January 17, 2025

‘খুব আনন্দে থাকো’! হস্তাক্ষর কার? ডায়েরির সাদা পাতায় নীল কালিতে লেখা, কেন এই লেখা?‌

0
Again RGKAR

ঘটনার রাতে ১১টা ১৫ মিনিটে মায়ের সঙ্গে শেষ বার কথা হয় মেয়ের। সেই সময়ে মেয়ে খুব হাসিখুশি ছিলেন বলে মায়ের দাবি। কী খাবারের অর্ডার দিয়েছেন জানিয়ে, মাকে তিনি শুয়ে পড়তে বলেন। জানিয়েছিলেন, খেয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করবেন। মৃতার বন্ধু, যাঁর সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিল, তিনি দাবি করেছেন, রাত সাড়ে ১১টার আশেপাশে এক বার সঙ্গে ফোনে কথা হয়। কিন্তু তিনি ব্যস্ত রয়েছেন জানানোয় বেশি ক্ষণ কথা হয়নি। এরপর ওই বন্ধু হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ করলেও উত্তর পাননি। মৃতার মা দাবি করেছেন, খেলা দেখায় তাঁর মেয়ের কোনও আগ্রহ ছিল না। প্রশ্ন, জ্যাভলিন থ্রো দেখলেন, অথচ মায়ের সঙ্গে আর কথা বেশী বললেন না? বন্ধুর মেসেজের উত্তর দিলেন না? মৃতার মায়ের কথায়, ‘‘মেয়ে কখনও খেলা দেখত না। বসে বসে জ্যাভলিন থ্রো দেখল, আর ওকে (মেয়ের বন্ধুর নাম করে) মেসেজের কোনও উত্তর দিল না, এটা মানতে পারছি না।’’

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছিল, মৃতা অনলাইনে অর্ডার দেওয়া খাবার পেয়ে গিয়েছিলেন রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ। সেমিনার রুম-এ চার জন জুনিয়র চিকিৎসককে নিয়ে তিনি সেই খাবার খেয়েছিলেন। সেই সময়ে অলিম্পিক্সে নীরজ চোপড়ার ‘জ্যাভলিন থ্রো’-ও দেখেছিলেন। রাত ২টো ৩ মিনিটে মৃতার ফোন থেকে এক আত্মীয়কে পাঠানো হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মৃতার বাবার দাবি, ‘‘আমার এক ভাগ্নে এক জনের জন্য কোনও সার্টিফিকেটের ব্যবস্থা করে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। মেয়ের ফোন থেকে সেই উত্তরেই দেখছি, ‘না রে’ লিখে মেসেজ করা হয়েছে। ওই মেসেজের উত্তর দিল অথচ, ওকে (মেয়ের বন্ধুর নাম উল্লেখ করে) কিছু লিখল না? ’’ সূত্রের খবর, রোমান হরফে লেখা এই হোয়াটসঅ্যাপ বার্তাও খতিয়ে দেখছে সিবিআই। আঙুলের ছাপে খুলে ফেলা যায়, তরুণীর এমন মোবাইল ফোন অন্য ভাবে এই মেসেজ পাঠাতে ব্যবহার করা হয়েছিল কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মৃতার মা বললেন, ‘‘রাতের ডিউটি থাকলে খাওয়ার পরে বহু ক্ষণ মেয়ে ফোনে আমার সঙ্গে কথা বলত। সে রাতেই কেন কোনও কথা হল না? আমার তো সেখানেও রহস্য ঠেকছে।’’ ডায়েরির সাদা পাতা। তাতে নীল কালিতে লেখা, ‘খুব আনন্দে থাকো’! ঘটনার রাতে ২টো ৩ মিনিটে মৃতার ফোন থেকে তাঁর এক আত্মীয়কে পাঠানো সংক্ষিপ্ত একটি হোয়াটসঅ্যাপ বার্তাও।

পুলিশ, প্রশাসন- আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে বসে মেয়ের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে ১০টি বিস্ফোরক প্রশ্ন করলেন তরুণী চিকিৎসকের বাবা। চাপ দিয়ে দেহ দাহ, টাকার অফার পুলিশের। আরজি করে কোন ১০ বিস্ফোরক প্রশ্ন মৃতার বাবার? সেই প্রশ্নের উত্তর দেবে সরকার?

বারবার সাংবাদিক বৈঠক করে মিথ্যা কথা বলছেন কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়। মিথ্যাচার করছেন। কারণটা কী? কী কারণে তাঁরা এরকম করছেন? তা নিয়ে আমাদের মনে সবসময় প্রশ্ন আসছে। আমার এসব প্রশ্নের উত্তর কে দেবে? পুলিশ? প্রশাসন? নাকি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ?’

