দুরন্ত প্রত্যাবর্তন! টাইব্রেকারে জয় সবুজ মেরুনের, বিশালের বিশ্বস্ত গ্লাভসে ডুরান্ড ফাইনালে মোহনবাগান
মোহনবাগান – ৪ (২)
বেঙ্গালুরু – ৩ (২)
আরজি কর-কাণ্ডের বিচারের দাবিতে টিফো দেখা গেল যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। মঙ্গলবার ডুরান্ড কাপের সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল মোহনবাগান এবং বেঙ্গালুরু এফসি। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ মেনে ম্যাচের শেষে টিফো প্রদর্শন করেন মোহনবাগান সমর্থকেরা। আদালতের নির্দেশ মেনে মোহনবাগান-বেঙ্গালুরু সেমিফাইনাল শেষ হওয়ার পর সবুজ-মেরুন সমর্থকেরা গ্যালারিতে টিফো প্রদর্শন করেন। তাতে লেখা ছিল, ‘হাতে হাত রেখে এ লড়াই, আমাদের বোনের বিচার চাই!’ এ দিনের টিফোতেও দেখা গিয়েছে কলকাতার দুই প্রধানের সমর্থকদের মধ্যে তৈরি হওয়া সম্প্রীতির ছবি। লেখায় ব্যবহার করা হয়েছে সবুজ-মেরুন এবং লাল-হলুদ রং। দু’দিকে দু’টি মেয়ের ছবিতেও ছিল দুই প্রধানের জার্সির রং।
ম্যাচের ৬৭ মিনিট ০-২ গোলে পিছিয়ে। জয়ের প্রহর গোনা শুরু বেঙ্গালুরু বেঞ্চের। এখান থেকেও প্রত্যাবর্তন করা যায়। মোহনবাগানের দুরন্ত কামব্যাক। দুই গোলে পিছিয়ে থেকে টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে জিতে ডুরান্ড কাপের ফাইনালে মোহনবাগান। টুর্নামেন্টের ইতিহাসে কেন তাঁরা সবচেয়ে সফল দল, আরও একবার তার প্রমাণ মিলল। নব্বই মিনিটের শেষে স্কোরলাইন ২-২। টাইব্রেকারে আবার পরিত্রাতা বিশাল কাইত। জোড়া গোল বাঁচালেন। পাঞ্জাব এফসির পর বেঙ্গালুরু। পরপর টাইব্রেকারে জয়। একদিকে দেশের সেরা গোলকিপার গুরপ্রীত। অন্যদিকে সদ্য জাতীয় দলে সুযোগ না পাওয়া বিশাল। বাজিমাত দ্বিতীয়জনের। হোলিচরণ এবং জোভানোভিচের শট বাঁচিয়ে দলকে ফাইনালে তুললেন বিশাল। রাখলেন মোলিনার আস্থা।
টাইব্রেকারে মোহনবাগানের হয়ে গোল করেন জেসন কামিন্স, মনবীর সিং, লিস্টন কোলাসো এবং দিমিত্রি পেত্রাতোস। মিস করেন গ্রেগ স্টুয়ার্ট। বেঙ্গালুরুর গোলদাতা এডগার ওর্তেগা, রাহুল বেকে এবং পেড্রো পায়েরাস। এই নিয়ে ৩০তম বার ডুরান্ড কাপের ফাইনালে উঠল মোহনবাগান। তারমধ্যে ১৭ বার চ্যাম্পিয়ন। ব্যাক টু ব্যাক ডুরান্ড জেতার হাতছানি মোহনবাগানের সামনে। কোয়ার্টার ফাইনালে পাঞ্জাবের বিরুদ্ধেও পিছিয়ে পড়ে কামব্যাক করেছিল সবুজ মেরুন। এদিন তার পুনরাবৃত্তি। যেকোনও সময় দলকে ম্যাচ ফেরাতে পারে বাগানের স্ট্রাইকিং ফোর্স।
