স্বস্তির বাতাবরণ মোহনবাগানে, ডুরান্ড ফাইনালে অধিনায়ক শুভাশিসের খেলা প্রায় নিশ্চিত
ডুরান্ড ফাইনাল ঘরের মাঠে। ফেভারিট মোহনবাগান। অন্যদিকে ইতিহাস বদলানোর হাতছানি নর্থ ইস্ট ইউনাইটেডের সামনে। প্রায় ৫০ হাজার সমর্থকদের উপস্থিতিতে ফাইনাল। ছন্দে বাগান দল। খাতায় কলমে ফেভারিট তকমা নিয়েই নামবে সবুজ মেরুন। ফাইনালে নিজেদের এগিয়ে রাখছেন না হোসে মোলিনা। হয়তো আগের বছর হাবাসের দলের আইএসএল ফাইনালের কথা কেউ মনে করিয়ে দিয়েছেন। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অন্যতম দাবিদার। তাও বাড়তি সতর্কতা স্প্যানিশ কোচের গলায়। মোলিনা বলেন, ‘ঘরের মাঠে খেলার কোনও বাড়তি সুবিধা নেই। অবশ্যই সমর্থকদের উপস্থিতিতে খেলা ভাল। তবে আমাদের মাঠে লড়াইটা জিততে হবে। নর্থ ইস্ট ইউনাইটেডের এগারো জনের বিরুদ্ধে খেলতে হবে। তাই আমরা নিজেদের ফেভারিট ভাবতে পারি না।’
পাঞ্জাব এবং বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে শেষ দুটো ম্যাচ টাইব্রেকারে গিয়েছে। দু’বারই পরিত্রাতা বিশাল কাইত। প্রতিবারই দুর্বল রক্ষণের জন্য ভুগতে হচ্ছে বাগানকে। দুই ম্যাচেই গোল হজম করতে হয়েছে। ফাইনালে ৯০ মিনিটের মধ্যে ফয়সালা চান। রক্ষণকে দোষারোপ না করে দলগত পারফরম্যান্সই সাফল্য দেখছেন বাগান কোচ। মোলিনা বলেন, ‘আমরা ক্লিনশিট রাখতে চাই। কিন্তু সব সময় সেটা হয় না। দু’বার পিছিয়ে পড়েও ম্যাচটা টাইব্রেকারে নিয়ে যাওয়ার জন্য ফুটবলারদের কৃতিত্ব দিতে হবে। তবে ফাইনালে আমরা ৯০ মিনিটে রেজাল্ট চাই।’ এই প্রথমবার কোনও টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছে নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড এফসি। দলের বিদেশিরা ভাল। ৫ ম্যাচে ১৬ গোল করেছে। গোলের মধ্যে আছেন নেস্টর। জিথিনের গতি প্রতিপক্ষকে সমস্যায় ফেলতে পারে। আগের বছর ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে উইংয়ে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিলেন নর্থ ইস্টের মিডফিল্ডার। নির্দিষ্ট কাউকে নিয়ে ভাবছেন না বাগান কোচ। গোটা দলকেই সমীহ করছেন। মোলিনা বলেন, ‘আমি একজন বা দু’জন প্লেয়ারে ফোকাস করি না। ওদের দলটা সংগঠিত। রক্ষণ ভাল। আক্রমণ গতিশীল। নেস্টর ভাল প্লেয়ার। ওরা দল হিসেবে খেলে। আমাদেরও দল হিসেবেই ওদের হারাতে হবে।’
সেমিফাইনালের মতো ফাইনালের আগেও দলের টিম স্পিরিট ভাল জায়গায় আছে। প্রাক ফাইনাল অনুশীলনে চনমনে দেখায় কামিন্স, দিমিত্রিদের। হাসি-ঠাট্টা করতে দেখা যায় সবুজ মেরুন ফুটবলারদের। খোশমেজাজে ছিলেন বিশাল কাইত। অনুশীলনে শুরুতে বল চোর খেলে বাগানের ফুটবলাররা। জেমি ম্যাকলারেন নেই। পাওয়া যাবে না আশিক কুরুনিয়ন এবং ধীরাজ সিংকে। সমর্থকদের জন্য স্বস্তি, খেলবেন শুভাশিস। বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে চোট পেয়ে ম্যাচের ২৫ মিনিটে মাথায় মাঠ ছেড়েছিলেন। পুরোদমে অনুশীলন করেন বাগান অধিনায়ক। ফাইনালে প্রথম থেকেই খেলবেন। দলে রদবদলের সম্ভাবনা কম। কামিন্স-দিমিত্রি জুটিকে সামনে রেখেই শুরু করবেন মোলিনা। ডিফেন্সে দুই বিদেশি। পরে নামবেন গ্রেগ স্টুয়ার্ট। খাতায় কলমে সেরা লাইন আপ। খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে এই ত্রয়ী। তাঁদের আটকানোর ছক নর্থ ইস্ট কোচের? জুয়ান পেড্রো বেনালি বলেন, ‘পেত্রাতোস, কামিন্স, স্টুয়ার্ট ভাল প্লেয়ার। মনবীর, লিস্টনরাও ভাল। ওদের আটকানো কঠিন। ৫ ম্যাচে ১৬ গোল করেছি। আমাদের নিজস্ব অস্ত্র আছে। মোহনবাগান শক্তিশালী দল। ওদের কোয়ালিটি প্লেয়ার আছে। নিজেদের সাধ্যমত ওদের আটকানোর চেষ্টা করব।’
প্রথমবার ফাইনালে। ইতিহাস গড়তে তেতে রয়েছে নর্থ ইস্টের ফুটবলাররা। দলের কর্ণধার জন আব্রাহাম একদিন আগেই শহরে চলে এসেছেন। গ্যালারিতে উপস্থিত থাকবেন বলিউডের তারকা। গোটা স্টেডিয়াম থাকবে তাঁদের বিরুদ্ধে। কোচ জুয়ান পেড্রো বেনালি এই নিয়ে নিরুত্তাপ। নিজেও হালকা মেজাজে আছেন, দলের ওপরও কোনও চাপ সৃষ্টি করছেন না। দুই দলের সাক্ষাতে অনেকটাই এগিয়ে বাগান। ইতিহাসে বদলাতে শহরে নর্থ ইস্ট। বেনালি বলেন, ‘আমরা কোনওদিন ফাইনালে উঠিনি। কিন্তু এবার আমরা ইতিহাস বদলাতে এসেছি। প্রত্যেক দিন পরিসংখ্যান বদলে যায়। আমরা ম্যাচটা উপভোগ করার চেষ্টা করব। নিজেদের সেরাটা দেব। আমাদের হারানোর কিছু নেই। তাই আমরা খোলা মনে খেলব। আমরা এখানে পর্যটনে আসিনি, জিততেই এসেছি। নিঃসন্দেহে ওরা ফেভারিট। তবে আমরাও তৈরি।’ শুক্রবার বিকেলে নিজেদের মাঠে প্রাক ম্যাচ চূড়ান্ত প্রস্তুতি সারেন দিমি, কামিন্সরা। কলকাতায় কোনও অনুশীলনই করেনি নর্থ ইস্ট। সকালে ঘরের মাঠে প্র্যাকটিস করেই শহরে এসেছেন নেস্টর, জাবাগোরা।