চূড়ান্ত অপেশাদারিত্ব কাঠগড়ায় আইএফএ, বিস্তর অভিযোগ কলকাতা লিগ নিয়ে, বিপদে নতুন ক্লাবগুলো
কলকাতা লিগ নিয়ে কাঠগড়ায় আইএফএ। চূড়ান্ত অপেশাদারিত্বের পরিচয় দিচ্ছে বাংলার ফুটবল নিয়ামক সংস্থা। কলকাতা প্রিমিয়ার ডিভিশনের পাশাপাশি চলছে বিভিন্ন ডিভিশনের খেলা। নাম কলকাতা লিগ হলেও মূলত অধিকাংশ ম্যাচই জেলার মাঠে। পর্যাপ্ত পরিকাঠামোর অভাব। ন্যূনতম ব্যবস্থাও নেই। পর্যাপ্ত খাবার জল পর্যন্ত নেই। মাঠের হালও তেমনই। কলকাতা লিগ শুরুর আগে শহরের এক পাঁচতারা হোটেলে ঘটা করে সাংবাদিক সম্মেলন করে জানানো হয়েছিল নতুন স্পনসর শ্রাচী স্পোর্টসের নাম। তিন বছরের চুক্তি হয় এই সংস্থার সঙ্গে। পাশাপাশি বিভিন্ন কর্পোরেটদের থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। হঠাৎ করেই কর্পোরেট দলগুলোর অন্তর্ভুক্তির জন্য এক কোটি টাকার নিয়ম চালু করা হয়। যা আগে কোনওদিন ছিল না। কিন্তু এত কোটি কোটি টাকা ঢালা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না ক্লাবগুলো। বা বলা চলে নতুন ক্লাবগুলো। তাঁদের গিনিপিগ করে চালানো হচ্ছে হাজারো পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এত টাকা কোথায় যাচ্ছে সেটা কেউ জানে না। স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে আইএফএর।
কলকাতা লিগে খেলা অধিকাংশ ক্লাবই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। আদিত্য গ্রুপ এবং অন্যান্য কর্পোরেটগুলোও একই সমস্যায় ভুগছে। কোটি কোটি টাকা ঢেলেও কোনও লাভ হচ্ছে না। সবই জলে যাচ্ছে। উঠতি ফুটবলারদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসছে কর্পোরেটগুলো। লাভের লাভ হচ্ছে না। চুঁচুড়ার ইস্টার্ন গ্রাউন্ডে ছিল কলকাতা লিগের প্রথম ডিভিশনের খেলায় মাঠের শোচনীয় অবস্থা। দু’দিকের গোলপোস্টের সামনে জল জমে যায়। বরাবরই বৃষ্টির মরশুমে কলকাতা লিগ চলে। কাদা মাঠে খেলা নতুন নয়। বিরতিতে বালি বা অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে মাঠ পরিচর্যা করার কোনও সিস্টেম নেই। নেই পর্যাপ্ত লোক? আইএফএর একজনের দেখা মিললেও অস্তিত্বহীন। এমন মাঠে খেলতে গিয়ে কোনও ফুটবলার গুরুতর চোট পেলে সেই দায় কে নেবে? কলকাতা থেকে বহু দূরে রাখা হচ্ছে ম্যাচগুলো। প্রথমে শহর থেকে ২০ কিলোমিটারের দূরত্বে ম্যাচ রাখা পরে পরে, বেড়ে শেষপর্যন্ত প্রায় ৬০ কিলোমিটার। চুঁচুড়ার টাউন ক্লাব সংলগ্ন মাঠে খেলা রাখা হয়। যা আয়তনেও কিছুটা ছোট। রানাঘাটেও ম্যাচ ফেলা হচ্ছে। এই বিষয়ে বিভিন্ন ক্লাবের তরফ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল