মেধাবী সন্দীপের কারসাজি ধরতে হিমসিম সিবিআই?খাতায় হিসাব ওঠার আগেই সরিয়ে ফেলা হত বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য?
আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় সন্দীপকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। আরজি করে আর্থিক দুর্নীতির মামলায় সন্দীপের নাম রয়েছে। কেন্দ্রীয় সংস্থার নির্দেশে সিজিওতে আবার হাজিরা ধর্ষণ-খুনের মামলাতেই। দেবাশিস আর্থিক অনিয়মের মামলায় হাজিরা দেন। আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন সুপার সঞ্জয় বশিষ্ঠেরও হাজিরার পাশাপাশি জানা যাচ্ছে ফরেন্সিক কর্তা দেবাশিসের কেষ্টপুরের বাড়িতেও রবিবার হানা দিয়ে সিবিআই কয়েক ঘণ্টার তল্লাশি চালায়। আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে দেবাশিস সোমেরও নাম রয়েছে। আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ হাজিরা দিতেন সিজিও কমপ্লেক্সে। দীর্ঘ জেরাতেও সন্তুষ্ট হননি তদন্তকারীরা। ছুটির দিনে সাত সকালে এক্কেবারে সন্দীপ ঘোষের দুয়ারে এসে হাজির হয়েছিলেন সিবিআই আধিকারিকরা। অনেক ডাকাডাকি, বেল বাজানো-সবই হয়েছে। ঘণ্টা দেড়েক ধরে চলেছে এই পর্ব। সন্দীপের বাড়ির বাইরে ততক্ষণে ভিড় জমে গিয়েছে পড়শিদের। কিন্তু একী! সন্দীপ ঘোষ কেন দরজা খুলছিলেন না?
দেড় ঘণ্টা পর যখন সন্দীপ ঘোষ বের হন, রীতিমতো ফর্মাল লুকে বেরোলেন। পকেটে পেন গোঁজা। পায়ে জুতো। ছুটির সকালে যেন কোনও চেম্বারে-দফতরে যাচ্ছেন। দেড় ঘণ্টা কেন দরজা খুললেন না সন্দীপ ঘোষ? কেন সিবিআই-এর ডাকাডাকি শুনলেন না সন্দীপ? নাকি তথ্য লোপাটের জন্য সময় নিলেন? জোরাল হচ্ছে সে প্রশ্ন। এর আগেও তো তথ্য প্রমাণ লোপাটের জন্য মোবাইল ফোন হঠাৎ করেই পাঁচিল টপকে পুকুরে ফেলেছিলেন বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। সন্দীপ ঘোষের বাড়িতে ম্যারাথন তল্লাশি সিবিআইয়ের। রবিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে তল্লাশি। ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তল্লাশি চালায় কেন্দ্রীয় সংস্থা। সন্দীপের বাড়ি থেকে বেশ কিছু নথি ও ফাইল বাজেয়াপ্ত করেন তদন্তকারীরা। সবুজ কাপড়ে বোচকা বেঁধে সেই নথি হাতে নিয়ে বের হন তদন্তকারীরা।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সদ্য প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য বিক্রি-সহ একাধিক অভিযোগ। গভীর তদন্তে সিবিআই। বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য সংক্রান্ত তথ্যে খাতায়কলমের ফাঁক ধরাই গোয়েন্দাদের কাছে তদন্তের প্রাথমিক ধাপ। সরকারি নথি অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের পুরোটাই প্রক্রিয়াকরণ হয়। অর্থাৎ, প্রক্রিয়াকরণ হয় না, এমন কোনও অংশ কিছু থাকে না বললেই চলে। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্ট অর্থাৎ বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বার্ষিক রিপোর্ট, ২০২২ অনপযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের পরিমাণ হল ৩৮৮৮৬.১৪ কিলোগ্রাম। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছে গত ৩১ ডিসেম্বর রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পাঠানো বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য সংক্রান্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজ্যে শয্যাযুক্ত এবং শয্যাহীন হাসপাতালের বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের দৈনিক পরিমাণ যথাক্রমে ৩২৭৯৯.৫২ কিলোগ্রাম এবং ৬০৮৬.৬২ কিলোগ্রাম। অর্থাৎ মোট ৩৮৮৮৬.১৪ কিলোগ্রাম, যার পুরোটাই প্রক্রিয়াকরণ হয়। উদ্বৃত্ত বা প্রক্রিয়াকরণ হয় না এমন অংশই নেই, সেখানে কী ভাবে দুর্নীতির প্রসঙ্গ এসেছে, কী ভাবে সন্দীপ সেই বর্জ্য বাইরে বিক্রি করেছেন, দরপত্রে কী ভাবে অনিয়ম হয়েছে, হিসাবে গরমিলের মতো প্রশ্নগুলিই তদন্তের তালিকায়।