‘মানুষের স্বার্থে আমি পদত্যাগ করতে রাজি’ : মমতা, লাইভ স্ট্রিমিংয়ে ভয় মমতার, লাইভস্ট্রিমিংয়ের সাথে সুপ্রিমকোর্টের রায়ের কোনো সম্পর্ক নেই!
নবান্নে রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে আন্দোলনরত জুনিয়ার চিকিৎসকদের বৈঠকের সম্ভাবনা ছিল। চিকিৎসকরা তাঁদের প্রতিনিধি দল নিয়ে নবান্নের উদ্দেশে বাসে করে রওনাও হন চিকিৎসকরা। প্রতিনিধি দলের চিকিৎসকদের সংখ্যা ৩০ এর বেশি ছিল। নবান্নের বৈঠকে চিকিৎসকরা লাইভ স্ট্রিমিং এর দাবিতে ছিল অনড়। সেই দাবি মানতে নারাজ ছিল প্রশাসন। এই পর্ব ২ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে। শেষমেশ মুখ খোলেন মমতা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘নবান্নের গেট থেকেও যাঁরা এলেন না, তাঁদের ক্ষমা করলাম… আমি সাধ্যমত চেষ্টা করলাম।’ একইসঙ্গে তিনি বলেন,‘পদত্যাগ করতে রাজি আছি, আমার মুখ্যমন্ত্রীর পদ চাইনা।’ এরসঙ্গেই তিনি তিলোত্তমার বিচারের ডাক দেন। মমতা বলেন,’সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে আমাদের অনেক অপমান করা হয়েছে, অনেক কুৎসা , অপপ্রচার হয়েছে.. সাধারণ মানুষ জানতেন না এর মধ্যে একটা কালার আছে।’ মমতা বলেন, ‘ আশা করি মানুষ বুঝতে পারছেন ওরা বিচার চায়না, ওরা চায় চেয়ার। আমি মানুষের স্বার্থে, এমনকি নিজে পদত্যাগ করতেও রাজি আছি। মুখ্যমন্ত্রীর পদ আমি চাই না। আমি চাই মানুষ বিচার পাক। তিলোত্তমা বিচার পাক, সাধারণ মানুষ চিকিৎসা পাক।’ মুখ্যমন্ত্রী বলেন,’আপনাদের যেমন আন্দোলন আছে, পরিবারগুলো যদি আমাদের কাছে কৈফিয়ৎ চায়, তাহলে আমাদেরও তো কৈফিয়ৎ দিতে হবে। আমরা তার জন্য তৈরি থাকব।’
এদিকে, এর আগে, নবান্ন ঘিরে কার্যত নবান্ন ঘিরে এদিন স্নায়ুযুদ্ধ দেখা যায় দুইপক্ষের মধ্যে। একদিকে আন্দোলনরত চিকিৎসকরা, অন্যদিকে প্রশাসন। প্রশাসনের তরফে চিকিৎসকদের ১৫ জনের প্রতিনিধি দলের কথা বলা হলেও চিকিৎসকরা নিজেদের দাবি অনড় রেখে ৩০ জন চিকিৎসককে প্রতিনিধি দলে রাখবেন বলে জানান। পরে নবান্ন জানিয়ে দেয় ওই প্রতিনিধি দলে ৩০ জনের বেশি ছিলেন। এরপর নবান্নে ওই ৩০ জন চিকিৎসকের প্রতিনিধি দলকে বৈঠকের জন্য প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। তবে নবান্ন সাফ জানায় বৈঠকের লাইভ স্ট্রিমিং হবে না। এদিকে, সেই লাইভ স্ট্রিমিং এর দাবিতেই অনড় থাকেন চিকিৎসকরা। এরপর ২ ঘণ্টার বেশি সময় মুখ্যমন্ত্রী অপেক্ষা করার পর তিনি নিজের বক্তব্য পেশ করেন। মমতা বলেন,’ নবান্নের গেট থেকেও যাঁরা এলেন না, তাঁদের ক্ষমা করলাম… আমি সাধ্যমত চেষ্টা করলাম।’ এরপরও বৈঠকে বসার সম্ভাবনা তৈরি হলে তা নিয়ে তিনি তাঁর অফিসারদের এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
পুরোটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাটক, লাইভস্ট্রিমিংয়ে আসলে ওনার মুখোশ খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল তাই জুনিয়র ডাক্তারদের ন্যায্য দাবি মানলেন না। জুনিয়র ডাক্তাররা স্বাস্থ্য দফতরের দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা করতেন, তাতেই স্বাস্থ্য মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভয় পেয়ে যান, বলে তীব্র অভিযোগ। ‘মুখ্যমন্ত্রী যে ঘরে বসে অপেক্ষা করছিলেন, সেই ছবি সরকার প্রকাশ করল আদালতকে প্রভাবিত করতে’—এমনটা অভিযোগ উঠেছে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। লাইভস্ট্রিমিংয়ের সাথে সুপ্রিমকোর্টের রায়ের কোনো সম্পর্ক নেই। সুপ্রিমকোর্টের শুনানি তো লাইভস্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে সারা দেশ দেখছে। নবান্নের সভাঘরে যে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল তার সাথে আদালত অবমাননার কোনো সম্পর্ক নেই। নবান্নের সভাঘরে কি বিচার প্রক্রিয়া চলার কথা ছিল! আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই চান না এই অচলাবস্থা কাটুক। পরবর্তী শুনানির আগে রাজ্যের উকিল কপিল সিব্বলের হাতে ভুয়ো যুক্তির অস্ত্র তুলে দিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নানা কৌশল অবলম্বন করছেন। মুখ্যমন্ত্রী ‘সিমপ্যাথি কার্ড’ ব্যবহার করছেন এই বলে যে বৈঠক হলে নাকি নির্যাতিতার জন্য নীরবতা পালন করতেন, অথচ বিধানসভায় অপরাজিতা বিল আনার সময়ে নির্যাতিতার জন্য কোনো শোকপ্রস্তাব ছিলনা। দ্বিতীয়তঃ উনি নাকি দু দিন ঘন্টা দুয়েক অপেক্ষা করেছেন, কিন্তু অভয়ার মা বাবা, সহকর্মীগণ, নাগরিক সমাজ আজ ৩৩ দিন অপেক্ষায় রয়েছেন, সে ব্যাপারে ওনার কি মতামত। যে মুখ্যমন্ত্রী প্রসাশনিক বৈঠক লাইভ স্ট্রিমিং করেন, তাহলে এত গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক লাইভ স্ট্রিমিং করতে তাঁর আপত্তি কোথায়? আইনের যে যুক্তি দিচ্ছেন তা পুরোপুরি ভুয়ো। মুখ্যমন্ত্রী আসলে লাইভ স্ট্রিমিং করতে ভয় পেয়েছিলেন এই ভাবনা থেকে যে প্রাথমিক পুলিশি তদন্তে যে ফাঁকফোকর রয়েছে, তদন্তের নামে প্রমাণ লোপাট করার চেষ্টা ও তাড়াহুড়ো করে দেহ দাহ করা হয়েছে, এই সংক্রান্ত কেনো প্রশ্ন উঠলে উনি জবাব দিতে পারতেন না।’