আইএফএকে। কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ, আইএফএর থেকে সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। রাজ্যের ফুটবল সংস্থার প্রয়োজনে তাঁদের দেখা মিললেও, ক্লাবের দরকারের সময় কাউকে পাওয়া যায় না। ম্যাচের সূচিও পূর্বনির্ধারিত নয়। খেলার ৪৮ ঘণ্টা আগে জানানো হয়। তারমধ্যেও বেশ কয়েকবার বদল করা হয়। প্রিমিয়ার ডিভিশন ছাড়া ম্যাচ সম্প্রচার করা হচ্ছে না। শুধুমাত্র বড় দলগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। মিডিয়ায় প্রচারও পায় তথাকথিত বড় ক্লাবগুলো। গাদা টাকা ঢালা সত্ত্বেও প্রচারের আলো পায় না কর্পোরেট ক্লাবগুলো।
মাঠ, পরিকাঠামোর পাশাপাশি আরও বড় সমস্যা রেফারিং। প্রায় প্রতি ম্যাচেই ভুগতে হচ্ছে ক্লাবগুলোকে। এদিনের ইউনাইটেড কলকাতা স্পোর্টস ক্লাবের সঙ্গে সালকিয়া ফ্রেন্ডস অ্যাসোসিয়েশন ম্যাচের কথাই ধরা যাক। দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি বক্সের মধ্যে রাহুল দোয়ারিকে ফাউল করা হয়। নিশ্চিত পেনাল্টি। অথচ পেনাল্টি দিলেন না রেফারি। লাইন্সম্যান পেনাল্টির সিগন্যাল দেওয়া সত্ত্বেও কর্ণপাত করেননি রেফারি। শুধু এই ম্যাচে নয়, এর আগেও বেশ কয়েকবার রেফারির ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হয়েছে ক্লাবগুলো। জঘন্য রেফারিংয়ের জন্য খেলার মান আরও নীচে নেমে যাচ্ছে। রেফারিং নিয়ে সোচ্চার হয় প্রিমিয়ার ডিভিশনের রেনবো অ্যাথলেটিক ক্লাবও। ভবানীপুরের বিরুদ্ধে তাঁদের ন্যায্য পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত করা হয়। বক্সের ভেতর রেনবোর প্লেয়ারকে ফাউল করা হলেও পেনাল্টি দেয়নি রেফারি। বিপক্ষের ফুটবলারকে হলুদ কার্ডও দেখানো হয়নি। অফসাইডের সিদ্ধান্তও ভুল। দিনের পর দিন জঘন্য রেফারিংয়ের জন্য ভুগতে হচ্ছে ক্লাবগুলোকে। প্রতিবাদ করেও কোনও সুরাহা হয়নি। চোখে ঠুলি আইএফএ কর্তাদের। রেফারিং নিয়ে কয়েকদিন আগে আইএফএকে চিঠি দেয় প্রিমিয়ার ডিভিশন এবং প্রথম ডিভিশনের কয়েকটি ক্লাব। কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। প্রথমবার এমন হচ্ছে না। এখন ম্যাচ সম্প্রচার হওয়ায় বিষয়গুলো প্রকাশ্যে আসছে। গত দু’বছর ধরে এমনই চলে আসছে। শোচনীয় হাল আইএফএর। তথৈবচ কলকাতা তথা ভারতীয় ফুটবল। শোনা যেত বাংলার ফুটবলের উন্নতিতে কর্পোরেটদের সাহায্য দরকার। বর্তমানে রাজ্যের ফুটবলের উন্নতিতে এগিয়ে আসছে কর্পোরেটরা। তাতেও কোনও বদল নেই। ২০ বছর আগে যা পরিস্থিতি ছিল, বর্তমানেও তাই। আইএফএ অফিস নতুন করে সাজানো হলেও, মানসিকতা এখনও সেই মান্ধাতা আমলের। বাংলার ফুটবলের উন্নতি সেই বিশ বাঁও জলেই?