‘আমি হুমকি দিইনি…’, ‘ফোঁস’ বিতর্কে ফের মিথ্যার আশ্রয়? বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দায়ের হল এফআইআর

‘ফোঁস করুন’, গতকাল এভাবেই দলের কর্মী-সমর্থকদের তাঁতিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবার ১৮০ পাল্টি খেলেন মমতা। তাঁর সেই মন্তব্য নিয়ে অপপ্রচার হচ্ছে বলে আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করলেন মুখ্যমন্ত্রী। নিজের পোস্টে দাবি করলেন, চিকিৎসকদের আন্দোলনকে তিনি সমর্থন করেন। আন্দোলনকারীদের তিনি কোনও ভাবেই হুমকি বা হুঁশিয়ারি দেননি। তাঁর আক্রমণ ছিল বিজেপিকে নিশানা করে। তবে মিডিয়া তাঁর কথা ভুল ভাবে উপস্থাপন করছে বলে অভিযোগ করেন মমতা। মেয়ো রোডে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের অর্থাৎ টিএমসিপি সভায় তাঁর বক্তৃতার ‘ব্যাখ্যা’ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার সমাজমাধ্যমে বুধবারের ওই সভার তাঁর বক্তৃতার ‘অপব্যাখ্যার’ অভিযোগে সংবাদমাধ্যমের একাংশকেও দুষলেন মমতা।
মমতা বলেছিলেন, ‘আমাকে অনেক গালাগাল দিয়েছে, অসম্মান করেছে। বলেছিলাম বদলা নয়, বদল চাই। কিন্তু আজ বলছি যেটা করার দরকার, সেটা আপনারা ভালো বুঝে করবেন। আমি অশান্তি চাই না। যে আপনাকে রোজ কামড়াচ্ছে, তাকে কামড়াবেন না, কিন্তু ফোঁস তো করতে পারতে পারেন।’ মমতার এই মন্তব্য ঘিরেই বিতর্কের আবহে নিজের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে লেখেন, ‘আমি কিছু প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক এবং ডিজিটাল মিডিয়াতে একটি দূষিত বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার দেখতে পাচ্ছি। গতকাল আমাদের ছাত্রদের প্রোগ্রামে আমি যে বক্তৃতা দিয়েছিলাম তার রেফারেন্স দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে। আমি স্পষ্ট করে দিতে চাই যে আমি (মেডিক্যাল ইত্যাদি) ছাত্রদের বা তাদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করিনি। আমি তাদের আন্দোলনকে সম্পূর্ণ সমর্থন করি। তাদের আন্দোলন অকৃত্রিম। আমি কখনও তাদের হুমকি দিইনি। তবে কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে সেই অভিযোগটাই করছে। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’
আন্দোলনরত চিকিৎসকদের প্রতি মমতার প্রচ্ছন্ন হুমকি, ‘‘আমাদের মানবিক মুখ রয়েছে। আমরা চাই না, কারও সারা জীবনটা নষ্ট হোক। আমরা যদি এফআইআর করি বা কোনও আইনি ব্যবস্থা নিই, তা হলে আপনাদের কেরিয়ারটা নষ্ট হয়ে যাবে। ভিসা, পাসপোর্টে অসুবিধা হয়ে যাবে। আমি তা চাই না। আমি চাই আরও ভাল ভাল ডাক্তার তৈরি করতে।’’ মিছিলের ভিড় থেকে জুনিয়র ডাক্তারদের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে জবাব, ‘‘আমাদের এফআইআরের ভয় দেখাবেন না! আমাদের যে দাবিগুলো রয়েছে তা না মেনে নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’’
জুনিয়র ডাক্তারদের রাজ্য জুড়ে আন্দোলন ও দাবি, আরজি করে যে ঘটনা ঘটেছে, তার ‘সঠিক বিচার’ হোক। কে বা কারা ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, ওই ঘটনার পিছনে কারও মদত ছিল কি না, কোনও ষড়যন্ত্র ছিল কি না, তা দ্রুত তদন্ত করে বার করতে হবে। ১৪ অগস্ট রাতে ওই হাসপাতালে পুলিশের উপস্থিতিতে যে ভাঙচুর হয়েছিল, সেই ঘটনার পিছনে কারা ছিল, তা জানতেও ‘প্রকৃত তদন্ত’ করতে হবে। তাঁদের দাবি, ধর্ষণ এবং খুনের তথ্যপ্রমাণ লোপাট হয়েছে কি না, হলে কার বা কাদের যোগসাজশে তা হয়েছে, তা খুঁজে বার করতে হবে। স্বাস্থ্য ভবনের কারও খুনের তথ্যপ্রমাণ লোপাটে কোনও ভূমিকা আছে কি না, তা তদন্ত করতে হবে এবংপ্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে সাসপেন্ড করতে হবে। যা বুধবার পর্যন্ত হয়নি। জুনিয়র ডাক্তারেরা পুলিশ কমিশনারেরও ইস্তফা দাবি করেছেন। দাবি করেছেন, পুলিশ কমিশনারকেও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রী ‘নরমে-গরমে’ বার্তা দিতে চেয়েছেন আন্দোলনরত চিকিৎসকেদের উদ্দেশে। সার্বিক ভাবে এর কী প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে, তা নিয়ে অনেকেই উদ্বেগে। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে চিকিৎসকদের মধ্যে ‘বিরূপ প্রতিক্রিয়া’ তৈরি করার সম্ভাবনা রয়েছে। যা সামগ্রিক ভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ‘প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি’র কালক্ষেপ না-করে জুনিয়র ডাক্তারদের জবাবে স্পষ্ট, কর্মবিরতি উঠছে না।
‘বাংলা জ্বললে থেমে থাকবে না দিল্লিও…’, গতকাল তাঁর এই মন্তব্যের জেরে বিস্তর বিতর্ক। বিজেপি শাসিত রাজ্যের নাম নিয়ে নিয়ে ‘হুমকি’ দিয়েছেন বলে অভিযোগ। এই আবহে এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দায়ের হল এফআইআর। রিপোর্ট অনুযায়ী, দিল্লি পুলিশ কমিশনারের কাছে চিঠি লিখে মমতার নামে এফআইআর করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বিনীত জিন্দাল। উল্লেখ্য, বুধবার কলকাতায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের সমাবেশ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে যদি বিজেপি আগুন লাগায় তাহলে ‘থেমে থাবে না’ বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিও। আর এই ‘হুঁশিয়ারি’র পর থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে একের পর এক পালটা তোপ দেগেছেন বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা। টিএমসিপির মঞ্চ থেকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘কেউ-কেউ মনে করছেন, এটা বাংলাদেশ। আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি। ওরা আমাদের মতো কথা বলে। ওদের সংস্কৃতি, আমাদের সংস্কৃতি এক। কিন্তু মনে রাখবেন, বাংলাদেশ একটা আলাদা রাষ্ট্র। ভাবতবর্ষ একটা আলাদা রাষ্ট্র। মোদীবাবু, আপনার পার্টিকে দিয়ে আগুন লাগাচ্ছেন? মনে রাখবেন, বাংলায় যদি আগুন লাগান, অসমও থেমে থাকবে না। উত্তর-পূর্বও থেমে থাকবে না। উত্তরপ্রদেশও থেমে থাকবে না। বিহারও থেমে থাকবে না। ঝাড়খণ্ডও থেমে থাকবে না। ওড়িশাও থেমে থাকবে না। আর দিল্লিও থেমে থাকবে না। আপনার চেয়ারটা আমরা টলমল করে দেব।’