রক্ষণে জোড়া বিদেশি টম আলড্রেড এবং আলবার্তো মার্টিনকে রেখে শুরু করেন মোলিনা। আক্রমণে এদিন শুরু থেকেই জেসন কামিন্স এবং দিমিত্রি পেত্রাতোসকে খেলান। কিন্তু দুই বড় চেহারার বিদেশি ডিফেন্ডার নজর কাড়তে পারেনি। অন্যদিকে এদিন প্রথম একাদশে সুনীল ছেত্রীকে রাখেন বেঙ্গালুরুর কোচ জেরার্ড জারাগোজা। শুরুতেই দলকে এগিয়ে দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু আগের সেই গতি নেই। মাঝমাঠ থেকে একটা লুজ বল পান সুনীল। সামনে বিশাল কাইতকে একা পেয়েও শট নেওয়ার আগেই বল ক্লিয়ার করেন বাগান কিপার। সেটা বিপদমুক্ত করেন অ্যালবার্টো। ম্যাচের প্রথমদিকে কিছুটা হলেও ঝাঁঝ বেশি ছিল বেঙ্গালুরুর। মোহনবাগানের মাঝমাঠে কোনও বাঁধুনি ছিল না। বল ধরে খেলার লোকের অভাব স্পষ্ট ছিল। পরের দিকে অনবদ্য অনুরুদ্ধি থাপা। তাঁকে অ্যাটাকে তুলে দেওয়ার পর আক্রমণ বাড়ে। বেশ কয়েকটা হাফ চান্স তৈরি হয়। ১২ মিনিটে লিস্টনের শট সরাসরি তালুবন্দি করেন গুরপ্রীত। ম্যাচের ২৮ মিনিটে লিস্টনের উদ্দেশে বল বাড়ানোর চেষ্টা করেন সাহাল। কিন্তু বল ক্লিয়ার করে দেন নিখিল পূজারী। মূলত মাঝমাঠেই বল ঘোরাফেরা করে। ৩৪ মিনিটে প্রায় ৩৫ গজ দূর থেকে নেওয়া দিমিত্রির ফ্রিকিক তালুবন্দি করেন গুরপ্রীত। ম্যাচের ২৫ মিনিটে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন শুভাশিস। দীপেন্দু বিশ্বাসকে নামান মোলিনা। ম্যাচের ৪২ মিনিটে বেঙ্গালুরুকে এগিয়ে দেন সুনীল। ৪১ মিনিটে বিনীত ভেঙ্কটেশকে বক্সের মধ্যে ফাউল করেন লিস্টন। পেনাল্টি দেন রেফারি। স্পট কিক থেকে গোল করেন সুনীল।
ম্যাচের প্রথমদিক ম্যাড়ম্যাড়ে হলেও প্রথমার্ধের শেষটা ঘটনাবহুল। বিরতির ঠিক আগে ট্রিপল সুযোগ হাতছাড়া মোহনবাগানের। ম্যাচের ৪৫ মিনিটে লিস্টনের শট গুরপ্রীতের হাতে লেগে পোস্টে লাগে। এরপর দিমিত্রির কর্নার থেকে কামিন্সের শট বাঁচান গুরপ্রীত। এরপর অ্যালবার্তোর হেড বাইরে যায়। নয়তো বিরতির আগেই সমতা ফেরাতে পারত বাগান। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ব্যবধান বাড়ায় বেঙ্গালুরু। ম্যাচের ৫০ মিনিটে পেরেরা ডিয়াজের পাস থেকে ফাঁকা গোলে ২-০ করেন বিনীত। ডিয়াজের শট আটকাতে গোল ছেড়ে বেরিয়ে আসেন বিশাল। সেই সুযোগ নেয় বেঙ্গালুরু। জোড়া গোল হজম করার পর জেগে ওঠে বাগান। বেঙ্গালুরু কোচের রক্ষণাত্মক স্ট্র্যাটেজি সবুজ মেরুনকে ম্যাচে ফিরতে সাহায্য করে। একটা গোটা অর্ধ পুরোপুরি রক্ষণাত্মক খেলে কি মোহনবাগানের এই স্টাইকিং লাইনকে আটকানো যায়? সেই ভুলটাই করলেন জারাগোজা। ৬০ মিনিটেই সমতা ফেরাতে পারত বাগান। কিন্তু নিশ্চিত সিটার মিস স্টুয়ার্টের। বাইরে হেড করেন। অবশ্য গোলের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। ম্যাচের ৬৭ মিনিটে বক্সের মধ্যে মনবীরের জার্সি টেনে ফেলে দেন রাহুল বেকে। পেনাল্টি দেন রেফারি। স্পট কিক থেকে গোল করেন দিমিত্রি। ব্যবধান কমে। ম্যাচের ৮৪ মিনিটে দুরন্ত গোলে সমতা ফেরান অনিরুদ্ধ থাপা। ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। হাসি মুখে স্টেডিয়াম ছাড়ে প্রায় ৩৫ হাজার সমর্থক।