হুমকি দিয়ে সাফাই গাইছেন মুখ্যমন্ত্রী, মমতার মন্তব্য ঘিরে ‘বিতর্কের’ ব্যাখ্যা, ‘আমল না দিয়ে’ পালটা জবাব ডাক্তারদের
‘এফআইআর’ করার হুমকির মন্তব্য নিয়ে তৈরি বিতর্ক। সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে নিজের ‘অবস্থান’ স্পষ্ট করে দিয়ে মমতা দাবি করেন, তিনি আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের কোনও হুমকি দেননি। বরং তিনি তাঁদের এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছেন। এই বিষয়ে মুখ খুললেন আন্দোলনকারী মেডিক্যাল পড়ুয়া এবং জুনিয়র চিকিৎসকরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘আমরা যদি এফআইআর করি বা কোনও আইনি ব্যবস্থা নিই, তা হলে আপনাদের কেরিয়ারটা নষ্ট হয়ে যাবে।’ তাঁর মন্তব্যকে ‘হুঁশিয়ারি’ হিসেবে দেখছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। তারপরও তাঁরা জানিয়েছিলেন, বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এই আবহে সাফাই গাইতে মমতা আবার নিজের মন্তব্য নিয়ে ব্যাখ্যা দেন। মমতার সেই ব্যাখ্যার পর আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা বলন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাখ্যাতে আমরা পাত্তা দিচ্ছি না। আমাদের বিচার চাই।’ পাশাপাশি তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেও দাবি করেছেন। পাশাপাশি সন্দীপ ঘোষকে সাসপেন্ড করা এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনারর অপসারণের দাবিতেও তাঁরা অনড় আছেন বলে জানান চিকিৎসকরা।
মমতা বলেছিলেন, ‘আমাকে অনেক গালাগাল দিয়েছে, অসম্মান করেছে। বলেছিলাম বদলা নয়, বদল চাই। কিন্তু আজ বলছি যেটা করার দরকার, সেটা আপনারা ভালো বুঝে করবেন। আমি অশান্তি চাই না। যে আপনাকে রোজ কামড়াচ্ছে, তাকে কামড়াবেন না, কিন্তু ফোঁস তো করতে পারতে পারেন।’ চিকিৎসকদের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা কিন্তু ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিইনি। কারণ, ওরা বন্ধুর জন্য আন্দোলন করছে। দিল্লিতে কিন্তু ওরা ডাক্তারদের বিরুদ্ধে এফআইআর করে দিয়েছিল। যে কারণে সুপ্রিম কোর্টকে বলে দিতে হয়েছে, ডাক্তারেরা কাজে ফিরলে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতি আমার সমর্থন আছে। কিন্তু আপনাদের একটু মানবিক হওয়ারও আবেদন করব। সুপ্রিম কোর্টও আপনাদের অনুরোধ করেছে। সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যগুলোকে ক্ষমতা দিয়েছে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। কিন্তু আমি আপনাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেব না। আপনাদের ক্ষোভ আছে। অভিমান আছে। আমি সেটা বুঝি। কিন্তু এ বার আস্তে আস্তে কাজে যোগদান করুন। আমরা চাই না, কারও সারা জীবনটা নষ্ট হোক। আমরা যদি এফআইআর করি বা কোনও আইনি ব্যবস্থা নিই, তা হলে আপনাদের কেরিয়ারটা নষ্ট হয়ে যাবে। ভিসা, পাসপোর্টে অসুবিধা হয়ে যাবে। আমি তা চাই না। আমাদের সরকার মানবিক। আমি চাই আরও ভালো ভালো ডাক্তার তৈরি করতে।’
আবার পরে মমতা বলেন, ‘ছাত্রদের বা তাদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করিনি। আমি তাদের আন্দোলনকে সম্পূর্ণ সমর্থন করি। তাদের আন্দোলন অকৃত্রিম। আমি কখনও তাদের হুমকি দিইনি। তবে কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে সেই অভিযোগটাই করছে। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’
আর জি কর কাণ্ডে অপরাধী এক জন, নাকি একাধিক এই প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি। ময়নাতদন্তে উল্লেখ করা ‘সাদা ঘন চটচটে তরল’ বীর্য কি না, সেটির উত্তরও পাওয়া যাযনি। কেন মৃত চিকিৎসকের পরিবারকে আত্মহত্যার কথা বলা হল, কেন তড়িঘড়ি মৃতদেহ দাহ করা হল, প্রশ্নগুলির উত্তর পেতেও অপেক্ষা করে আছেন সাধারণ মানুষ।
আরজি কর-তদন্তে কলকাতা পুলিশ সূত্রে এখনও পর্যন্ত পাওয়া গেছে —
শরীরে ২৫টি আঘাতের চিহ্ন
যৌনাঙ্গে ‘সাদা ঘন চটচটে তরলের’ উপস্থিতি
গ্রেফতার সঞ্জয় রায় নামে এক সিভিক ভলান্টিয়ার
সিসি ক্যামেরা দেখে চিহ্নিত। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার তার হেডফোন
ধৃতের পিঠে আঁচড়ের দাগ
মৃত্যুর আগে চার জন জুনিয়র চিকিৎসক-পড়ুয়াকে নিয়ে খাওয়াদাওয়া
মৃত্যুর সময় রাত সাড়ে ৩টে থেকে ভোর সাড়ে ৪টের মধ্যে
আরজি কর-তদন্তে এখনও কোনও উত্তর পাওয়া যায় নি —
কেন অত তড়িঘড়ি মৃতদেহ দাহ করে দেওয়া হল
অপরাধী এক জনই, না কি একাধিক
কেন মৃতার পরিবারকে বলা হল তিনি আত্মহত্যা করেছেন
ঘটনাস্থল সেমিনার রুম, না কি অন্য কোথাও
তথ্যপ্রমাণ নষ্ট হতে পারে জেনেও মৃতদেহ পড়ে থাকা সেমিনার রুমে কী করে এত লোককে পুলিশ ঢুকতে দিল
ধৃতের শরীরে আঁচড় ছাড়া কি অন্য কোনও প্রতিরোধের চিহ্ন মিলেছে
মৃতার নখে কি কারও টিস্যু মিলেছে
সেই টিস্যুর সঙ্গে ধৃতের টিস্যুর কি মিল আছে
ময়নাতদন্তে উল্লেখ করা ‘সাদা ঘন চটচটে তরল’ কি বীর্য
বীর্য মিললে নমুনা পরীক্ষায় কি তাতে ধৃতের ডিএনএ মিলেছে
সেই রিপোর্ট এখনও এল না কেন
প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পেতে মরিয়া সাধারন মানু্ষ