বহুত কুছ এভিডেন্স হ্যায়!’ জানাল সিবিআই, এ রাজ্যে সরষের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে ভূত! তল্লাশি রাতেও! আড়ালে থেকে একটি ক্ষমতাশীল চক্র সক্রিয় হয়ে তদন্তে বাধা সৃষ্টি করছে
অপেক্ষায় রয়েছেন আন্দোলনকারীরী। তাঁদের স্থির বিশ্বাস ঘটনাকে ‘আড়াল করছে দুষ্টচক্র’! সিবিআইয়ের দিকে তাকিয়ে আরজি কর আন্দোলন, প্রত্যাহার নয় কর্মবিরতি। আরজি করের তদন্তে বিলম্বের জন্য সিবিআই তদন্তের উপরেই ভরসা আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের। আশঙ্কা, এ রাজ্যে সরষের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে ভূত। আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা অভিযোগ করেছেন, ‘‘আড়ালে থেকে একটি ক্ষমতাশীল চক্র সক্রিয় হয়ে তদন্তে বাধা সৃষ্টি করছে, যাদের চাপের কাছে স্বাস্থ্যভবনও অসহায়’’। আন্দেলনকারীরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, এই চক্রের জন্য আসল দোষীরা এখনও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাই আরজি করকে আধা সেনাবাহিনী দিয়ে মুড়ে ফেলা হলেও সেখানকার চিকিৎসকেরা নিরাপদ বোধ করছেন না। কর্মবিরতিও এখনই প্রত্যাহার করছেন না। আরজি করের আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের প্রতিনিধিরা ক্ষোভ উগরে দিয়েছে কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে। পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগের দাবিও জানিয়েছেন।
এটা স্পষ্ট যে হামলাকারীদের উদ্দেশ্য ছিল আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের ভয় দেখানো এবং তথ্য প্রমাণ লোপাট! সিসি ক্যামেরায় স্পষ্ট, দুষ্কৃতীদের একটি দল জরুরিবিভাগের গেট দিয়ে ঢুকে একটি ফ্লোরে কোনও রকম ভাঙচুর না করে সেমিনার রুম খুঁজতে অন্য ফ্লোর গুলিতে ভাঙচুর চালায়। ওই সময়ে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা সত্যিই যন্ত্রণাদায়ক। একদিকে তারা নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। তার উপরে তারা অসংবেদনশীল এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ার উপর গোটা দোষটা চাপিয়ে আসল দোষীদের আড়াল করেছেন। কলকাতা পুলিশ সুবিচার পাওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করেছে। ন্যায়বিচারকে বিলম্বিত করার পথে মূল ভূমিকা নিয়েছে। দ্বিতীয় একটি শক্তিও ন্যায় বিচার পাওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করে চলেছে। সন্দীপের অনুগত একটা অংশ যে ভাবে আর্থিক এবং অন্যান্য দুর্নীতি করেছে, তাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য একটি দুষ্ট চক্র সক্রিয় ছিল। তারা শুধু আরজি কর নয়, বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজেই এখনও সক্রিয়। অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই জুনিয়র ডাক্তারদের ফেল করানো এবং চিকিৎসকদের বদলি করানোর ভয় দেখায় এবং বদলি করে।
চার দফা দাবি:
১। ৯ আগস্টের ঘটনায় জড়িত দোষীদের চিহ্নিত করা। দোষীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে তাই কেউউ নিরাপদ নয়। অতিদ্রুত দোষীদের সনাক্তকরণ এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি।
২। তথ্য প্রমাণ লোপাটের ঘটনায় যে বা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িত, তাদের প্রত্যেককে তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি। স্বাস্থ্য ভবনের প্রত্যক্ষ মদতে যে দুষ্ট চক্র এতে সক্রিয় ছিল, তাদের আড়াল করা চলবে না। স্বাস্থ্য ভবনকে অবিলম্বে সন্দীপ ঘোষকে সাসপেন্ড করতে হবে।
