মঙ্গলবারই সরানো হচ্ছে বিনীত গোয়েলকে, ডিসি(নর্থ)ও দুই স্বাস্থ্যকর্তাকে বদলি,জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি মেনেছেন মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘৯৯ শতাংশ দাবি মেনে নিয়েছি। আর কী করব!’’
সরকার পক্ষের পঞ্চম এবং শেষ চেষ্টা। মুখ্যসচিবের ডাকে সাড়া। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতে পাঁচ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা। দু’পক্ষের বৈঠক। কেটেছে প্রায় ৫ ঘণ্টা। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২টা। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি দল বাসে চড়ে গন্তব্য সল্টলেক। স্বাস্থ্য ভবনের সামনের ধর্নামঞ্চে। জট কাটল? জুনিয়র ডাক্তারের সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ‘‘আলোচনা সদ্র্থক। কলকাতা পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে বিনীত গোয়েলকে সরানো হচ্ছে।’’
বাড়ি থেকে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করলেন, আরজি কর কাণ্ডের প্রেক্ষিতে চিকিৎসকদের দাবি মেনে সিপি-র পদ থেকে মঙ্গলবারই সরানো হচ্ছে বিনীত গোয়েলকে। ডাক্তারদের দাবি মেনে নিয়ে স্বাস্থ্য অধিকর্তা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তাকেও অপসারণ করা হচ্ছে। তিন জনকেই অন্য পদে দায়িত্ব দেওয়া হবে। সল্টলেকে স্বাস্থ্য ভবনের সামনের ধর্নাস্থলে আন্দোলনের কাছে ‘নতিস্বীকার’ করেছে সরকার। কাজে ফেরার সিদ্ধান্ত এখনই নয় বলেই জানিয়ে দিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁরা জানালেন বৈঠকে যে যে আশ্বাস মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছেন, সেগুলো কার্যকর হলে তবেই আন্দোলন প্রত্যাহার করা হবে।
মমতার কথায়, ‘‘৯৯ শতাংশ দাবি মেনে নিয়েছি। আর কী করব!’’ তিনি জানান, জুনিয়র ডাক্তারদের পাঁচটি দাবির প্রথমটি সিবিআই এবং আদালতের বিষয়। বাকি চারটির মধ্যে তিনটেয় মান্যতা দিয়েছে তাঁর সরকার। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কলকাতা পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে বিনীত গোয়েলকে সরানো হবে। মঙ্গলবার বিকেল ৪টের পর এই সংক্রান্ত নোটিস দিয়ে দেওয়া হবে। বিনীতকে নিজের পছন্দের পদ দেওয়া হবে বলেও জানান মমতা। পাশাপাশি, চিকিৎসকদের দাবি মেনে কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (উত্তর) অভিষেক গুপ্তকেও সরানো হচ্ছে। সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিকর্তা কৌস্তভ নায়েক, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস হালদারকেও। আমরা কাউকে অশ্রদ্ধা, অসম্মান করিনি। কিন্তু ওঁদের বিরুদ্ধে যে হেতু চিকিৎসকদের ক্ষোভ আছে, বলেছেন, ওঁদের উপর আস্থা নেই, তাই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রায় ৬টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বৈঠক হয়েছে। ওঁদের পক্ষ থেকে ৪২ জন সই করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে মিনিটসে্ সই করেছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। আমরা অভিনন্দন জানিয়েছি চিকিৎসকদের। আমরা খুশি যে, তাঁরাও খুশি। ওঁরা বক্তব্য রাখতে চেয়েছিলেন। সেই সুযোগ দিয়েছি। আমরাও আমাদের বক্তব্য রেখেছি।’’ জুনিয়র চিকিৎসকদের উদ্দেশে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতার বার্তা, ‘‘প্লিজ! এ বার কাজে ফিরুন।’’
আন্দোলনকারীদের কাছে নতিস্বীকার করল রাজ্য সরকার। ৩৮ দিন পর জয়। এই জয় সাধারণ মানুষ, চিকিৎসক, নার্স— সকলের। সবাই পাশে না থাকলে এই জয় সম্ভব ছিল না। সে জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জুনিয়ার ডাক্তাররা। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের শুনানি রয়েছে সে দিকে নজর থাকবে আমাদের। এ ছাড়াও কত দিনে আমাদের দাবিগুলি বাস্তবায়িত হয় সে দিকেও নজর থাকবে আমাদের।”
মঙ্গলবার আরজি কর মামলার চতুর্থ শুনানি রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। কাজে যোগ না দেওয়ার জন্য কর্মবিরতিতে অংশ নেওয়া জুনিয়র ডাক্তারদের শীর্ষ আদালতে অস্বস্তিতে পড়তে হতে পারে কি না, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে জল্পনা। এ বার জুনিয়র ডাক্তারদের হয়ে সওয়াল করবেন প্রবীণ আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ। আরজি কর মামলায় এখনও পর্যন্ত যুক্ত হয়েছে ৩৪টি পক্ষ। মামলা লড়ছেন কম করে ২০০ জন আইনজীবী। আইনি লড়াইয়ে এই মমলায় যেমন রয়েছেন দেশের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা, তেমনই রয়েছেন কপিল সিব্বল। রাজ্য সরকারের তরফে কপিলই সওয়াল করছেন। মামলায় যুক্ত হয়েছেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং ফিরদৌস শামিমের মতো আইনজীবীরা।