চাদর রহস্য! তিলোত্তমার শরীরের চাদরের রংবদল! ধর্ষণ-খুনে প্রথম থেকেই অভিযোগ তথ্য প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা?
তিলোত্তমা ধর্ষণ-খুনে প্রথম থেকেই অভিযোগ উঠছিল তথ্য প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা। চাদরের রঙ নীল থেকে সবুজ হল কীভাবে? তথ্য প্রমাণ লোপাট? সিন অফ ক্রাইম পরিবর্তন করা হয়েছে? নীল চাদর সবুজ হয়েছে, মানে পরিবর্তন হয়েছে? এটা বড় অপরাধ? কলকাতা পুলিশের এক মহিলা কর্তা বলেছেন, ১১ ফুট নাকি কর্ডন ছাড়া ছিল, ওই ১১ ফুটেই কীভাবে বহিরাগত প্রবেশ? বডির পজিশনও বদলানো হয়েছে? আরজি করের জুনিয়ার ডাক্তারদের বয়ান অনুযায়ী, নীল রঙের ম্যাট্রেসের ওপর ছিল তিলোত্তমার শরীরে ছিল নীল রঙের চাদর। সেমিনার রুম অর্থাৎ প্লেস অফ অকারেন্সের একটি ছবি পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যায় নীল রঙের চাদর। যখন বাবা-মা তাঁদের মেয়ের দেহ দেখতে পান, বদলে গিয়েছিল চাদরের রঙ! বাবা-মায়ের দেওয়া বয়ান অনুযায়ী, চাদরের রঙ ছিল সবুজ। হাসপাতাল থেকে ফোন পাওয়ার পর ১২.১০ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গিয়েছিলেন বাবা-মা। অথচ মেয়েকে দেখতে পেয়েছিলেন দুপুর সাড়ে তিনটেয়। প্রশ্ন হল, তাহলে মাঝের সময়ে চাদর কি কেউ বদলে দিল? তিলোত্তমার বাবা বলছেন, “তখন আমার মেয়ে বেডের ওপর শুয়ে ছিল। পা দুটো ছড়ানো ছিল। সবুজ চাদর ছিল। কিন্তু তোমাদের ছবিতে দেখছি নীল চাদর। আমরা যখন দেখেছি সবুজ চাদর।” কেবল চাদরের রঙ নয়, বডির পজিশনও দুক্ষেত্রে দু’রকম। তিলোত্তমার বাবা বলেন, “পা গুলো ছড়ানো ছিল। দুটো পা গদির ওপর ছিল। কিন্তু তোমাদের ছবিতে দেখছি একটা পা ম্যাট্রেসের বাইরে ডায়াসের ওপর রয়েছে। নিশ্চয়ই আমার মেয়ের দেহ কেউ সরিয়েছে।”
তিলোত্তমার বাবা আরও বলেন, “পুলিশের ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় (আইপিএস ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়) কিচ্ছু জানেন না, ওখানে ছিলেন না, তাহলে জোরের সঙ্গে কীভাবে সত্যি কথা বলছেন? টোটালি মিথ্যা কথা বলছেন। সব পুলিশের কাজ। কোনও ঘেরা ছিল না। এটা আমি সাড়ে তিনটের সময়ের কথা বলছি। ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় যে কটা কথা বলেছেন, সব কটা মিথ্যা।” তিলোত্তমার মা বলেন, “দশটা সাড়ে দশটার সময়ে ভিডিয়োতে যে লোকদের দেখা গিয়েছে, ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় বলেছেন বাড়ির লোক ছিল। আমরা তো তখন পৌঁছয়নি। আমরা ১২.১০ এ পৌঁছেছি। আমি পুলিশের পায়ে পড়ে কেঁদেছি, মেয়েকে দেখতে দিন। আমি বলেছিলাম, আমি ছোঁব না, কিচ্ছু করব না। আমার মেয়ের মুখটা দেখতে দেয়নি।” তিলোত্তমার বাবা বলেন, “ওরা তখন দরজা বন্ধ করে ভিতরে কিছু একটা করছিল আরকী, প্রমাণ লোপাট করছিল। চাদরের রঙ বদলাল কীভাবে? পুলিশ আর কলেজ কর্তৃপক্ষ কি প্রথম থেকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছিল?”
আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে জেরার পাশাপাশি সিবিআই রিপোর্টে দাবি, কলকাতা পুলিশের এএসআই অনুপ দত্তর পলিগ্রাফ পরীক্ষা হয় গতকালই। পাশাপাশি ২৮ অগস্ট নির্যাতিতার পরিচিত দুই চিকিৎসককে জেরা করে সিবিআই। এই দু’জনের মধ্যে একজনের জেরা নাকি চলেছিল বেশ রাত পর্যন্ত। বুধবার সিবিআই তদন্তকারীদের একটি দল সোদপুরে নির্যাতিতার বাড়িতেও গিয়েছিল ফের একবার। আপাতত তদন্তে বেশ কিছু প্রভাবশালীর নাম উঠে আসছে। আরজি কর ধর্ষণ ও খুনের ষড়যন্ত্রে তিনজন জড়িত থাকতে পারে বলে আপাতত সন্দেহ করছে সিবিআই। যদিও সেই তিনজনই সরাসরি ধর্ষণের সঙ্গে যুক্ত কি না তা নিয়ে তদন্তকারীদের মনে এখনও ধন্দ আছে। তবে ঘটনাটির তথ্য ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তথ্য লোপাট হয়ে থাকলে জড়িত থাকার সম্ভাবনা প্রবল সন্দীপ ঘোষ এবং অনুপ দত্তের ওপর সন্দেহের নজর পড়েছে সিবিআই-এর। নির্যাতিতার পরিচিত এক চিকিৎসকের ওপরও নজর রয়েছে তদন্তকারীদের। প্রমাণ লোপাট হয়ে থাকলে সেই চিকিৎসকও জড়িত থাকতে পারেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে বলে দাবি রিপোর্টে।
আরজি কর হাসপাতালের মর্গে হাজির সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা। সিবিআইয়ের পাঁচ সদস্যের একটি দল আরজি কর হাসপাতালে পৌঁছে সোজা চলে যান মৃতদেহ সংরক্ষণের বিভাগে। সেখানে নানা বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে এবং ওই বিভাগের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গিয়েছে। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে সিজিও কমপ্লেক্সে জেরার সময়ই সিবিআইয়ের ওই দলটি পৌঁছয় আরজি করের মর্গে। সূত্রের খবর, সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে হাসপাতালের মর্গ থেকে মৃতদেহ লোপাটের যে অভিযোগ উঠেছিল, তারই তদন্ত করতে গিয়েছেন তাঁরা। আরজি করের আর্থিক দুর্নীতির ওই মামলায় হাসপাতালের জৈব বর্জ্য নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সন্দীপের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছেন ‘সন্দীপ ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত আরজি করের ফরন্সিকের শিক্ষক দেবাশিস সোমও। উল্লেখ্য, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ হিসাবে দেহ পরীক্ষার কাজে যুক্ত থাকতেন তিনিও। কলকাতা হাই কোর্টে সন্দীপদের বিরুদ্ধে মৃতদেহ লোপাটের অভিযোগও রয়েছে।