ভিডিয়ো বানানোর নেপথ্যে কে? ‘তা হলে এটা পুরো মিথ্যা গল্প, তাই তো?’ নজরে ‘নেতা-কাকু’
কিছু কি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে? সেই কারণেই কি মৃতার পরিবারকে দিয়ে এই ভিডিয়ো করিয়ে রাখা হয়েছিল? পুলিশ বাড়ি এসে টাকার বান্ডিল নিয়ে দিতে চেয়েছে— আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিহত চিকিৎসক-পড়ুয়ার বাবার অভিযোগের পরে ধামাচাপা দেওয়ার আসরে নামে রাজ্য সরকার। দুই তদন্তকারী সংস্থার তদন্তে উঠে আসছে যে তথ্য, ৯ আগস্ট সন্ধ্যায় ময়না তদন্ত শেষে মৃতদেহ নিয়ে মৃতার বাড়িতে যায় পুলিশ। সেখানে ঘণ্টা দেড়েক দেহ তাঁর বাড়ির দোতলায় শায়িত থাকে। এই সময় প্রশাসনিক ভাবে পাশে থাকার বার্তা দেওয়া হয় বার বার। এক নেতা টাকা নিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন বলে অভিযোগ। ‘পরে দেখা যাবে, ক্ষতিপূরণ চাই, কিন্তু টাকা নয়’ বলে ফেরানো হয় পরিবারের তরফে। এর পর মৃতদেহ দ্রুত দাহ করার জন্য উত্তর ২৪ পরগনার একটি শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই গোটা যাতায়াতের পথের সমস্তটাই ব্যবস্থা করেন প্রভাবশালী এক নেতা। যিনি নিজেকে মৃতার কাকু বলে দাবি করেছেন আগাগোড়া। শ্মশানে দাহকাজের নিয়ম অনুযায়ী, পরিবারের কারও সই লাগে। সেই সই করে দেন ওই ‘নেতা-কাকু’ই। এ নিয়ে বিতর্ক।
প্রশ্ন? রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতেই এই ভাবে মৃতদেহ নিয়ে গিয়ে তিনি দাহ করিয়ে ফেলেন? শুধু শ্মশানে সই করাই নয়, টালা থানায় বসে পরিবারের অভিযোগপত্রও নিজে হাতে লেখেন এই ‘কাকু’। অভিযোগ, ওই সময়ে মৃতার বন্ধুর পরিচিত আইনজীবী অভিযোগপত্র লিখতে চাইলেও ‘কাকু’ তা করতে দেননি। সেখানে মৃতার বাবার বয়ানে রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রীর উপর আস্থা থাকার কথাও লেখা হয়। প্রশ্ন ওঠে, সরকারি হাসপাতালে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, সরকারের ভূমিকায় পরে প্রশ্ন উঠতে পারে ভেবেই কি লেখানো হয়েছিল এই বয়ান?
১১ অগস্ট মৃতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান চিকিৎসকেরা। ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম ফর ডক্টর্স’-এর প্রতিনিধি সুবর্ণ গোস্বামী বেরিয়ে দাবি করেন, ‘‘মৃতার মা আমায় বলেছেন, পুলিশ তাঁদের টাকা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।’’ কিন্তু এই দাবি সম্প্রচার হওয়ার পরই রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ তাঁদের বাড়ি যান এক ব্যক্তি। তিনিই মৃতার বাবা-মাকে বোঝান, ‘পুলিশ-প্রশাসনকে রাগালে বিচার পেতে সমস্যা হবে’। এর পরে ওই ব্যক্তির ফোনেই ভিডিয়ো তোলানো হয়। কলকাতা পুলিশ এবং সিবিআই সূত্রে দাবি, এই ব্যক্তি কোনও ভাবেই পুলিশের লোক নন। সূত্রের খবর, এক সময় বাম রাজনীতি করলেও পরে অন্য দলে নাম লেখান এই ব্যক্তি। বর্তমানে এক কাউন্সিলরের হয়ে মৃতার বাড়ি যে জায়গায়, সেই ‘এলাকা দেখার’ দায়িত্ব রয়েছেন তিনি। সেই সূত্রেই এই ঘটনায় প্রথম থেকেই ‘অতি সক্রিয়’ দেখা গিয়েছে তাঁকে। লালবাজার সূত্রের দাবি, সেই কারণেই এই ভিডিয়ো পুলিশের কাছে না পৌঁছে চলে গিয়েছে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের কাছে। মৃতার বাবা-ও বলেছেন, ‘‘এই ভিডিয়ো রাজনৈতিক দল পেল কী করে, ভেবে পাচ্ছি না।’’ ঘটনায় বার বার নাম জড়ানো সেই ‘প্রভাবশালী কাকু’ পুরুষ কণ্ঠস্বরের অধিকারীকে নতুন করে নিজের ফোন নিয়ে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ সিবিআইএর।