January 17, 2025

আরজি কর-কাণ্ডে ব্যথিত প্রতিষ্ঠাতার পরিবার! হাওড়ার বেতড়ের বাড়িতে প্রতিষ্ঠাতা রাধাগোবিন্দের অনাড়ম্বর জন্মদিন পালন

0
RG Kar

হাওড়ার রামরাজাতলা স্টেশন থেকে মিনিট পনেরোর পথ। বেতড়ের বিখ্যাত কর বাড়ি। আর জি কর অর্থাৎ রাধাগোবিন্দ কর জন্মভিটে। শুক্রবারও ২৩ আগস্ট তাঁর জন্মদিন। পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজনেরা ফুলমালা শ্রদ্ধার্ঘ্য দিয়েছেন রাধাগোবিন্দের ছবিতে। প্রত্যেকেই শোকস্তব্ধ। প্রতি বারই অন্য রকম উচ্ছ্বাস। পাড়া-প্রতিবেশীরা ও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আত্মীয়স্বজনেরাও আসেন প্রতি বছর। হাওড়ার বেতড়ের বাড়িতেই সকলে একত্রিত হয়ে রাধাগোবিন্দ করের জন্মদিন পালন করে এসেছেন তাঁর পরিবারের সদস্যেরা। এ বার আরজি কর-কাণ্ডের আবহে সেই চেনা উচ্ছ্বাস নেই পরিবারে। অনাড়ম্বরেই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা রাধাগোবিন্দের ১৭৪তম জন্মদিন পালিত হল বেতড়ের বাড়িতে।

আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় প্রত্যাশিত ভাবেই রাধাগোবিন্দের জন্মদিনে পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজনেরা সকলেই শোকস্তব্ধ। দোষী বা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গত ১৪ অগস্ট কলকাতা শহরে মেয়েদের রাত দখলের কর্মসূচিতেও শামিল হয়েছিলেন। আলোড়িত কর পরিবারের উপর ছাপ পড়েছে রাধাগোবিন্দের জন্মদিন উদ্‌যাপনেও। পরিবারের সদস্য গার্গী করের কথায়, ‘‘আরজি করের ঘটনা আমাদের খুবই পীড়া দিয়েছে। উনি (রাধাগোবিন্দ কর) তিল তিল করে যে হাসপাতাল তৈরি করেছিলেন, সেটাকে কী ভাবে নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে! এই ন্যক্কারজনক ঘটনায় যে ভাবে রাধাগোবিন্দ করের নাম জড়িয়ে গিয়েছে, তাতে আমরা ভীষণ ব্যথিত। চোখ থেকে জল-রক্ত না বেরোলেও আমার ভিতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।’’পরিবারের সদস্য পার্থ কর বলেন, ‘‘এ বার রাধাগোবিন্দ করের জন্মদিনে বহু মানুষ এসেছেন বাড়িতে। বর্তমান পরিস্থিতিতে হয়তো আরও বেশি করে রাধাগোবিন্দ করকে স্মরণ করতে চেয়েছেন তাঁরা।’’ আরজি করের ঘটনায় সেই প্রতিষ্ঠানের ‘গরিমা’ নষ্ট হয়েছে বলেই মনে করছে কর পরিবার। পার্থ বলেন, ‘‘এর দায় রাজ্য প্রশাসনের উপরেই বর্তায়। তাই আজ এত মানুষ পথে নেমেছেন। সুবিচার চাইছেন।’’ পরিবারের আর এক সদস্য টুম্পা কর বলেন, ‘‘আগামী দিনে যাতে এ রকম নারকীয় ঘটনা না ঘটে, তার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে প্রশাসনকে। তবেই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের গৌরব ফিরে আসবে।’’

১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাক্তারি পাশ করে দেশে ফেরার পর সেই বছরই ইংরেজ সরকারের সাহায্য নিয়ে এশিয়ার প্রথম বেসরকারি হাসপাতাল তৈরি করেছিলেন রাধাগোবিন্দ। তখন তার নাম ছিল ‘ক্যালকাটা স্কুল অফ মেডিসিন’। কালক্রমে তার নাম হয় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। পরিবারের লোকেরা জানান, ব্রিটিশ সরকার খানিকটা নিজেদের স্বার্থেই উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ তৈরি করেছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সৈন্য ও এ দেশে বসবাসকারী ইউরোপীয়দের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখা। রাধাগোবিন্দ বুঝেছিলেন যে, দেশের মানুষের চিকিৎসার জন্যে বই লেখাই যথেষ্ট নয়। বরং প্রয়োজন একটি পৃথক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের। যা ব্রিটিশ নিয়মাবলির ফাঁস থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হবে। এই ভাবনা থেকেই ১৬১ নম্বর পুরনো বৈঠকখানা বাজারের এক বাড়িতে রাধাগোবিন্দ কলকাতার তৎকালীন সেরা কয়েক জন বাঙালি চিকিৎসককে সঙ্গে নিয়ে একটি সমিতি স্থাপন করেন। সমিতির সদস্য ছিলেন মহেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, অক্ষয়কুমার দত্ত, বিপিন মিত্র, কুমুদ ভট্টাচার্য প্রমুখ। এই সমিতিতেই গৃহীত হয় এশিয়ার প্রথম বেসরকারি মেডিক্যাল স্কুল তৈরির প্রস্তাব। ‘ক্যালকাটা স্কুল অফ মেডিসিন’-এ প্রথমে দেশীয় চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করে শিক্ষাদান চলত। ১৮৮৭ সালে অ্যালোপ্যাথি বিভাগ শুরু হয়। নাম বদলে হয় ‘ক্যালকাটা মেডিক্যাল স্কুল’। পরে বৈঠকখানা বাজার থেকে স্কুলবাড়ি স্থানান্তরিত হয় বৌবাজার স্ট্রিটে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরের বছর ক্যালকাটা মেডিক্যাল স্কুল একাধিক ঠিকানা বদল ও নাম বদলের পরে রাধাগোবিন্দের নামে নামাঙ্কিত হয়। মেডিক্যাল এডুকেশন সোসাইটি অফ বেঙ্গলের সাধারণ সভায় গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী নাম রাখা হয় ‘আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল’। যদিও নিজের নামাঙ্কিত হাসপাতাল রাধাগোবিন্দ কর দেখে যেতে পারেননি। ১৯১৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed