‘১৮ ঘণ্টার মধ্যে দাবিপূরণ করুন’ কড়া হুঙ্কার! ‘যদি মমতার ফ্যামিলিতে এরকম ঘটনা ঘটত…’, কড়া ভাষায় জবাব মৃতা তরুণীর মায়ের
![CM](https://rknewz.com/wp-content/uploads/2024/09/1-2.jpg)
রাজ্য সরকারকে পালটা ‘ডেডলাইন’ দিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের (স্নাতকোত্তরের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া) ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার বিচার চাওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যে দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠেছে, সেটাকে নির্মূল করার জন্য লড়াই চালিয়ে যাবেন বলে জানান। কর্মবিরতি তোলার জন্য সুপ্রিম কোর্ট ‘ডেডলাইন’ বেঁধে দিয়েছে। আর তারপর রাজ্য সরকারকে পালটা ‘ডেডলাইন’ দিলেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা। জেনারেল বডির বৈঠকের পরে সোমবার রাত ১১ টা নাগাদ সাংবাদিক বৈঠক করে জুনিয়র ডাক্তাররা জানিয়ে দেন, তাঁরা যে পাঁচ দফা নিয়ে আন্দোলন করছেন, সেই দাবি পূরণ করতে হবে রাজ্য সরকারকে। যদি মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার (সুপ্রিম কোর্ট সেই ডেডলাইন দিয়েছে) মধ্যে রাজ্য সরকার তাঁদের দাবি মেনে নেয়, তবেই কর্মবিরতি তোলার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হবে। অর্থাৎ তাঁরা কাজে ফিরবেন কিনা, সেই বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবেন বলে জানিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। মঙ্গলবার স্বাস্থ্যভবন অভিযানের ডাক দিয়েছেন। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের (স্নাতকোত্তরের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া) ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার বিচার চাওয়ার পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যে দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠেছে, সেটাকে নির্মূল করার জন্য লড়াই চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানির সময় রাজ্য সরকারের তরফে দাবি করা হয় যে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির জন্য কমপক্ষে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। পরবর্তীতে শীর্ষ আদালত জানায় যে মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফিরতে হবে। ওই সময়ের মধ্যে জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না রাজ্য সরকার। তারপর যদি রাজ্য সরকার কোনও পদক্ষেপ করে, তাহলে কোনও বাধা দিতে পারবে না বলে জানায় শীর্ষ আদালত। তবে শীর্ষ আদালতের তরফে এটাও স্পষ্ট করে দেওয়া হয় যে জুনিয়র ডাক্তারদের সুরক্ষা এবং প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না রাজ্য সরকার।
জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি
১) জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাজনিত পদক্ষেপ করা হোক। যথাযথ কারণ দর্শিয়ে অভীক দে এবং বিরূপাক্ষ বিশ্বাসকে সাসপেন্ড করারও দাবি তোলেন।
২) জুনিয়র ডাক্তারদের বিবৃতি, সোমবার মুখ্যমন্ত্রী উৎসবে ফেরার যে বার্তা দিয়েছেন, সেই বক্তব্যের নিন্দা করা হচ্ছে। তরুণী চিকিৎসকের বিচারহীন শবের উপরে দাঁড়িয়ে উৎসবের ডাক দেওয়া ন্যক্কারজনক এবং নির্লজ্জতার পরিচায়ক।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারের এক কন্যার বিবাহ চলতি বছরেই। মুখ্যমন্ত্রীর ভাই বাবুন ব্যানার্জ্জীর মেয়ের বিয়ে। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের (স্নাতকোত্তরের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া)র বিয়ে ছিল এই বছরেই। একই ভাবে যদি এরকম ঘটনা ঘটত মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারেই। প্রশ্ন প্রত্যেকের। ‘যদি মুখ্যমন্ত্রীর ফ্যামিলিতে এরকম ঘটনা ঘটত, উনি কি পারতেন এটা বলতে? নিশ্চয়ই পারতেন না’ – এমনই মন্তব্য করলেন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের (স্নাতকোত্তরের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া) মা। সেইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের মেয়েটাকে উনি ফিরিয়ে দিতে পারবেন? আমার মেয়েটা তো আর কোনওদিন ফিরবে না।’
