বিচার চেয়ে কালো ঘুড়ির আকাশ দখল, লজ্জার আহ্বান উৎসব প্রেমী মমতার! ‘জাস্টিস ফর আরজি কর’ স্লোগানে প্রতিবাদের ধব্জা উড়বে বিশ্বকর্মা পুজোয়, বিতর্কের মধ্যেও নিজেই উৎসবে ফিরেছেন মুখ্যমন্ত্রী
‘জাস্টিস ফর আরজি কর’ স্লোগানে মুখরিত কলকাতা-সহ রাজ্যবাসী থেকে দেশ-বিদেশের ভারতীয়েরা। স্বাধীনতা দিবসের উৎসবের রাতে ত্রিবর্ণ পতাকার সঙ্গে বাংলার মানুষ উড়িয়েছিল প্রতিবাদের ধব্জা। আন্দোলনে শামিল হয়েছে নাগরিক সমাজ থেকে শুরু করে দেশের প্রান্তিক জনতাও। এ বার প্রতিবাদের ভাষা বাঙালির পার্বনেও। ভাদ্র সংক্রান্তিতে বিশ্বকর্মা পুজোয় ঘুড়ি উড়িয়ে আরজি করের ঘটনায় বিচার চেয়ে সরব হবেন ঘুড়িপ্রেমীরা। ৯ আগস্ট আরজি কর হাসপাতালে যুবতী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় উত্তাল দেশের রাজনীতি।
‘জাস্টিস ফর আরজি কর’ স্লোগানকে সামনে রেখে ফের ঘুড়ি উড়িয়ে প্রতিবাদের ঝড় তুলতে চায় কলকাতা। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন ঘুড়ি উড়িয়ে বিচারের দাবিতে সরব হওয়ার ডাক দেওয়া হয়েছে সমাজমাধ্যমে। এই বিচারের দাবি তুলেই ঘুড়ি উড়িয়ে প্রতিবাদ এবং বিচার চাওয়ার স্বরও মিলে গিয়েছে সমাজমাধ্যম। মঙ্গলবার ভোর থেকেই কলকাতার সব প্রান্তে উড়বে প্রতিবাদের এই ঘুড়ি। কোনও ঘুড়িতে লেখা থাকবে, ‘জাস্টিস ফর আরজি কর’, আবার কোনও ঘুড়িতে মোমবাতির ছবি দিয়ে লেখা থাকবে, ‘বিচার পাক অভয়া’। ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় এই বিচারের দাবি। বেশির ভাগ ঘুড়ির রং কালো। কালো রংয়ের ঘুড়িতেই সাদা রং দিয়ে বিচারের দাবি লেখা।
উত্তর কলকাতার সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের ‘ইন্ডিয়া কাইটস’ দোকানে আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ঘুড়ি তৈরি করা হয়। পুজো হোক বা উৎসব, নিহত ডাক্তার বোনের বিচারের দাবিতে তারা সরব। প্রতিটি ঘুড়ির দাম ১৫ টাকা। ‘ফ্রিডম কাইট ক্লাব’ নামে একটি সংস্থা রবিবার বিচারের দাবিতে তৈরি ঘুড়ি বিতরণ করেছে। তাদের বিতরণ করা ঘুড়িও রয়েছে হরেক রকমের বিচারের দাবিতে স্লোগান। একটি স্লোগানে লেখা হয়েছে, ‘লক্ষ কণ্ঠে একই স্বর, বিচার চায় আরজি কর’, কোনও স্লোগানে লেখা হয়েছে, ‘উৎসব হোক আন্দোলনের’। কোথাও আবার স্লোগানে উঠে এসেছে ‘উৎসব হোক ন্যায় বিচারের’। ভাদ্র সংক্রান্তিতে বাঙালির রান্নাপুজো এবং বিশ্বকর্মা পুজোয় প্রতিবাদের রং।
এদিকে নিজেই উৎসবে ফিরেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘উৎসব আর পুজোয় ফেরা’ বিতর্কের মধ্যেই প্রস্তুতি শুরু পুজো কার্নিভালের। দরপত্র আহ্বান সরাসরি সম্প্রচারেরও। আরজি কর-কাণ্ডের জেরে রাজ্য জুড়ে আন্দোলনের পরিবেশ। দুর্গাপুজো উৎসবের চেহারা নেবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন। রাজ্য সরকার বসে নেই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জুলাই মাসেই ঘোষণা করে দিয়েছেন ১৫ অক্টোবর কলকাতায় পালিত হবে দুর্গাপুজোর কার্নিভাল। প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে রাজ্যের পূর্ত দফতর। মঞ্চ তৈরি থেকে রেড রোড এলাকার বড় গাছের ডাল কাটা কিংবা রাস্তায় বালি ছড়ানো থেকে আলোর ব্যবস্থা করা— সবের জন্যই টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হল। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ইন্টারনেট পরিষেবার জন্যও দরপত্র চাওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারের পক্ষে। বহু ‘ভিভিআইপি’ সেখানে উপস্থিত থাকবেন বলেও দরপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। সবক’টি বিজ্ঞপ্তিতেই বলা হয়েছে, ৯ অক্টোবর অর্থাৎ ষষ্ঠীর মধ্যে যাবতীয় কাজ শেষ করতে হবে।
১২ সেপ্টেম্বর নবান্নে প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচারে মমতা বলেন, ‘‘এক মাস তো হয়ে গেল। আমি অনুরোধ করব, পুজোয় ফিরে আসুন, উৎসবে ফিরে আসুন।’’ মুখ্যমন্ত্রীর কথায় ‘আহ্বানের সুর’ থাকলেও, এর মধ্যে রয়েছেন আন্দোলনকে স্তিমিত করে দেওয়ার রাজনীতি বলে অভিযোগ। দাবি, মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন রাজ্যের মানুষ উৎসবে মেতে উঠলে টানা চলতে থাকা জনগণের আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যাবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘আগামী ১৬ অক্টোবর লক্ষ্মী পুজো। তার আগের দিন ১৫ অক্টোবর কলকাতায় পুজো কার্নিভালের আয়োজন করা হবে। জেলাগুলিকেও বলা হচ্ছে লক্ষ্মী পুজোর আগে দুর্গাপুজোর কার্নিভাল করে নিতে। ১২ তারিখ দশমী, তা হলে হাতে ১৩ ও ১৪ তারিখ সময় থাকবে। এই দিনগুলোতে ঠাকুর বিসর্জন হবে। আর শেষ বিসর্জন হবে ১৫ তারিখ। ১৬ তারিখ যে হেতু লক্ষ্মীপুজো তাই এর বেশি আর রাখা যাবে না।’’ পূর্ত দফতর ইন্টারনেট পরিষেবার জন্য আলাদা দরপত্র চাওয়ার সঙ্গে এক সঙ্গে আরও অনেকগুলি কাজের জন্য প্রায় ৭০ লাখ টাকার কাজের জন্য দরপত্র চেয়েছে। ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দরপত্র অনলাইনে জমা দেওয়া যাবে বলে উল্লেখ রয়েছে।