সন্দীপ ঘোষের কীর্তির মালা প্রকাশ্যে? আরজি করের আর্থিক দুর্নীতি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ সন্দীপের!
একে একে প্রকাশ্যে সন্দীপ ঘোষের কীর্তির মালা। বনগাঁ হাইস্কুলের কৃতি ছাত্র সন্দীপের মধ্যে যখন একবার লোভ ঢুকে গিয়েছিল তখন তা আর আটকাতে পারেন নি তিনি। বিশেষ করে শাসক দলের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তিনি ‘ধরাকে সরা’ জ্ঞান করতেন। ফলে ডুবে যাচ্ছিলেন অন্ধকার জগতে। ইতিমধ্যে তার সম্পর্কে বহু অভিযোগ এসেছে। এবার সামনে আসলো আরো অভিযোগ। জানা গিয়েছে, ২০২২ সালের জুলাই মাসে আরজি কর হাসপাতালে স্যালাইন সংকট দেখা দেয়। হঠাৎ করেই রাতে ট্রমা কেয়ার সেন্টারে স্যালাইন শেষ হয়ে যায়। জানা যায় যে স্যালইন সরবরাহকারী সংস্থা স্যালাইন দিত, তাদের দীর্ঘদিন ধরে টাকা বাকি। ফলে তারা স্যালাইন সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। ওই অবস্থায় গভীর সংকটে পড়েন রুগীরা। গোটা আরজি কর হাসপাতাল জুড়ে দেখা দেয় স্যালাইনের তীব্র সংকট। তবুও ওই সংস্থাকে টাকা না দিয়ে পাল্টা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান সন্দীপ ঘোষ। উঠে আসছে এমনটাই অভিযোগ। পরে সাগর দত্ত মেডিকেল কলেজ থেকে স্যালাইন এনে সেই সমস্যা মেটানো হয়। তার নতুন কিছু কীর্তি সামনে আসছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে হাসপাতালের মর্গ থেকে চারটি মরদেহ লোপাটের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ, মৃতদের পরিবারকে না জানিয়ে মরদেহ অন্য মেডিক্যাল কলেজে ফরেনসিক মেডিসিনের ওয়ার্কশপের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। এই কাজের জন্য মৃতদেহের রেজিস্ট্রার পর্যন্ত লোপাট করা হয় বলে অভিযোগ। সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেন তৎকালীন আরজি করের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সোমনাথ দাস। আরো জানা যায়, নিজের পছন্দের যে জুনিয়ার ডাক্তার, ইন্টার্নদের দল, তাদের নিয়মিত মদ্যপানের ব্যবস্থা করা হত গেস্ট হাউসে। কলেজের ফেস্টে নিজের কাছের ছাত্রছাত্রীদের দেদার ফুর্তির ব্যবস্থা করার অভিযোগও উঠেছে সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে। এছাড়াও হাসপাতালে সিসিটিভি লাগানোর জন্য ১৪ লক্ষ টাকা খরচ দেখানো হয়। তবে আদৌ পর্যাপ্ত সিসিটিভি ছিল না বলে অভিযোগ। শাসক দলের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় এতদিন এই নিয়ে খুব বেশি নড়াচড়া পরে নি। এবার কি তা আদন্তের অধীনে আসবে? প্রশ্ন নাগরিক মহলের।
আর জি কর কান্ড হয়ে গেছে বেশ কিছুদিন। মানুষের প্রতিবাদে উদ্বেলিত সমস্ত রাজ্য। নির্যাতিতার মা দিলেন আরও বড় বার্তা, ‘মেয়ের ফোনেই লুকিয়ে থাকতে পারে, সমস্ত রহস্য়ের চাবিকাঠি, সিবিআই খোঁজার চেষ্টা করছে।’ তিনি আরো বলেন, মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছি সঞ্জয় আসল দোষী নয়, ভিতরের কেউ নিশ্চয়ই এর মধ্যে আছে। রাজ্যপাল দেখা করেছেন নিহত চিকিৎসকের মা বাবার সঙ্গে। কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করেই নিহত চিকিৎসকের বাবা বলেন, এখন পর্যন্ত তদন্ত খুব বেশি এগিয়েছে বলে তো মনে হচ্ছে না। পরে তিনি বলেন, রাজ্যপাল আমাদের আশ্বস্ত করে গেলেন। আমাদের যতটা সহযোগিতা করতে পারেন, আমরা বললাম কে দায়িত্ব নিয়েছে, কী নিয়েছে, সে তো আমরা জানি না। তিনি আরো বলেন, তথ্যপ্রমাণ সংরক্ষণে দেরি করা হয়েছে। খুনের জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ লোপাটের আশঙ্কাও প্রকাশ করল সুপ্রিম কোর্ট। আজ সিবিআইয়ের আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টে দাবি করেন, তদন্তে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তাঁর অভিযোগ,জিডির ভিত্তিতে কী করে ময়নাতদন্ত? ময়নাতদন্তের পর কী করে অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগে এফআইআর! সবটা মিলিয়ে এখন তদন্ত কোন সীমানায় তা স্পষ্ট নয়।
আরজি করের আর্থিক দুর্নীতির তদন্তভার সিবিআইকে দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টরই ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হলেন আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। ডিভিশন বেঞ্চ শুক্রবার দুপুরে সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ের কপিও আনতে বলেছে। সন্দীপের বিরুদ্ধে ওই দুর্নীতি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিচারপতি হরিশ টন্ডন এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। সন্দীপের আইনজীবী বলেন, তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ। অথচ তাঁর কথা না শুনেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মর্মে ডিভিশন বেঞ্চের কাছে দ্রুত শুনানির আর্জিও জানান। আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি একাধিক অভিযোগ তুলে হাই কোর্টে দু’টি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে একটি করেছেন সন্দীপের প্রাক্তন সহকর্মী তথা আরজি করের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি। অন্য মামলাটি করেন আইনজীবী সুস্মিতা সাহা দত্ত।