তরুণী চিকিৎসকের বাবার কথায়, ‘আমরা জানতে পারছি, আরজি কর হাসপাতালে পুলিশের যে আউটপোস্ট আছে, সেখানে সকাল ১০ টা ১০ মিনিটে আমার মেয়ের এরকম পরিণতির খবর যায়। তারপরও কিন্তু ওরা আমার মেয়ের কোনও শারীরিক পরীক্ষা করেনি। যেটা তাদের প্রথম কাজ ছিল, সেটা তারা করেনি।’

‘সকাল ১১ টায় আমাদের জানানো হয় যে আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। তারা কোনও মেডিক্যাল টেস্ট করল না। তারা আগেই বলে দিল যে আত্মহত্যা করেছে। আমাদের মেয়েকে দেখতে আমরা বেলা ১২ টা ১০ মিনিটে হাসপাতালে এসেছিলাম।’

‘মেয়ের মুখ দেখতে দেওয়ার জন্য আমাদের ওই সেমিনার হলের বাইরে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়েছিল এবং মেয়ের মা পুলিশের হাতে-পায়ে ধরতে শুরু করেছিল। ভিতরে তখন লোকজন ঘোরাঘুরি করছিল। আমাদের কিন্তু ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এটা কী কারণে? এই প্রশ্নটার উত্তর চাই আমার।’

‘‌পোস্টমর্টেম (ময়নাতদন্ত) করতে এত দেরি কেন করল হাসপাতাল? পোস্টমর্টেম তো বিকেল পাঁচটার মধ্যে করা উচিত ছিল। কিন্তু দেখা গেল যে সন্ধ্যা ছ’টার আগে পোস্টমর্টেম হল না। সন্ধ্যা ছ’টা থেকে শুরু হল।’‌

‘আমি সন্ধ্যা ৬ টা ৩০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৭ টার মধ্যে টালা থানায় এফআইআর দায়ের করেছিলাম। পরে দেখতে পাচ্ছি যে আমার এফআইআর নথিভুক্ত হল রাত ১১ টা ৪৫ মিনিটে। এখানে এত ডাক্তার থাকা সত্ত্বেও, পুলিশ এত কিছু জানা সত্ত্বেও পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করল। ডায়েরি করল। কী কারণে? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা পুলিশ – কেউ এফআইআর করেনি। যেটা সবার আগে দরকার ছিল। করেনি।’

‘বেলা ১২ টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতাল চত্বরে ছিলাম আমরা। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ – কেউ আমাদের সঙ্গে কথা বলেনি। একটা কথাও বলেনি।’

‘আমরা দেহটা রেখে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের উপরে এত প্রেশার তৈরি করা হয়েছিল….। আমরা টালা থানায় গিয়েছিলাম। টালা থানায় আমরা এক ঘণ্টা বসেছিলাম। ৩০০-৪০০ পুলিশকর্মী আমাদের ঘিরে রেখে সেখানে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করেছিল যে বাধ্য হয়ে আমরা বাড়িতে ফিরে যাই।’

‘‌বাড়িতে গিয়ে দেখি যে আমার বাড়ির সামনে ব্যারিকেড করে ৩০০-৪০০ পুলিশকর্মী দাঁড়িয়ে আছেন। সেই অবস্থায় আমাদের আর কিছু করার ছিল না। আমরা মেয়ের দেহ দাহ করতে বাধ্য হয়েছিলাম।’

‘এখানেও একটা প্রশ্ন। আমার মেয়ে সেদিন মারা গিয়েছে। আমার মেয়ের শ্মশানের খরচটা ফ্রি করে দিয়েছে। কারা? আমরা জানতে পারিনি আজ পর্যন্ত। কেন করা হয়েছে? আমার মেয়ের আত্মা খুব কষ্ট পেয়েছে। যাওয়ার সময় ভেবেছে যে আমার বাপি এইটুকু টাকা খরচ করতে পারল না। আমার কাছে কী মর্মান্তিক ছিল সেই দিনটা। এই প্রশ্নের উত্তরটা আমায় কে দেবে?’

পুলিশের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ ‘যখন আমার মেয়ের দেহ আমার ঘরে শায়িত ছিল, তখন কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (নর্থ) আমাদের ঘরের একটা গলিতে ঢুকে ঘরের ভিতরে তিনি আমায় টাকা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তার যে জবাব দেওয়ার, সেটা আমরা সঙ্গে-সঙ্গে দিয়ে দিয়েছিলাম।’

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed