সন্দীপ একা নন, নেপথ্যে জড়িত একটা চক্র? বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যে বার্ষিক ২১ কোটি টাকার লেনদেন!

বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য বিক্রি ‘ইন্ডাস্ট্রি’র বার্ষিক টার্নওভার কমপক্ষে ২১ কোটি টাকা! আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সদ্য প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য বাইরে বিক্রির অভিযোগ। স্বাস্থ্য প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত একাংশের বক্তব্য, সন্দীপ একা নন, বরং এর সঙ্গে একটি চক্র জড়িত। ২১ কোটি টাকার লেনদেন কোনও এক জনের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত ‘কমন বায়োমেডিক্যাল ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট ফেসিলিটি অপারেটর’ সিবিডব্লিউটিএফ জানায় হাসপাতালের মোট বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের বড় অংশই হল প্লাস্টিক-বর্জ্য। পরিমাণ মোট বর্জ্যের অন্তত ৩০ শতাংশ। সেই বর্জ্যের মধ্যে স্যালাইনের বোতল, আইভি টিউব, প্লাস্টিকের সিরিঞ্জ, গ্লাভস, জলের বোতল-সহ একাধিক সরঞ্জাম থাকে। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্যে রাজ্যে দৈনিক বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের পরিমাণ প্রায় ৩৯ হাজার কিলোগ্রাম।হাসপাতালে দৈনিক প্লাস্টিক-বর্জ্যের পরিমাণ কমপক্ষে ১১৭০০ কিলোগ্রাম। নিয়ম অনুযায়ী, অন্য বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের মতো যাবতীয় প্লাস্টিক-বর্জ্যও প্রক্রিয়াকরণের জন্য স্বীকৃত সিবিডব্লিউটিএফ-এর হাতে তুলে দেওয়ার কথা। অথচ আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেটা না করে তিনি পরিবর্তে প্লাস্টিক-বর্জ্য বাইরে বিক্রি করতেন।

পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের দর কেজি প্রতি কমপক্ষে ৫০ টাকা। ১১৭০০ কিলোগ্রাম প্লাস্টিক-বর্জ্যে দৈনিক প্রায় ৫.৮৫ লক্ষ টাকার লেনদেন। মাসে প্রায় ১.৭৫ কোটি, বছরে প্রায় ২১ কোটি টাকার লেনদেন। শুধু আর জি করের নয়, এটি গোটা রাজ্যের আনুমানিক হিসাব। প্লাস্টিক-বর্জ্যের সিংহভাগই পুনর্ব্যবহারযোগ্য। কারণ, সেগুলি পলিপ্রোপিলিন দিয়ে তৈরি। পলিপ্রোপিলিনে তৈরি স্যালাইনের বোতল, জলের বোতল, প্লাস্টিকের সিরিঞ্জ জলে ২০ মিনিট ধরে ফুটিয়ে জীবাণুনাশ করা যায়। প্লাস্টিকের রাসায়নিক গঠন ও গুণমান ভাল হওয়ায় এগুলি বেঁকে যায় না। অবিকৃত অবস্থাতেই থাকে। বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য বাজারে বিক্রি করারই কথা নয়। প্লাস্টিকের সিরিঞ্জগুলি পরে তুলে অন্য সংস্থার লোগো লাগিয়ে ব্যবহার করা হতেই পারে। এই লেনদেন জনস্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে বিপদের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।