‘তোর বোনের সঙ্গে হলে কী করতিস?’, আরজি করে বিক্ষোভের মুখে সিবিআই, অশালীন আক্রমণও
তদন্তের জন্য আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে সিবিআই আধিকারিকরা। বিভিন্ন তথ্য খুঁজে বের করার চেষ্টায় প্রায় তিন ঘণ্টার মতো ছিলেন। পরে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বিক্ষোভের মুখে পড়েন। ‘তোর বোনের সঙ্গে হলে কী করতিস?’, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতাল থেকে বেরনোর পরে সিবিআই অফিসারদের উদ্দেশ্যে এমনই মন্তব্য করলেন এক ব্যক্তি। অশালীন মন্তব্য করা হয় সিবিআই অফিসারদের উদ্দেশ্য করে। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা ওই ব্যক্তি-সহ অন্য বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেন। সিবিআই আধিকারিকদের উদ্দেশ্যে একজন বলেন, ‘অবিলম্বে বিচার দেওয়া হোক।’ পরবর্তীতে কয়েকজন সিবিআইয়ের গাড়ির সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান।
সুপ্রিম কোর্টে সরকার ‘মিথ্যে’ বলছে, দাবি চিকিৎসকদের, হাসপাতালে বহাল তবিয়তে জারি পরিষেবা, হিসেব দিলেন সুদীপ্তা। সুপ্রিম কোর্টে ছিল আরজি কর মামলার শুনানিতে বিচারপতি জুনিয়র চিকিৎসকদের ১০ সেপ্টেম্বর বিকেলের মধ্যে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এরপরই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন প্রত্যেকেই। সুপ্রিম কোর্টের শুনানির পরই আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের তরফে এদিন একটি সাংবাদিক বৈঠকে তাঁরা স্পষ্ট জানান সুপ্রিম কোর্টে সরকার এবং কপিল সিব্বল ‘মিথ্যে’ বলছেন। তাঁদের আন্দোলনের জন্য মোটেই নাকি স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে না। কেবল এটুকুই বলে ক্ষান্ত হননি তাঁরা। একই সঙ্গে তুলে ধরেছেন পরিসংখ্যান।
চিকিৎসকরা রাজ্য সরকারের কাছে বেশ কিছু দাবি রেখেছে, জানিয়েছে সেই দাবি নিয়ে তাঁরা বেলা ১২টা নাগাদ স্বাস্থ্য ভবন যাবেন। যদি বিকেল ৫টার মধ্যে সরকার সেই দাবি মানে তাহলে তাঁরা কাজে পুনর্যোগদানের কথা ভাববেন। নইলে বুঝবেন রাজ্য সরকার চান না এই অচলাবস্থা কাটুক। একই সঙ্গে তাঁরা এদিন বলেন মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি তাঁর বক্তব্যে নির্যাতিতার বাবা মা যে মিথ্যেবাদী বলেছেন সেটা উইথড্র করতে হবে। একই সঙ্গে তাঁদের আন্দোলনকে যে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে সেটাও বন্ধ করতে হবে।
সুদীপ্তা চক্রবর্তী এদিন জুনিয়র চিকিৎসকদের হয়ে মুখ খুলে তুলে ধরেছেন এক পরিসংখ্যান। সেখানে তিনি বুঝিয়েছেন কেন তাঁদের এই আন্দোলনে চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হতে পারে না। সুদীপ্তা লেখেন, ‘রাজ্যের মিথ্যা খেল সুপ্রিম কোর্ট? ভাবনাটা ঢুকে গেল ডাক্তারদের ধর্মঘটের ফলে কাদের অসুবিধা হচ্ছে! যারা বলছে তাদের? নাকি সত্যি সত্যি গরিব মানুষদের? শুরু করলাম ঘাঁটাঘাঁটি। দেখা যাক একটু- প্রথমেই জানা দরকার জুনিয়র ডাক্তার, ইন্টার্ন, হাউস স্টাফ, পিজিটি সরকারি মেডিকেল কলেজ ছাড়া অন্য কোথাও নেই।
বাংলায় নথিভুক্ত সরকারি বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ৩০০০। বেসরকারি হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তার নেই। সুতরাং বাদ। বাংলায় মোট হেল্থ সেন্টার যত রকম আছে তার সংখ্যা ১২৫৭ টা। সেখানে জুনিয়র ডাক্তার নেই। ধর্মঘট নেই। চলছে। জেনারেল হাসপাতাল ও সাব-ডিভিশনাল হাসপাতালের সংখ্যা ৭০ টা। সেখানে জুনিয়র ডাক্তারদের জুজু নেই। চলছে সব। রেল, ইএসআই সেন্ট্রাল হাসপাতালের ৬০টা এই বাংলায়। সেখানে জুনিয়র ডাক্তার নেই। ধর্মঘট নেই। চলছে সব। পৌরসভা ও কর্পোরেশন হাসপাতালগুলোতে জুনিয়র ডাক্তার নেই। ধর্মঘট নেই। জুনিয়র ডাক্তার আছে এমন হাসপাতালের সংখ্যা মাত্র ১৪-১৬টি। মোট হাসপাতালের মাত্র ০.৫২ শতাংশ। যেখানে জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্মঘট চলছে। যদিও সেখানে সিনিয়র ডাক্তার, অধ্যাপক ডাক্তাররা সবাই পেশেন্ট দেখছেন, ওপিডি চালাচ্ছেন ২৪×৭ পদ্ধতিতে। জুনিয়র ডাক্তাররা প্রতিবাদে সামিল থাকলেও তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে সাহায্য করে আসছেন। জুনিয়র ডাক্তারদের সংখ্যা মোট ডাক্তারের সংখ্যার মাত্র ০.৫ শতাংশ। এখন এই মোট ডাক্তারের ০.৫ শতাংশ জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্মঘটে যদি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে বা গরিব পেশেন্টের ধপাধপ প্রাণ যায় তা’হলে চার খান কথা আছে- এই জুনিয়ার ডাক্তার নামক কলুর বলদের উপর ছিল পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জোয়াল- এটা মানতে হয়! জেলায় জেলায় যে সব মেডিকেল কলেজ হল ঢাকঢোল বাজিয়ে সেখানে এখনও ফার্স্ট ব্যাচ বের হয়নি, আর তার ইনফ্রাস্ট্রাকচার কহতব্য নয়। ইন্টার্ন তো দূর অস্ত। সরকারি হাসপাতাল মানে দুর্নীতির প্রসূতি সদন তৈরি হয়েছে যা খুল্লম খুল্লাম বে-আব্রু আজ। সরকারী দোকান থেকে বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে যে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে তার ডোজ ও গুণমান ঠিক আছে তো? দাদা কেন বলুন তো জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্মঘটে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে! একটু বুঝিয়ে দেবেন?