মুখ্যমন্ত্রীর একটি মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সোমবার তরুণী চিকিৎসকের মা সেই কথা বলেন। সোমবার দুপুরে মমতা জানান যে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের ঘটনার পরে এক মাস এক দিন কেটে গিয়েছে। সেই পরিস্থিতিতে ‘পুজোতে ফিরে’ আসার এবং ‘উৎসবে ফিরে’ আসার আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী। আর মুখ্যমন্ত্রীর সেই মন্তব্য নিয়েই সোমবার বিকেলে উষ্মাপ্রকাশ করেন তরুণী চিকিৎসকের মা। তিনি জানিয়ে দেন যে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। মুখ্যমন্ত্রীর সেই মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররাও। সোমবার ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট’-র তরফে বলা হয়েছে, ‘মুখ্যমন্ত্রী সব ভুলে মানুষকে উৎসবে ফিরতে বলেছেন। আমরা তাঁর এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করছি। অভয়ার বিচারহীন শবের উপরে দাঁড়িয়ে উৎসবের ডাক দেওয়া ন্যক্কারজনক এবং নির্লজ্জতার পরিচয়। বিচার না পাওয়া পর্যন্ত উৎসবে ফেরার আবেদন (করার বিষয়টা) অশ্লীল এবং অমানবিক। মুখ্যমন্ত্রীকে অবিলম্বে এই মন্তব্য ফিরিয়ে দিতে হবে।’
মুখ্যমন্ত্রী মিথ্যা বলছেন বলে অভিযোগ। টাকার কথা বলিনি। সোমবারই নবান্ন থেকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিহত চিকিৎসকের মা সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় বলছেন পরিবার টাকা চেয়েছিল। আমরা কোনও টাকা চাইনি। বরং উনি বলেছিলেন আমাদের মেয়ে তো কিছু একটা পাবে। এই টাকাটা দিয়ে মেয়ের স্মৃতির উদ্দেশ্যে কিছু বানাবেন। সেই সময় আমি ওঁকে জানিয়েছিলাম যে দিদি টাকা তখনই নেব যখন আমার মেয়ে বিচার পাবে। দোষীদের সাজা হবে। তখন আমি গিয়ে আপনার দফতর থেকে নিয়ে আসব। সেই সঙ্গেই ফের নিহত চিকিৎসকের মা জানিয়ে দিয়েছেন, টাকার অফার তো অবশ্যই করা হয়েছে।
তবে টাকার অফার করা নিয়ে মমতার দাবি, আমাকে প্রমাণ দেখাক আমি কোথাও টাকার কথা বলেছি। মিথ্যে কথা। কুৎসা, অপপ্রচার। চক্রান্ত। জানিয়েছেন মমতা। এদিকে এক্স হ্যান্ডেলে দুটি ভিডিয়ো পোস্ট করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিঁধে বিস্ফোরক পোস্ট, বাঙালির দুর্ভাগ্য আপনার মতো একজন মিথ্যাবাদী মুখ্যমন্ত্রীর পদে আসীন রয়েছেন। আর কত মিথ্যে কথা বলবেন আপনি। এবার
অথচ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমি এমনকী সেদিন অস্বীকার করতে পারবে না পরিবার আমি বিনীত গোয়েল সিপিকে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলাম। যদি বাবা মার কোনও সন্দেহ থাকে তাদের থেকে কথা শোনার জন্য, আমি প্রায় ১ ঘণ্টা ছিলাম। আমি এটাও বলেছিলাম দেখুন আমাদের একটা কর্তব্য আছে মেয়ে তো আর ফিরে আসবে না, ওর নামে যদি কিছু করতে চান করতে পারেন, যা টাকা লাগবে দেব। একটা কমপেনসেশন যারা বলছে কমপেনশেনের কথা। এটা আমার বলা আছে, ১০ লক্ষ টাকা তো দিতেই পারি পরিবারকে। ভিডিয়োতে তিনি টাকা অফার করার বেমালুম অস্বীকার করেছেন। সেই সঙ্গেই বঙ্গবাসীকে উৎসবে, পুজোতে ফেরার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
মমতা বলেন, ‘এক মাস তো হয়ে গেল। আজ নয় তারিখ। এক মাস একদিন। ৩১ দিনের মাস গিয়েছে। আমি অনুরোধ করব, পুজোতে ফিরে আসুন, উৎসবে ফিরে আসুন। আর সিবিআইকে বলব, তাড়াতাড়ি বিচারের ব্যবস্থা করুন। এখন তো এটা সিবিআইয়ের হাতে। আমাদের হাতে তো নেই।’
সাধারন মানুষ বলছেন, এ লজ্জা জাতীর লজ্জা। মিথ্যাবাদী মুখ্যমন্ত্রী!