January 17, 2025

‘‘এই আন্দোলনে কোনও রাজনীতির রঙ নেই।’’ চার দফা শর্ত মানলে আলোচনায় যোগ দিতে কোনও আপত্তি নেই

0
Junior doctor

জুনিয়র ডাক্তারেরা পাল্টা ইমেল পাঠালেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে। আন্দোলনরত ডাক্তারেরা জানিয়েছেন, সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসতে রাজি। তবে বৈঠকের জন্য চারটি শর্ত দিয়েছেন।

প্রথম শর্ত— অন্তত ৩০ জনের প্রতিনিধিদল থাকবে বৈঠকে।
দ্বিতীয় শর্ত— নবান্নে যে বৈঠক হবে, স্বচ্ছতা বজায় রাখতে তার লাইভ টেলিকাস্ট করতে হবে।
তৃতীয় শর্ত— আন্দোলনকারীরা যে পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছিলেন আগে, সেই দাবিগুলির উপরেই বৈঠকে আলোচনা হতে হবে।
চতুর্থ শর্ত— নবান্নে যে বৈঠক হবে, সেখানে মুখ্যমন্ত্রীকে উপস্থিত থাকতে হবে।‌

সল্টলেকের ধর্নাস্থল থেকে জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে কিঞ্জল নন্দ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘‘এই আন্দোলনে কোনও রাজনীতির রঙ নেই। নবান্নের বৈঠকে গেলেও ডাক্তারদের প্রতিনিধিদল সেখানে কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হবে না। তাঁরা বৈঠক গেলে, সেখান থেকে আবার অবস্থান বিক্ষোভ মঞ্চে ফিরে আসবেন। সকলের সঙ্গে আলোচনার পরই কর্মবিরতি এবং অবস্থান-বিক্ষোভ প্রসঙ্গে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’ তাঁদের চার দফা শর্ত মানলে আলোচনায় যোগ দিতে কোনও আপত্তি নেই। আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতো বলেন, ‘‘যে মুহূর্তে আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হবে, সেই মুহূর্তে আমরা আলোচনায় যোগ দেব। আমাদের আন্দোলন সম্পূর্ণ ভাবে অরাজনৈতিক।’‌’‌ রাজ্য সরকার তাঁদের চার দফা দাবি সংক্রান্ত মেলের কোনও জবাব দেয়নি বলেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। এর পরে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার।

মুখ্যসচিব মনোজ বললেন, “দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ওঁরা এখনও আসেনি। আলোচনার জন্য ওঁদের আসা উচিত ছিল। আমরা জুনিয়র ডাক্তারদের অনুরোধ করেছিলাম, কাজে ফিরতে। মানুষকে পরিষেবা দেওয়া তাঁদের দায়িত্ব। আমি বলেছিলাম, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানার জন্য। গঠনমূলক আলোচনার জন্য আজ সন্ধ্যা ৬টার সময় ডেকেছিলাম। স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় যেখানে যেখানে আরও উন্নতির প্রয়োজন, সেটি নিয়ে আলোচনা করতাম আমরা। নিরাপত্তা নিয়ে আমরা কী কী কাজ করছি, সেটিও ওঁদের বলার ছিল। আমরা চেয়েছিলাম ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া। কিন্তু ওঁরা এখনও আসেননি। আমরা এতক্ষণ অপেক্ষা করছিলাম।”

রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের অভিযোগ, এমন আন্দোলনের নেপথ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। তিনি বলেন, “অপরাধীদের শাস্তির জন্য শুধু মুখে বলা নয়, রাজ্য বিধানসভায় বিলও পাশ হয়ে গিয়েছে। আজ একটি খোলা মনে আলোচনা চেয়েছিলাম। গতকাল থেকে এই নিয়ে টানাটানি হচ্ছে। সাধারণ মানুষ তা দেখেছেন। এটি অন্য কোনও ক্ষেত্র নয়, রোগী পরি‌ষেবা দেওয়ার ক্ষেত্র। সাধারণ মানুষ যাতে বঞ্চিত না হন, সে জন্যই অনুরোধ করা হচ্ছে বার বার। সুপ্রিম কোর্ট ৯ সেপ্টেম্বর নির্দেশ দিয়েছিল, মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে তাঁদের কর্মবিরতি তুলে নিতে। আমরা অপেক্ষা করছিলাম। আমরা ভেবেছিলাম, তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে মান্যতা দেবেন।” চন্দ্রিমা বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছে, আমরা সেই নির্দেশকে মান্যতা দেব। এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। গতকাল বিকেল ৫টা পেরিয়ে যাওয়ার পরও মুখ্যমন্ত্রী কোনও নেতিবাচক পদক্ষেপ করেননি। সরকারের তরফে কিছু করা হয়নি। কিন্তু, এ বারে সুপ্রিম কোর্ট যা যা বলেছে, সেগুলি মেনে চলতে আমাদের আর কী কী পদ্ধতিগত ব্যাপার রয়েছে, সেগুলির দিকে আমরা লক্ষ রাখছি। কোনও রোগীকে বঞ্চিত করা, কোনও সঠিক পদক্ষেপ নয়। জুনিয়র ডাক্তারদের বলব, রাজনীতির উস্কানির মধ্যে পড়বেন না। আপনারা যে মহৎ পেশায় এসেছেন, সেই পেশার কর্তব্য পালন করুন।”

রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব বলেন, “আমরা ওঁদের নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। অন্যান্য কর্মস্থলগুলিতেও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করব আমরা। আমরা হাসপাতাল ও অন্য কর্মস্থলগুলির নিরাপত্তা আরও বর্ধিত করছি। আমি চাই, ওঁরা তাড়াতাড়ি কাজে ফিরে আসুক। কাজে ফিরে এলে ওঁরা নিশ্চিত ভাবে একটি পরিবর্তন দেখতে পাবেন।’’

কোনওরকম প্রতিশ্রুতিতে যে তাঁরা ভরসা রাখছেন না, কয়েক মিনিটের মধ্যেই তা বুঝিয়ে দিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed