‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা, সবদেশেই হয়’, সৌরভের মন্তব্যকে বিকৃত করে প্রচারলাভে মত্ত কিছু আতেল বাঙালি!
সৌরভ গাঙ্গুলিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল রাতের কলকাতা মেয়েদের জন্য নিরাপদ? সৌরভ গাঙ্গুলির উত্তর ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা, সবদেশে হয়।’ তাহলে কি সৌরভ গাঙ্গুলির বলা উচিত ছিল যে রাতের কলকাতা নিরাপদ নয়, সব মেয়েরা বাড়ির ভিতরে থাকবেন, সন্ধ্যের পর কেউ বাড়ির বাইরে যাবে না। আর “সব দেশে হয়” এটা বলার কারণ অপরাধী স্থান দেখে না, মুম্বই, দিল্লিতেও ঘটতে পারে দেশের বাইরেও ঘটতে পারে।
কলকাতার মতো পাঞ্জাব, ব্যাঙ্গালোর, মুম্বই কোনোটাই নিরাপদ নয়। ভারতবর্ষের কোন জায়গা টা নিরাপদ? আর জি কর কান্ডের ব্যাপারে সৌরভ গাঙ্গুলী যে মন্তব্য করেছেন, মন্তব্যগুলি গোটা ভারতবর্ষের দিকে তাকিয়ে করেছেন। মন্তব্যটি বিশ্বমানের মন্তব্য, খুব উচ্চ মানের জ্ঞানী,উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন নেতা বা রাষ্ট্রনায়করা এই ধরনের মন্তব্য করেন। ভারতবর্ষে এধরনের ঘটনা নতুন নয়, একই দিনে তিনটি ঘটনা ভারতের তিনটি ভিন্ন রাজ্যে ঘটেছে। খুনিদের সর্বোচ্চ ফাঁসির সাজা দাবি বাংলার প্রতিটি মানুষের। ব্যক্তিগত ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে কিছু মানুষ হাটে নিজের হাঁড়িটাই ভেঙে ফেলেন নিজের হীনমন্যতার পরিচয় দিয়ে ফেলে। নিজের যোগ্যতা ,অধিকার,মর্যাদা ,চারিত্রিক গুণাবলীর দিকে তাকিয়ে মন্তব্য করা উচিত।
ক্রিকেটার সৌরভকে রাজনৈতিক স্বার্থ দিয়ে মাপা উচিত নয়। ওনার বক্তব্য দিয়ে বিচারপাওয়া কি সম্ভব? একজন দায়িত্ব শীল আইকন হিসেবে যত টুকু বলা উচিত ততটাই বলেছেন। প্রতিবাদী সৌরভ গাঙ্গুলি পথে নামুক বা না নামুক তাতে জাস্টিসে কোনো প্রভাব পড়বে না, তবে উনি যদি বলেন যে এ রাজ্য মহিলাদের জন্য নিরাপদ নয় তবে সারা বিশ্বের কাছে আমাদের দেশ কে ছোট করা হবে এবং আগামী দিনে পর্যটনে এর প্রভাব পড়তে পারে। তাই তিনি বলেছেন এই দেশ রাজ্য নিরাপদ। সৌরভ গাঙ্গুলি সাক্ষাৎকারের শুরুতেই বলেছেন দোষীদের চরম শাস্তি হোক। যাতে এই ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে না ঘটে, তার জন্য নিরাপত্তা বৃদ্ধির কথাও বলেছেন। কয়েকজন তার বক্তব্যটা নেগেটিভ ভাবে তুলে ধরেছে নিজেদের ভিউজ বাড়ানোর জন্য, সেটাকে ট্রেন্ডে বানিয়ে যদি একটু জাতে ওঠা যায় আর কী? সকলের প্রিয় দাদার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার স্রেফ নিজেদের টি আর পি বাড়ানোর জন্য নানান ভাবে গালমন্দ করছেন কিছু নিম্ন মানসীকতার মানুষ। যাঁরা বাকি জীবনটা হাজারও ঘষে মেজে ফেললেও ‘বাংলার মহারাজের’ উচ্চতায় পৌঁছতে পারবেন না!
