়া নামার পর বাগানের খেলায় গতি ফেরে। গ্রেগ স্টুয়ার্ট নামার পর আক্রমণের ঝাঁঝ দ্বিগুণ বাড়ে কলকাতার প্রধানের। ম্যাচের শেষ কোয়ার্টার মোহনবাগানের। তিনটে নিশ্চিত গোলের সুযোগ। কোনওটাই তেকাঠিতে রাখতে পারেনি। সিটার নষ্ট কামিন্সের। সামনে একা রাভসন এফসির গোলকিপার হৃৎসেঙ্কোকে পেয়েও তাঁর গায়ে মারেন। ৮৭ মিনিটে আবার মিস। স্টুয়ার্টের পাস থেকে বাইরে মারেন লিস্টন। নিজে গোলে শট না নিয়ে পাস বাড়ালে গোল হওয়ায় সম্ভাবনা ছিল। তার এক মিনিটের মাথায় গোল করেন দিমিত্রি। অফসাইডের জন্য গোল বাতিল হয়ে যায়। এরপরও সুযোগ এসেছিল। ওয়ান টু ওয়ান পরিস্থিতিতে বিপক্ষ কিপারের গায়ে মারেন পেত্রাতোস। গোলের লক্ষ্যে ৬৪ মিনিটে লিস্টন কোলাসো এবং আপুইয়াকে নামিয়ে দেন মোলিনা। মোহনবাগানের গড়পড়তা মাঝমাঠের খেলায় কিছুটা ঝাঁজ আসে। বেশ কয়েক বার বল নিয়ে এগোনোর চেষ্টা করেন লিস্টন। ৭৬ মিনিটে ম্যাচের সেরা সুযোগ এসেছিল কামিংসের কাছে। রভশানের রক্ষণের ভুলে আপুইয়ার বাড়ানো বল পেয়ে গিয়েছিলেন কামিংস। তাঁকে ধাওয়া করছিলেন ওফোরি। কামিংসের সামনে একা শুধু বিপক্ষ গোলকিপারই ছিলেন। সেই সুযোগও কাজে লাগাতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপার। গোলকিপারের মাথায় উপর দিয়ে হালকা শটে যেখানে গোল করা যায়, সেখানে তিনি দায়সারা একটি শট মারলেন যা বিপক্ষ গোলকিপার হৃৎসেঙ্কো সহজেই তালুবন্দি করেন।