৩। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ অনুষায়ী কলকাতা পুলিশ প্রশাসন এই ঘটনার তদন্তে সম্পূর্ণ রূপে ব্যর্থ। এই ব্যর্থতার দায় নিয়ে পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ দাবি। প্রয়োজনে তাঁকেও বিচার ও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
৪। প্রতিটি কলেজে ভয়ের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। স্বচ্ছ ভাবে নির্বাচন করতে হবে। সমস্ত কলেজ এবং হাসপাতালে সিদ্ধান্ত গ্রহণ কারী সমস্ত কমিটিকে জুনিয়র ডাক্তার এবং মেডিক্যাল ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করতে হবে। যাঁদের গণতান্ত্রিক ভাবে ভোটের মাধ্যমে বেছে নেওয়া হবে।
এদিকে, ৮টা ৬ মিনিটে সন্দীপ ঘোষের বাড়িতে প্রবেশ করেছিলেন সিবিআইয়ের আধিকারিকেরা। টানা ১২ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের ম্যারাথন তল্লাশির পরে সিবিআই গোয়েন্দারা সন্দীপের বেলেঘাটার বাড়ি থেকে বেরোলেন রাত ৮টা ৪৬ মিনিটে। সূত্রের খবর, সন্দীপের বাড়ি থেকে বহু নথিপত্র নিয়ে ফিরেছেন সিবিআই গোয়েন্দারা। ১৫ জায়গায় তল্লাশি চালায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। হাওড়ায় সুমন হাজারার বাড়িতে সিবিআই। হাওড়া পুকুরতলায় রয়েছে সুমনের ওষুধের দোকানে সিবিআইয়ের টিম হাজির। কে এই সুমন হাজরা? সুমন হাজরা-বিপ্লব সিং এর মতো ডেভলপার ছিলেন আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের কাছের লোক। সিবিআই সূত্রে খবর, বিপ্লবের পাশাপাশি এই সুমনও অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন সন্দীপ ঘোষের। হাসপাতালের একাধিক জিনিসপত্র রিসাইকেল করে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে সুমনের বিরুদ্ধে। একাধিক হাসপাতাল সংক্রান্ত দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত সুমন। সিবিআই সূত্রে খবর, সন্দীপ ঘোষ কোথাও কোন প্রোগ্রাম করলে হোটেল বুকিং থেকে শুরু করে সমস্ত কিছু দেখভাল করতেন এই সুমন হাজরা। এমনকী বিভিন্ন ক্ষেত্রে কমিশন থেকে টাকা পয়সার লেনদেন সবই হত বিপ্লব আর সুমনের মাধ্যমে। হাওড়ার সাঁকরাইলের হাঁটগাছায় বিপ্লব সিংয়ের বাড়িতেও এই কাণ্ডে তল্লাশি চালায় সিবিআই। বিপ্লব আরজি কর হাসপাতালের ভেন্ডর। সূত্রের খবর, আরজিকর হাসপাতালে দুজন ভেন্ডর ছিল। সুমন হাজরা এবং বিপ্লব সিং। ইনজেকশনের সিরিঞ্জ থেকে বিভিন্ন ওষুধ সরবরাহ করতেন এই দু’জন।
এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, বহুত কুছ এভিডেন্স হ্যায়। অর্থাৎ বাংলায়, অনেক প্রমাণ আছে। গোটা বাংলা কার্যত এই লাইনটা শোনার জন্য অপেক্ষা করছিল। বহুত কুছ এভিডেন্স হ্যায়। তবে ঠিক কী ধরনের প্রামাণ্য নথি সিবিআই পেয়েছে তা সবটা জানা যায়নি। তবে সূত্রের খবর, সন্দীপ ঘোষ যে কম্পিউটার ব্যবহার করতেন সেটা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। হিসাবরক্ষা বিভাগ থেকে প্রচুর নথি মিলেছে বলে খবর। চন্দন লৌহ নামে এক ব্যক্তিকে অবৈধভাবে স্টল পাইয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। এই চন্দন লৌহ আবার স্থানীয় তৃণমূল নেতা। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে তার একটা স্টল রয়েছে। তবে সেটা সরাসরি তার নামে নয়। তার স্টলের কম্পিউটারও পরীক্ষা করে দেখছেন সিবিআই আধকারিকরা। সিবিআই আধিকারিকরা সেই কম্পিউটার থেকে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। এই ব্যক্তি সন্দীপ ঘোষের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। চন্দন লৌহের টালার ফ্ল্যাটেও হানা দিয়েছিল সিবিআইয়ের টিম। টেন্ডার না ডেকে চন্দনকে স্টল দেওয়া হয়েছিল বলে খবর। এদিকে তৎকালীন ডেপুটি সুপার নন মেডিক্যাল আখতারি আলি জানিয়েছেন ওই চন্দন লৌহকে যে স্টল দেওয়া হয়েছিল সেটা পুরো বেআইনিভাবে দেওয়া হয়েছিল।