কলকাতা পুলিশ এখন ‘ফাংটাস অফিসিও’ ! ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের মিথ্যা বিবৃতি তদন্তে ‘ফুটো’ তৈরি করতে পারে?
কোনও তথ্য প্রমাণ গোপন করা হবে, কোনটা তদন্তের কাজে লাগবে, সেটা এই মুহূর্তে সিবিআই জানে। পুলিশ এভাবে এমন কিছু সামনে আনছে না, যা সিবিআই হয়ত গোপন রেখে তদন্ত করছে। সে ক্ষেত্রে তদন্তে ওই লিকেজ বা ছিদ্র হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। এ ব্যাপারে যদি মনে করে, তাহলে শীর্ষ আদালত সতর্ক করতে পারে বলে। অবসরপ্রাপ্ত এক প্রধান বিচারপতির বক্তব্যে স্পষ্ট। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে ও পর্যবেক্ষণে তদন্ত হচ্ছে। এই পর্যায়ে প্রথম যারা তদন্ত করছিল, তাদের বলা হয় ‘ফাংটাস অফিসিও’ (functus officio)। অর্থাৎ তদন্তভার সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়ার পর কলকাতা পুলিশ এখন ‘ফাংটাস অফিসিও’, যাদের তদন্তের মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে। তদন্তের ক্ষেত্রে একটি পরিচিত বাক্য হল- ‘এভরি লিকেজ ইজ আ লস ফর দ্য ইনভেস্টিগেশন টু অ্যারাইভ অ্যাট এ কারেক্ট অ্যান্ড পারফেক্ট কনক্লুসন।’ অর্থাৎ, তদন্তে কোনও ছিদ্র থাকলে, সঠিক কিনারায় পৌঁছতে বাধা আসে।
ধোঁয়াশা বাড়ছে। আরও বাড়ছে রহস্য। ডিসি সেন্ট্রালের সাংবাদিক বৈঠকের পরও কাটছে না রহস্যের জট। তথ্য বলছে, ঘটনার দিন ৯টা বেজে ৪৫ মিনিট নাগাদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃত্যুর খবর জানলেও পুলিশে খবর দেওয়া হয় ১০টা বেজে ১০ মিনিটে। অর্থাৎ পুলিশে খবর দেওয়া হয় ২৫ মিনিট দেরিতে। ৯ আগস্ট সকাল সাড়ে ন’টায় প্রথম দেহ দেখতে পান প্রথম বর্ষের এক পিজিটি। টালা থানায় দুপুরে এমএসভিপি এফআইআর দায়েরের যে আর্জি জানিয়েছিল, সেখানে লেখা রয়েছে চেস্ট মেডিসিনের ইউনিট অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর সকাল ৯টা ৪৫ মিনিট নাগাদ এমএসভিপি’কে দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রীর দেহ উদ্ধারের কথা জানান। ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, পুলিশ ঘটনার কথা জেনেছে সকাল ১০টা ১০ মিনিটে। কর্তৃপক্ষ ৯টা ৪৫ মিনিটে জানলে, পুলিশকে কেন ২৫ মিনিট পর খবর দেওয়া হল? আরজি করেই পুলিশ পোস্ট রয়েছে। তবুও ২৫ মিনিট দেরি কেন? উঠছে প্রশ্ন।
খবর পাওয়ার পর ১০টা ৩০ মিনিটে POC CORDONED OFF করার কথা বলেছেন ডিসি সেন্ট্রাল। বলছেন, “আরজি করের আউট পোস্ট খবর পায় মোটামুটি ১০টা থেকে ১০টা ১০ নাগাদ। তারপরই দ্রুত আমরা ওখানে চলে য়াই। সাড়ে দশটার মধ্যে আমাদের কর্ডন প্লেস হয়ে গিয়েছিল।” তারপরে আর কী সেখানে কেউ ঢুকেছিল? ডিসি সেন্ট্রাল কিন্তু পোস্ট বলছেন, ‘না’। তাঁর দাবি, ওখানে যাওয়া সম্ভব নয়। ওখানে লাইন দিয়ে আমাদের লোকজন দাঁড়িয়েছিল। যে কেউ সেখানে ঢুকতে পারবে না।
ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের আরও দাবি, তদন্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গে ট্যাম্পারিং করা এই ধরনের কেসে একদমই সম্ভব নয়। এদিকে আউটপোস্ট থেকে পুলিশের ঘটনাস্থল অর্থাৎ সেমিনার রুমে যেতে ২ মিনিট সময় লাগার কথা। পুলিশ ফাঁড়ি থেকে চেস্ট মেডিসিনের থার্ড ফ্লোরে পৌঁছাতে সময় লাগে এই ২ মিনিট। অঙ্ক কষে বলেছেন ডিসি সেন্ট্রাল। তাহলে ১০টা ১০ থেকে সময় লাগল ১০টা ১২। ২ মিনিট। এদিকে দেহ দেখা গিয়েছে সাড়ে ৯টায়। সবই আদালতে দেওয়া নথি। ৯টা বেজে ৪৫ মিনিট নাগাদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানে মৃত্যুর খবর। কিন্তু, কেন তাহলে পুলিশে খবর যেতে ১০টা ১০ হল? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই সময় কী করছিলেন, তারা কেন ধৈর্য ধরে রইলেন, এই সময়ে কার কার কাছে ফোন গিয়েছিল? এমনকী ১০টা ৫২ মিনিটে কেন বাবা-মা কে ফোন করে বলা হয়েছিল আত্মহত্যার কথা?
চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর কথায়্ পুলিশ যতক্ষণে জেনেছে তার আগে সন্দীপ ঘোষ ঘনিষ্ঠ চিকিৎসকেরা, উকিলেরা জেনে গিয়েছে। তারা কিছুক্ষণের মধ্যে হাজিরও হয়ে গিয়েছে। এই ২৫ মিনিট সময় তো প্রমাণ লোপাটের জন্য যথেষ্ট সময়। আমরা প্রথম দিন থেকে তাই বলছি ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা হয়েছে। যাতে অন্য কোনও তদন্তকারী সংস্থা কোনও কূলকিনারা না পায়।