February 18, 2025

‘মানুষকে কথা দিয়েছি, ফেরা সম্ভব নয়’ ইস্তফা পুনর্বিবেচনা, মমতার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করলেন জহর

0
Jahar Sarkar

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান। দলনেত্রীর প্রস্তাবেও সাড়া দিলেন না জহর সরকার। জানিয়ে দিলেন রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করবেনই। রবিবার সকালে সাংসদ পদ থেকে পদত্যাগ ও রাজনৈতিক জীবনে ইতি টানার ঘোষণা করেন প্রাক্তন আমলা জহর। বিকেলে তাঁকে ফোন করেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা তাঁকে সিদ্ধান্ত বদলের অনুরোধ করেন। দলনেত্রীকে জহর জানিয়ে দেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁর আর সাংসদ পদে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। সূত্রের খবর, মমতাকে তিনি বলেন, ‘‘মানুষকে কথা দিয়েছি, আর ফেরা সম্ভব নয়।’’

জহর বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আমাকে ফোন করেছিলেন। আমার সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা হয়েছে। কিন্তু তাঁর সঙ্গে আমার এ বিষয়ে কি আলোচনা হয়েছে বা কি কথা হয়েছে, তা আমি প্রকাশ্যে বলব না।’’ ১১ সেপ্টেম্বর দিল্লি গিয়ে উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখ়ড়ের সঙ্গে দেখা করে ইস্তফাপত্র তুলে দেবেন। জহরের ইস্তফাপত্রের খবর প্রকাশ্যে আসতেই তোলপাড় শুরু হয় শাসকদলের অন্দরে। আরজি কর-কাণ্ডের জেরে এমনিতেই চাপে বাংলার শাসকদল।

মমতাকে লেখা চিঠিতে জহর বলেছেন, ‘‘আমি গত এক মাস ধৈর্য ধরে আরজি কর হাসপাতালের ঘৃণ্য ঘটনার বিরুদ্ধে সবার প্রতিক্রিয়া দেখেছি আর ভেবেছি, আপনি কেন সেই পুরনো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে সরাসরি জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলছেন না। এখন সরকার যে সব শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা এককথায় অতি অল্প এবং অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। আমার বিশ্বাস, এই আন্দোলনে পথে নামা মানুষেরা অরাজনৈতিক এবং স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে প্রতিবাদ করছেন। অতএব রাজনৈতিক তকমা লাগিয়ে এই আন্দোলনকে প্রতিরোধ করা সমীচীন হবে না। এঁরা কেউ রাজনীতি পছন্দ করেন না। শুধু একবাক্যে বিচার ও শাস্তির দাবি তুলেছেন।’’

বিদায়ী সাংসদ লিখেছেন, ‘‘মাননীয়া মহোদয়া, বিশ্বাস করুন এই মুহূর্তে রাজ্যের সাধারণ মানুষের যে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন ও রাগের বহিঃপ্রকাশ আমরা সবাই দেখছি, এর মূল কারণ কতিপয় পছন্দের আমলা ও দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পেশিশক্তির আস্ফালন। আমার এত বছরের জীবনে এমন ক্ষোভ ও সরকারের প্রতি সম্পূর্ণ অনাস্থা আগে কখনও দেখিনি।’’ চিঠিতে জহর আরও জানিয়েছেন, নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি সরকারের ‘স্বৈরাচারী ও সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতির’ বিরুদ্ধে লড়তেই সাংসদ হয়েছিলেন। কিন্তু ২০২২ সালে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী (পার্থ চট্টোপাধ্যায়)-র বিরুদ্ধে যে সব দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে শুরু করে, তাতে বিচলিত হয়ে পড়েন। আরও সক্রিয় হওয়ার পরামর্শও দিয়েছিলেন দলকে। কিন্তু তখন দলের অনেক নেতা তাঁকে হেনস্থা করেছিলেন বলেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন জহর। তিনি লিখেছেন, ‘‘আমি আমার দায়িত্ব পালন করলাম। কিন্তু আমার রাজ্যে দুর্নীতি আর দলের একাংশের নেতাদের অন্যায় দাপট দেখে আমি হতাশাগ্রস্ত হলাম।’’ ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আচমকা রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেন দীনেশ ত্রিবেদী। তাঁর জায়গায় তৃণমূল রাজ্যসভায় পাঠায় জহরকে। রাজ্যসভার সাংসদ হিসাবে তাঁর মেয়াদ শেষ হত ২০২৬ সালের এপ্রিলে। তার দেড় বছর আগেই শূন্য হচ্ছে বাংলার আরও একটি রাজ্যসভার সাংসদ পদ।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed