আমরা তিলোত্তমা, আরজি করের নির্যাতিতার জন্য মহামিছিল
১ সেপ্টেম্বর মহামিছিল। মিছিলে একাধিক দাবি। আরজি করের নির্যাতিতার জন্য বিচার চেয়ে পথে নেমেছে মানুষ। দফায় দফায় বিভিন্ন জায়গায় কম বেশি রোজই জমায়েত, প্রতিবাদ, মিছিল। মিছিলের নাম করেই নাকি জালিয়াতি করছে কিছু মানুষ! সাধারণ জনগণকে ঠকিয়ে, মানুষের ইমোশনের সুযোগ নিয়ে টাকা হাতাচ্ছে! মিছিলের নাম করে যে কিছু অসাধু মানুষ জালিয়াতি করছেন বলে অভিযোগ। অভিনেত্রী সোহিনী সরকার তাঁর পোস্টে লেখেন, ‘আমরা খবর পেয়েছি, আমরা তিলোত্তমা-র ১ লা সেপ্টেম্বরের মহামিছিলের নামে টাকা তোলা হচ্ছে। কাজটি কার, সেটা এখনও বুঝতে পারা যায়নি। আমাদের পক্ষ থেকে এখনো অবধি কোনো টাকা চাওয়া হয়নি, হচ্ছে না। পরবর্তীতে হলে সর্বাগ্রে আমাদের পেজ থেকে সেই আবেদন পোস্ট করা হবে। সাবধান থাকুন। কেউ নিয়ে থাকলে বা এরপর কেউ চাইলে দয়া করে আমাদের জানান।’ একই সঙ্গে এই মিছিল সংক্রান্ত কোনও প্রশ্ন থাকলে সেটার উত্তর পাওয়ার জন্য দুটো নম্বরও শেয়ার করে দেন।
মহামিছিল থেকে ১১টি দাবি?
১ সেপ্টেম্বর মহামিছিলে ১১টি দাবি জানানো হবে নারী নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার জন্য। মিছিলের শিরোনাম আমরা তিলোত্তমা, আমাদের দাবি। সিবিআইকে আর জি করের স্বৈরাচার ও দুর্নীতির মূল ধারক-বাহক এবং তাদের বাকি সঙ্গীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। ঘটনার সময়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষের দায়িত্বহীনতা এবং সেই সময়ে ঘটনাস্থলে তথ্য-প্রমাণ নষ্টের চেষ্টার জন্য তাকে ও বাকি দোষীদের অবিলম্বে খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ধর্ষণ ও খুনের নিরপেক্ষ ও দ্রুত বিচার করতে হবে এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, শুধুমাত্র স্বাস্থ্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে নয়, সমস্ত সরকারি দপ্তরের সিন্ডিকেটরাজ সমূলে উপড়ে ফেলতে হবে। তৃতীয়ত, দিনে ও রাতে যেকোন সময়ে, গণপরিসরে নারী ও প্রান্তিক লিঙ্গ যৌনতার মানুষদের চলাচলের সুরক্ষা ও সমান অধিকার চাই। চতুর্থত, নিয়ন্ত্রণ নয়, নজরদারি নয়, কর্মক্ষেত্র ও সামাজিক ক্ষেত্রে নারী ও প্রান্তিক লিঙ্গ যৌনতার মানুষদের সমমর্যাদা চাই। পঞ্চম, স্কুলপাঠ্যে লিঙ্গ-সাম্যর এবং মানবাধিকার বিষয়গুলিকে আবশ্যক করতে হবে। ষষ্ঠ, প্রত্যেক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আই সি সি ও স্থানীয় এলাকায় এল সি সি করতে হবে এবং তা নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ রাখতে হবে, ইত্যাদি।
এদিকে, তরুণী চিকিৎসক-পড়ুয়ার দেহ উদ্ধারের পরে নমুনা সংগ্রহে দেরি, টালবাহানার অভিযোগের পাশাশাপশি বেনিয়মের তথ্য সিবিআইয়ের হাতে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের সূত্রে দাবি, ঘটনাস্থলে দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ যে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের করার কথা ছিল, তাঁরা করেননি। বদলে তা করেছেন অন্য ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সাধারণত ফরেন্সিক মেডিসিনের বিশেষজ্ঞেরা মৃতদেহ থেকে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করেন। তাঁরা চিকিৎসক। আর ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন ফরেন্সিক গবেষকেরা। তাঁরা চিকিৎসক নন, কিন্তু বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। দেহ থেকে যাঁরা নমুনা সংগ্রহ করেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও বিশেষ বিশেষ ঘটনায় বিশেষ পারদর্শিতার প্রয়োজন থাকে। যেমন, বিষক্রিয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ দিক থাকে। আবার, ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রেও কিছু বিশেষ দিক থাকে। দেহ উদ্ধারের দিন যে দুই ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ ঘটনাস্থলে দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন, তাঁদের সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর করছে সিবিআই। দু’জনকে ইতিমধ্যেই দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কখন, কোন কর্তার নির্দেশে তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন তা ওই দু’জনের থেকে জানার চেষ্টা করেছেন তদন্তকারীরা।
আর জি করের সেমিনার রুমে থিকথিকে ভিড়। যদিও লালবাজার দাবি করেছিল, ওই কক্ষের মাত্র ১১ ফুট অংশ ঘেরা ছিল না। সেখানেই লোকজন দাঁড়িয়েছিল। জানা যাচ্ছে, ওই দিন সেমিনার রুমে প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ আইনজীবী, আর জি করের ফরেন্সিক মেডিসিনের শিক্ষক-চিকিৎসক দেবাশিস সোম-সহ আরও কয়েক জন চিকিৎসক, হাসপাতালের ফাঁড়ির কয়েক জন পুলিশকর্মী ছিলেন।
সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের কথায়, “ঘটনাস্থলে আততায়ীর পায়ের ছাপ এবং হাতের ছাপের নমুনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেমিনার হলে উপস্থিত অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও আইনজীবীদের প্রত্যেকেরই ওই বিষয়ে জানার কথা। তা সত্ত্বেও এমন হল কী ভাবে?” সন্দীপ এবং দেবাশিসকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে সিবিআই। দু’জনেই বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে চলেছেন বলেও সূত্রের দাবি। আরও দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে দেবাশিস জানিয়েছেন, তাঁকে সকাল থেকে সেমিনার রুমে ‘পোস্টিং’ করা হয়েছিল। কিন্তু কে সেই নির্দেশ দিয়েছিলেন, তা খোলসা করছেন না দেবাশিস। ফরেন্সিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞদের দ্বারাই তা হলে কি প্রথম থেকেই প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা শুরু করা হয়েছিল? যদি তা হয়ে থাকে, তা হলে কেন? কাকে আড়াল করতে? মৃতদেহও লোপাট করার চেষ্টাও করা হয়েছিল বলে অভিযোগ।
সিবিআইয়ের এক কর্তা বলেন, “মৃতদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহে ধোঁয়াশা রয়েছে। আবার, তথ্য-প্রমাণ লোপাট করে মামলা দুর্বল করে দেওয়ারও চেষ্টা করা হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।” ঘটনাস্থলের তথ্যপ্রমাণ লোপাটের আরও তথ্য হাতে এসেছে বলে দাবি করেছেন তদন্তকারীরা। তাঁরা এটাও জানাচ্ছেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন সকাল ৯টার পরে দেহ দেখা গিয়েছিল। কিন্তু বাস্তব তেমন নয়। বরং দেহ উদ্ধারের দিন সাতসকালেই ওই সেমিনার রুমে ভিড় করার সমস্ত প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।