বাংলা স্বাধীনতার পর থেকে পিছাতে পিছাতে আজ পেছনে সারিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। উদ্বেলিত কিছু আতেলবাজ বাঙালির পরস্থিতি। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের উচ্চতায় পৌঁছোনো তে দূরের কথা। শুধু কাদা ছোড়ার বৃথা চেষ্টা করে প্রচারের আলোয় আসার পন্থা অবলম্বন করেছেন গুটিকয়েক মানুষজন।
ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক আরজি কর-কাণ্ডে মুখ খুলে বিপদে পড়েছেন। যে কোনও স্তরের মানুষ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে নিজের স্তরে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। যে কেউ চেষ্টা করছেন বাংলার গর্বের নাম নিজেদের সঙ্গে জড়িয়ে যতটা সম্ভব প্রচারের আলোয় আসা যায়। আরজি কর-কাণ্ডে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় দু’বার প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। আবার কেউ চেষ্টা করছেন তাঁর নাম বাংলার রাজনীতিতে জড়িয়ে দিতে?
আরজি কর হাসপাতাল থেকে এক মহিলা চিকিৎসককে হাসপাতালের মধ্যেই তাঁকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। সৌরভ তাঁর প্রথম প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। ছেলে হোক বা মেয়ে, কারও সঙ্গেই এমন হওয়া উচিত নয়।” এর পর সৌরভ যা বলেন, তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। তিনি বলেন, ভারতকে সাধারণত একটি নিরাপদ দেশ হিসাবেই গোটা বিশ্ব চেনে। বাংলাও নিরাপদ। সেখানে এ ধরনের ঘটনা হওয়া উচিত নয়। তাঁর মতে, কোনও একটি নির্দিষ্ট ঘটনা থেকে সামগ্রিক চিত্র বিচার করা উচিত নয়। পাশাপাশি এটাও জানান, প্রতিটি হাসপাতালে সিসিটিভি ক্যামেরার নজরদারি অত্যন্ত প্রয়োজন। দ্বিতীয় প্রতিক্রিয়ায় সৌরভ বলেন, ‘‘এই ঘটনা ভয়ঙ্কর। দোষীদের এমন শাস্তি হোক, যাতে ভবিষ্যতে এ রকম ঘটনা কেউ ঘটাতে না পারে। সিবিআই তদন্ত করছে। আশা করব দোষী চিহ্নিত হবে।’’ এর পর প্রতিবাদী সৌরভ পথে নামতে চেয়েছিলেন। নিরাপত্তাজনিত কারণে তা সম্ভব হয়নি। তা সত্ত্বেও মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানান। নিম্নরুচিকর কটাক্ষকারীরা তথাপি ক্ষান্ত হননি।
এর আগেও ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়ার সময় একই ঘটনার শিকার হয়েছিলেন মহারাজ। ভারতীয় ক্রিকেটের মসনদে থাকাকালীন শুনতে হয়েছে নানান মন্তব্য। মাঝেমধ্যে তীক্ষ্ণ জবাব দিতে পিছুপা হন নি, প্রাক্তন বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট। সৌরভের রাজনীতিতে যোগ সম্পর্কে কল্পনার জগতে বিচরণ করা কটাক্ষকারীদের জবাবে, এক সময় বাংলার আইকন সৌরভ বলেছিলেন, “আমি একজন স্বাধীন ব্যক্তি। কোনও বিধায়ক, সাংসদ নই। কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নই। যেখানে ইচ্ছা হবে সেখানে যাব। অনেকেই অনেক জায়গায় যায়। আমার কাছে কলকাতা, দিল্লি, স্পেন সব এক। আমরা পশুদের সমাজে বাস করি না। আমরা মানুষ, একে অপরের সঙ্গে মতের আদানপ্রদান করি। আমার কোনও রাজনৈতিক লক্ষ্য নেই। আমি কারও কাছে উত্তর দিতে বাধ্য নই।”
এভাবে বাংলার গৌরব কিংবদন্তি ক্রিকেটার সৌরভকে নিজের স্তরে নামিয়ে আনতে তৎপর বাঙালির একাংশ। এতে ফললাভ বলতে, একটু প্রচারের আলোকে কটাক্ষকারীরা নিজেদের উদ্ভাসিত করার চেষ্টা করেন। আদতে মহারাজ সর্বদা স্ব আসনেই প্রতিষ্ঠিত। বিরাট সংখ্যক সৌরভ ফ্যানেদের প্রশ্ন, এভাবে বাংলার মহারাজকে টেনে নামাতে চেষ্টা করলেও, কখনও তা কোনওভাবেই সম্ভব নয়। কারণ তিনি তো বিশ্ববন্দিত, টিম ইন্ডিয়া তৈরী করেছিলেন তিনিই, বাংলার মহারাজ। আজও একই ভাবে এক সুরে উচ্চারিত হয় ‘মহারাজা তোমারে সেলাম’