‘ক্ষমা চাইতে হবে’ গর্জে উঠলেন চিকিৎসকরা, ‘মিথ্যাবাদী’ মমতার পর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মিথ্যাচারের’ বিরুদ্ধে এবার সরব বাংলা

আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ। জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি জারি। এই সবের মাঝে হুগলির কোন্নগরের এক যুবকের আরজি করে মৃত্যু ঘিরে বিতর্ক। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর ডাক্তারদের দাবি, অভিষেক মিথ্যা বলছেন। আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে সরব জুনিয়র ডাক্তার সহ গোটা বাংলার কয়েক কোটি সাধারণ মানুষ। রাজনৈতিক রং ভুলে অনেকেই শুধুমাত্র জাতীয় পতাকা নিয়ে ‘রাত দখল’ বা বিভিন্ন মিছিলে যোগ দিচ্ছেন। জুনিয়র ডাক্তাররা জারি রেখেছেন তাঁদের কর্মবিরতি। হুগলির কোন্নগরের এক যুবকের আরজি করে মৃত্যু ঘিরে বিতর্ক। তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর ডাক্তারদের দাবি, অভিষেক মিথ্যা বলছেন।

অভিযোগ, কোন্নগরের বেঙ্গল ফাইন মোড়ে দুর্ঘটনার শিকার হন যুবক বিক্রম ভট্টাচার্য। বিবেক নগর দ্বারিক জঙ্গল বাই লেনে মা ও দিদিমার সঙ্গে ভাড়াবাড়িতে থাকতেন বিক্রম। শুক্রবার তাঁর দুই পায়ের উপর দিয়ে লরি চলে যায়। প্রথমে শ্রীরামপুর হাসপাতালে এবং পরে কলকাতায় স্থানান্তরিত করে আরজি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই নাকি বিনা চিকিৎসায় তাঁর মৃত্যু হয়। শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালের সুপার দাবি করেন, বিক্রম ভট্টাচার্য নামে ওই যুবককে আরজি কর মেডিক্যালে রেফার করাই হয়নি। তাঁকে পাঠানো হয়েছিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। মিথ্যা দাবি করা হচ্ছে, আরজি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর অন্তত ২ ঘণ্টা বিনা চিকিৎসায় পড়েছিলেন যুবক। তার পর তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। এই দাবি অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন আরজি করের এমএসভিপি। তিনি জানান, চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় নথি রয়েছ তাদের কাছে।

পশ্চিমবঙ্গ জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরসের তরফ থেকে অভিষেকের পোস্টের জন্যে তাঁকে ক্ষমা চাইতে বলা হল। এই মর্মে চিঠি পাঠিয়েছে তারা। অভিষেক নিজের পোস্টে লিখেছিলেন, ‘যদি প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে হয়, তাহলে তা গঠনমূলকভাবে করা উচিত। সহানুভূতি ও মানবতার সঙ্গে করা উচিত। নিষ্ক্রিয়তা বা অবহেলার মাধ্যমে আর কোনও জীবন ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে। জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি অত্যন্ত ন্যায্য। কিন্তু তা বলে আন্দোলনের ফলে চিকিৎসার অভাবে মানুষের মৃত্যুও তো অপরাধযোগ্য হত্যাকাণ্ডের সমতুল্য।’ জবাবে চিকিৎকদের পালটা চিঠি, ‘আপনি ৬ সেপ্টেম্বর এক্স হ্যান্ডলে লেখেন যে আরজি করের বিক্ষোভের জেরে কোন্নগরের এক যুবক রক্তাক্ত অবস্থায় কোনও চিকিৎসা ছাড়াই ৩ ঘণ্টা পড়েছিলেন। বাস্তবে, সকাল ৯টা ১০ মিনিট থেকে সাড়ে ১২টায় ওই যুবকের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুর সময় পর্যন্ত তাঁর চিকিৎসা হয়েছে। আপনার ভিত্তিহীন দাবির জন্য চিকিৎসকরা বিপদে পড়তে পারেন। অযাচিত হিংসাকে উস্কে দিতে পারে। আমাদের দাবি, নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আপনার এই ভুল তথ্য প্রত্যাহার করুন।’

প্রসঙ্গত, এর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভুরি ভুরি মিথ্যাচার প্রকাশ্যে এসেছে বলে দাবি। তাঁর আঁকা, গান, নাচ বহুমুখী প্রতিভার বলিষ্ঠ উদাহরণ সোস্যাল মিডিয়া জুড়ে প্রতিফলিত। মমতার মুখ থেকে নির্গত ইংরেজীও বেশ হাস্যকর। সম্প্রতি দাবিও করেছিলেন অক্সফোর্ডে তাঁকে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য ডাক আসার কথা। তা নিয়েও সমাজমাধ্যমে ট্রেলড মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর হরেক ডিগ্রি, হরেক ভাষার দখল নিয়ে সর্বদা ট্রোল চলে সোস্যাল মিডিয়ায়। নানান রকম ভুয়ো বাকবিতন্ডায় জড়িয়েছেন রাজ্যের মু্যমন্ত্রী। তাঁর মন্ত্রীরা অনেকেই আজ জেলে। আপাদমস্ত দুর্নীতিতে জড়িয়ে এই সরকার বলে জনগনের দাবি। সাহাগঞ্জে বন্ধ ডানলপ কারখানার মাঠে এক সভায় মমতা বলেছিলেন, “নরেন্দ্র মোদী মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছেন। বাংলায় নাকি কারও চাকরি হয়নি! বাংলায় দারিদ্র ৪০ শতাংশ কমেছে। বাংলায় দেড় কোটি দু’কোটি লোককে চাকরি দিয়েছি।’’ মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবি নিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়। মমতা রাজত্বকালে সরকার কত লোককে চাকরি দিয়েছে তার স্পষ্ট একটা হিসাব মুখ্যমন্ত্রীর কাছে থাকবে বলে অনেকে মনে করেন। তাঁদের মতে, দেড় কোটি এবং দু কোটির মধ্যে অনেকটা ফারাক। ৫০ লক্ষ। এক দেড় লাখ কমবেশি হিসাব হতে পারে, কিন্তু ৫০ লক্ষের হেরফের বা ব্যবধানটা শুনতেই ধোঁয়াশা লাগছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবি নিয়ে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন একদা তাঁর মন্ত্রিসভারই সদস্য রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন কলকাতায় এক সভায় রাজীব বলেন, “আরে আমি তো ওই সরকারের মন্ত্রী ছিলাম। মুখ্যমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করছি আপনি যে দেড় কোটি দু’কোটি লোককে চাকরি দিয়েছেন, তার লিস্ট প্রকাশ করুন। নইলে মেনে নিন আপনি মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসে মিথ্যা বলছেন”। মমতার মিথ্যাচার শুনতে শুনতে আর রাজ্যবাসী ক্লান্ত বলে দাবি। এরপর সেই তালিকায় নাম লেখাচ্ছেন অভিষেকও বলে অভিযোগ। আরজিকর ঘটনা ধামাচাপা দিতে মমতা-অভিষেক উঠেপড়ে লেগেছেন বলে অভিযোগ সমাজের সিংহভাগ মানুষের।