October 12, 2024

ধরা পড়ল সন্দীপের কীর্তি‌ ‘প্রমাণ লোপাট’ ! ধর্ষণ-খুন মামলাতেও সন্দীপ ঘোষকে গ্রেফতার করল সিবিআই

0

আরজি কর ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় সন্দীপ ঘোষ গ্রেফতার। টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকেও গ্রেফতার করেছে সিবিআই। তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগ এবং দেরিতে এফআইআর দায়ের করায় তাঁকে গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপকে আগেই আর্থিক দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল। আপাতত প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে ঠাঁই হয়েছে সন্দীপের। আর্থিক দুর্নীতি মামলায় জেল হেফাজতে থাকার সময়ই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসক (স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া) ধর্ষণ এবং খুনের মামলার তাঁকে ‘শোন অ্যারেস্ট’ দেখানো হল। সেইসঙ্গে টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকেও গ্রেফতার করেছে সিবিআই। সূত্রের খবর, তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগ এবং দেরিতে এফআইআর দায়ের করায় তাঁকে গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।

সন্দীপের অত্যাচারের ‘কীর্তি’
১) রণবীর আল্লাহবারিয়ার ‘দ্য রণবীর শো’ পডকাস্টে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের এক রেসিডেন্ট ডাক্তার বলেন, ‘সন্দীপের বিরুদ্ধে ২০২১ সালে আন্দোলন হয়েছিল। যে পড়ুয়ারা ওই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের বছরের পর বছর ধরে ফেল করিয়ে দেওয়া হত। ভালো নম্বর পাওয়া সত্ত্বেও (পাশ করানো হত না)। প্রথম বা দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও ওই পড়ুয়াদের ফেল করিয়ে দেওয়া হত। আর সেটা করত শীর্ষ কর্তৃপক্ষ।’
২) এক মহিলা দাবি করেছেন যে করোনাভাইরাস মহামারীর সময় সন্দীপকে যখন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের অধ্যক্ষ করা হয়েছিল, তখন তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছিল। আর তাঁর মেয়ে এবং বন্ধুদের সেই প্রতিবাদের মাশুল ভুগতে হয়েছিল বলে দাবি করেছেন ওই মহিলা। তিনি দাবি করেন, তাঁর মেয়েকে ‘অকথ্য অত্যাচার’ করা হয়েছিল। বেশি-বেশি করে ডিউটি দেওয়া হত। ইন্টার্নশিপ শেষ হওয়ার বিষয়টি আটকে দিয়েছিলেন সন্দীপ। সেজন্য উদভ্রান্তের মতো টানা ১৭ দিন স্বাস্থ্যভবনে ছুটতে হয়েছিল। নিজের যোগ্যতায় যিনি ডাক্তার হয়েছেন, তাঁকে স্রেফ শপথবাক্য পাঠ করানোর জন্য কার্যত সন্দীপের হাতে-পায়ে ধরতে হয়েছিল। তারপরও শপথবাক্য পাঠ করাননি বলে দাবি করেছেন ওই মহিলা। শুধু তাই নয়, মহিলার অভিযোগ, ‘ঘরের মধ্যে ডেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে মাথার চুলটা দেখিয়ে (সন্দীপ) বলেছিল, আমার এটাও ছিঁড়তে পারলি না তোরা।’

চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় মোট ধৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল তিন। প্রথম গ্রেফতার করা হয়েছিল কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে। দুপুর তিনটেয় সিজিও কমপ্লেক্সে হাজির হন অভিজিৎ। তখন থেকে তাঁকে জেরা করা হচ্ছিল। প্রায় সাত ঘণ্টার জেরার পর আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় এ বার গ্রেফতার হলেন ওই হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। টালা থানার তৎকালীন ওসি অভিজিৎকে রবিবার সকালে আদালতে হাজির করানো হবে। আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হবে। তাই তাঁকেও রবিবারই আদালতে হাজির করানো হবে। প্রাক্তন অধ্যক্ষের গ্রেফতারির খবর সল্টলেকের স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ধর্নায় বসা চিকিৎসকদের কাছে পৌঁছতেই তাঁরা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন। নানা রকম স্লোগান ওঠে সেখানে। আরজি কর-কাণ্ডের ৩৬ দিনের মাথায় প্রাক্তন অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করার ঘটনায় পড়ুয়া এবং জুনিয়র ডাক্তাররা বলেন, ‘‘বিচারের দিকে এক পা এগোনো গেল। তবে ঘটনার পর ৩৫ দিন কেন সময় লাগল সেটাও আমাদের প্রশ্ন।’

আরজি করে আর্থিক দুর্নীতি মামলার তদন্তে শুক্রবার সন্দীপের পৈতৃক বাড়ি এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ ওষুধ ব্যবসায়ীদের অফিসে, বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে ইডি। ওই মামলায় আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজত হয়েছে সন্দীপের। তিনি রয়েছেন প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে। টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ ‘অসুস্থ’ বলে দাবি করে গত ৫ সেপ্টেম্বর কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সিবিআইয়ের একটি সূত্রে খবর, শনিবার দুপুরে তিনি সিজিও কমপ্লেক্সে যান। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁর বক্তব্যে বেশ কিছু অসঙ্গতি দেখা যায়। তার পরেই তিনি গ্রেফতার হন বলে খবর। টালা থানার প্রাক্তন ওসি-র বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগ রয়েছে। ঘটনার পর অভিযোগ দায়ের থেকে ময়নাতদন্ত, একাধিক ক্ষেত্রে অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। সুপ্রিম কোর্টে তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর ‘গায়েব’ করার অভিযোগ তুলেছিলেন আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed