মৃতার ‘কাকু’ পরিচয় দেওয়া ‘প্রভাবশালী নেতা’! জোর করে তড়িঘড়ি নির্যাতিতার মৃতদেহ সৎকার করিয়ে দেন?
‘‘আমি ওর (মৃতার) কাকুর মতো। পাশের বাড়িতেই থাকি। রাজনীতি করার সূত্রে কোভিডের সময়ে এই ভাবে প্রচুর মৃতদেহ শ্মশানে দাহ করিয়ে দিয়েছি। কই, তখন তো কেউ প্রশ্ন তোলেননি! আমি শ্মশানে সই করে থাকলে সমস্যা কোথায়?’’ জোর করে দাবি মৃতার ‘কাকু’ পরিচয় দেওয়া এক ‘প্রভাবশালী নেতা’র। সে দিন মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে গিয়ে দাহ করার সময় জোর তদারকি শুরু করেছিলেন মৃতার ‘কাকু’ পরিচয় দেওয়া এক ‘প্রভাবশালী নেতা’। মৃতার বাবা-মা নন, শ্মশানের কাগজপত্রে এই ‘প্রভাবশালী নেতা কাকু’ই সই করেছিলেন বলে সামনে এসেছে। সেই সই করা কাগজ সমাজ মাধ্যমে ভাইরাল।
শ্মশানের কর্মীরা দাবি করেছেন, চিকিৎসক পড়ুয়ার মৃতদেহের আগে সেখানে আরও দু’টি মৃতদেহ ছিল। সেগুলিকে টপকে আগে চিকিৎসক পড়ুয়ার দেহ দাহ করে ফেলতে বলা হয়। এই নির্দেশ ওই নেতা-কাকু দেন বলে অভিযোগ। কোন উদ্দেশ্যে এই কাজ? অভিযোগ, শুধু শ্মশানের কাগজে সই করাই নয়, মৃতার পরিবারের তরফে এই যে অভিযোগপত্র পুলিশের কাছে জমা করা হয়েছে, তা-ও লিখেছেন স্বয়ং এই কাকুই।
ফলে চিঠির বয়ানে মুখ্যমন্ত্রীর নাম এবং ‘প্রশাসন ও সরকারের উপর পূর্ণ আস্থা’ রাখার বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে লেখা কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে। সরকারি হাসপাতালে খুন এবং ধর্ষণের ঘটনায় প্রশাসনিক দায় নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে বুঝেই, সরকারি নথিতে এমন বয়ান লিপিবদ্ধ করানো হয়েছিল, যাতে মনে হয়, সরকারের উপর মৃতার পরিবারের আস্থা রয়েছে? তারই অঙ্গ হিসাবে কি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বাদ দেওয়া হয়েছিল সময়ের উল্লেখ?
থানায় লেখার সময় ‘প্রভাবশালী নেতা কাকু’-র এই বয়ানের বিরোধিতা করেছিলেন মৃতার বন্ধু। সেখানে তখন ওই বন্ধুর বাবা-মা-ও উপস্থিত। মৃতার বন্ধু এক আইনজীবীও নিয়ে গিয়েছিলেন। তবে ওই আইনজীবীকে অভিযোগপত্র লিখতে দেওয়া হয়নি। মৃতার মা এ দিন বলেন, ‘‘যখন হাসপাতালে মেয়ের ময়না তদন্ত চলছে, সেই সময়েই ওই সাড়ে ছ’টা-সাতটা নাগাদ থানায় এই লেখা লেখানো হয়েছে। আমি তখন হাসপাতালে। ওর (মৃতার) বাবাকে সিবিআই সবটা জিজ্ঞেস করেছে।’’ চিকিৎসক পড়ুয়ার মৃতদেহ তড়িঘড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ মৃতার পরিবারের। মৃতার মা এ দিনও বলেছেন, ‘‘আমি তো টালা থানায় গিয়ে বসে ছিলাম। মৃতদেহ থানায় না আনলে আমি যাব না বলেছিলাম। কিন্তু তাড়াহুড়ো করে আমাদের কিছু না জানিয়েই মেয়ের মৃতদেহ আমাদের বাড়ির দিকেই পাঠিয়ে দিয়েছিল পুলিশ। সব দিক থেকে অদ্ভুত রকম চাপ তৈরি করা হয়েছিল।’’ কী সেই চাপ? তদন্তে সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বার করার চেষ্টা করছে সিবিআই। ৫ই সেপ্টেম্বর কী ‘প্রভাবশালী নেতা কাকু’ই কী গ্রেফতার?