February 17, 2025

‘সন্দীপের গ্রেফতারির খবর পাওয়ায় হয়তো আমাদের সঙ্গে মিটিংয়ের সাহস হয়নি’! ‘ভিডিয়ো ছাড়াই বৈঠকে রাজি হই, তাও কার্যত ঘাড়ধাক্কা বের করে দিলেন চন্দ্রিমা’

0
Mamata

কালীঘাটের বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পরে সুর চড়ালেন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা। শনিবার রাতে কালীঘাট থেকে সল্টলেকের স্বাস্থ্যভবনের অবস্থান মঞ্চের কাছে ফিরে আসার পরে জুনিয়র ডাক্তাররা দাবি করেন, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার পর থেকে তাঁরা ৩৫ দিন ধরে রাস্তায় আছেন। প্রয়োজন পড়লে আরও ৩৫ দিন রাস্তায় থাকবেন। তাঁদের দমানো যায় না। সেইসঙ্গে কটাক্ষের সুরে জুনিয়র ডাক্তাররা বলেন, ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার প্রাক্তন ওসিকে অভিজিৎ মণ্ডলকে যে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেটার খবর হয়ত আগেই পৌঁছে গিয়েছিল কালীঘাটে। তাই হয়ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রা বৈঠক করার সাহস দেখাতে পারেননি বলে অভিযোগ তোলেন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা।

সন্দীপের গ্রেফতারিতে উচ্ছ্বসিত জুনিয়র ডাক্তাররা। এক আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারের কথায়, ‘এখন কী মনে হচ্ছে, বলুন তো! এই যে কিছুক্ষণ আগে আমাদের সহকর্মীর রেপ এবং মার্ডার কেসে এই যে সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার (প্রাক্তন) ওসিকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেই খবরটা তাঁরা পেয়ে গিয়েছিলেন। তাই হয়তো এই মিটিং করার সাহস পাননি।’ জুনিয়র আন্দোলনের অন্যতম প্রতিনিধি দাবি করেন, সন্দীপ এবং অভিজিৎকে গ্রেফতারির পরে এটা প্রমাণ হয়ে গেল যে তাঁরা যতগুলি দাবি তুলেছেন, প্রতিটি নায্য দাবি। সেইসঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, ‘এই সন্দীপ ঘোষ, এই টালা থানার ওসির সুতো কোথায় বাঁধা? এই স্বাস্থ্যভবন, এই বিনীত গোয়েল। যিনি কলকাতার পুলিশ কমিশনার।’ উল্লেখ্য, জুনিয়র ডাক্তাররা যে গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে স্বাস্থ্যভবনের সামনে অবস্থান করছেন, তাতে যে দাবিগুলি তোলা হয়েছে, তার মধ্যে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব, কলকাতার পুলিশ কমিশনার, স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা এবং স্বাস্থ্য অধিকর্তারও ইস্তফার দাবি।

লাইভস্ট্রিমিংয়ের দাবি ছেড়ে কোনওরকম ভিডিয়ো ছাড়াই বৈঠকে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। এমনই দাবি করলেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা। কিন্তু স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের কারণে পুরোটা ভেস্তে গিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা। শনিবার রাতে কালীঘাটে মমতার বাসভবনের কাছে দাঁড়িয়ে জুনিয়র ডাক্তাররা দাবি করলেন, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা এসে বলেন যে আজ অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। আজ আর হবে না। বাসে করে বেরিয়ে যেতে বলেন। নাহলে বাস ডেকে বের করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন চন্দ্রিমা। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী কার্যত তাঁদের ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন বলে দাবি করেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সল্টলেকে ধরনা মঞ্চের কাছে ফিরে গেলেন। পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, সেটা নিয়ে আলোচনা করা হবে। যদিও বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নির্দিষ্টভাবে কোনও অভিযোগ করেননি জুনিয়র ডাক্তাররা।

কালীঘাটে দু’জন ভিডিয়োগ্রাফারকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। রাজ্যকে প্রস্তাব দেওয়া হয় যে প্রশাসনের তরফে আলাদা করে ভিডিয়োগ্রাফি করা হোক। আর তাঁরাও আলাদাভাবে ভিডিয়ো করবেন। কিন্তু সেই প্রস্তাবেও রাজ্য সরকার রাজি হয়নি বলে দাবি করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। এমনকী রাজ্য সরকারের তরফে যিনি ভিডিয়ো করবেন, তাঁর সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিকে রাখারও প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়া হয়। রাজ্যের তরফে জানানো হয়, রাজ্য সরকারের তরফে বারবার সওয়াল করা হচ্ছিল যে শুধুমাত্র তারাই ভিডিয়ো করবে। প্রাথমিকভাবে রাজি ছিলেন না জুনিয়র ডাক্তাররা। কিন্তু পরে মুখ্যমন্ত্রী নিজে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। কথা বলেন জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে। তিনি জানান যে সুপ্রিম কোর্টে এখন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের খুনের ঘটনায় এখন মামলা চলছে। তাই এখন ভিডিয়ো প্রকাশ করা যাবে না। তাঁর উপরে আস্থা-ভরসা রাখার আর্জি জানিয়ে মমতা জানান যে আপাতত রাজ্যের তরফে ভিডিয়ো করে রাখা হবে। পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি নিয়ে কোনওরকম হেরফের ছাড়াই জুনিয়র ডাক্তারদের হাতে তুলে দেওয়া হবে সেই ভিডিয়ো। আর বৈঠকের কার্যবিবরণী রাখা হবে। তাতে রাজ্য সরকারের আমলা এবং জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিরা স্বাক্ষর করবেন। মমতার সেই প্রস্তাবের পরে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁরা জানান, মুখ্যমন্ত্রী যেহেতু ব্যক্তিগতভাবে এসে তাঁদের আর্জি জানিয়েছিলেন, তাই ভিডিয়োগ্রাফি ছাড়াই তাঁরা বৈঠকে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। আর সেই বিষয়টি যখন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমাকে জানানো হয়, তখন তিনি সাফ জানিয়ে দেন যে জুনিয়র ডাক্তাররা ‘লেট’ করে ফেলেছেন। তাঁরা তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করেছেন। আজ আর বৈঠক হবে না।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed