বাংলার অন্যতম খলনায়ক সন্দীপ! আর জি কর হাসপাতালের প্রাক্তন প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়
সন্দীপের বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকা বেড়েই চলেছে।
এই মুহূর্তে বাংলার অন্যতম খলনয়কে পরিণত হয়েছেন আর জি কর হাসপাতালের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল ডাঃ সন্দীপ ঘোষ। ডাঃ ঘোষের প্রাক্তন সহকর্মী ডাঃ আখতার আলির টালা থানায় অভিযোগ সন্দীপের বিরুদ্ধে। রসিকতা করে বলা হচ্ছে ডাঃ সন্দীপের বিরুদ্ধে আবিস্কৃত অভিযোগ আইনস্টাইনের আবিষ্কারকেও হার মানায়।
কি সেই অভিযোগের তালিকা?
১) UG স্কিল ল্যাবের পরিকাঠামো নির্মাণে একটি বিশেষ সংস্থাকে ২ কোটি ৯৭ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকার বরাত পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ।
২) কোভিডের সময় বেসরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রের থেকেও চড়া দরে হাই-ফ্লো ন্যাজাল অক্সিজিনেশন যন্ত্র ক্রয়। সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয়ের অভিযোগ।
৩) বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য পাচার- এনআরএস-আরজি করে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য উৎপাদনে একই ক্ষমতা। তবুও সেপ্টেম্বর ২০২২-ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সালের মধ্যে এনআরএসে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যর পরিমাণ ১ লক্ষ ৫৩ হাজার ৬৫০ কেজি। আরজি করে একই সময়ে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য’র মাত্রা সেখানে ৪৯ হাজার ৬০২.৪৪ কেজি।
৪) বেআইনি মৃতদেহ ব্যবহার- ইএনটি কর্মশালায় বেআইনি ভাবে মৃতদেহের ব্যবহারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে।
৫) বরাত পাইয়ে দিতেও দুর্নীতি নিয়ম না মেনে হাসপাতাল চত্বরে খাবারের স্টল, কাফে তৈরির অভিযোগ।
৬) ইউজি-পিজি কাউন্সেলিংয়ে বেনিয়ম। ২০২২ সালে সিসি ক্যামেরা, কম্পিউটার, শব্দধ্বনি ব্যবস্থা, চেয়ার, টেবিল ভাড়া নেওয়ার জন্য খরচ ১৪ লক্ষ টাকা। দাবি, ১৪ লক্ষ টাকায় এ সবই কিনে নেওয়া সম্ভব। ভাড়া বাবদ এত খরচ কেন?
৭) হাসপাতালে চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ, বেআইনি পার্কিং থেকে বিপুল টাকা আয়ের অভিযোগ।
৮) ২০২৩ সালে এনএমসি’র পরিদর্শক দলকে উপহার দেওয়ার নামে একটি নির্দিষ্ট সংস্থার কাছ থেকে সামগ্রী কেনা হয়। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বরাত পিছু ২০ শতাংশ কমিশন চাওয়ার অভিযোগ।
৯) টাকার বিনিময়ে পাশ করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ।
১০) টাকা না দিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ।
আরজি করের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ দায়েরের এক বছর পরে কেন তদন্ত করার কথা মনে হল? কলকাতা হাই কোর্ট প্রশ্ন করল রাজ্য সরকারকে। আরজি করের আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে সম্প্রতিই একটি মামলা দায়ের হয়েছে হাই কোর্টে। রাজ্যের কাছে ওই প্রশ্নের জবাব চেয়েছেন বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ। জবাব দেওয়ার জন্য রাজ্যকে ২৪ ঘণ্টা সময়ও বেঁধে দেন বিচারপতি। শুক্রবারই মামলার পরবর্তী শুনানি। আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি একাধিক অভিযোগ তুলে হাই কোর্টে দু’টি মামলা দায়ের। এর মধ্যে একটি করেছেন সন্দীপের প্রাক্তন সহকর্মী তথা আরজি করের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি। অন্য মামলাটি করেন আইনজীবী সুস্মিতা সাহা আরজি করের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার তাঁর প্রাক্তন সহকর্মী সন্দীপের বিরুদ্ধে টেন্ডারে পক্ষপাতিত্ব, চিকিৎসাজনিত জৈব বর্জ্যের বেআইনি বিক্রি, কাটমানি নেওয়া এবং অর্থের বিনিময়ে চিকিৎসকদের পাশ করানোর অভিযোগ এনেছিলেন।
বৃহস্পতিবার ছিল আর জি করের মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে শীর্ষ আদালতে দ্বিতীয় দিনের শুনানি। নির্ধারিত সময়, সাড়ে দশটা নাগাদ শুরু হয় শুনানি। কিন্তু সেই শুনানি পর্বে এমন অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় রাজ্যের আইনজীবীদের, যে প্রশ্নের কোনো উত্তর তারা দিতে পারেন নি। স্বাভাবিক কারণেই ওই মর্মান্তিক কাণ্ডে রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অনেক। বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি হয় প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে। রাজ্যের পক্ষে শওয়াল করেন আইনজীবী কপিল সিব্বল সহ মোট ১০ জন আইনজীবী। প্রথম থেকেই প্রধান বিচারপতিদের প্রশ্নের মুখে বড়ো অসহায় ছিলেন রাজ্যের প্রধান আইনজীবী কপিল সিব্বল। রাজ্য সরকারের আইনজীবীর দেওয়া টাইমলাইন নিয়ে ছত্রে ছত্রে প্রশ্ন তুলল সর্বোচ্চ আদালত। পড়ুয়া-চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার থেকে শুরু করে, ময়নাতদন্ত এবং FIR দায়ের নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালতের প্রশ্ন, ‘FIR দায়েরের আগে কী করে ময়নাতদন্ত হল?’ এদিন শীর্ষ আদালত প্রশ্ন করে, ‘সকাল সাড়ে ১০টায় অভিযোগ নথিভুক্ত করা হয়, সন্ধে সাড়ে ৬টা-সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ময়নাতদন্ত। এরপর রাত সাড়ে ১১টায় কেন অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হল? অপরাধের জায়গা সুরক্ষিত করতেই বা এত দেরি হল কেন?’ স্বাভাবিক কারণেই বিব্রত বোধ করেন সিব্বল। তিনি উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেন।
আদালত স্পষ্ট করেই বলেন, তথ্য প্রমাণ সংরক্ষণে প্রচুর গাফিলতি ছিল রাজ্যের। খুনের জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ লোপাট করার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দেশের শীর্ষ আদালত। রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বলের উদ্দেশে সুপ্রিম কোর্ট মন্তব্য করে, ‘পরের বার শুনানির সময় যখন আসবেন, তখন একজন দায়িত্বশীল পুলিশ অফিসারকে নিয়ে আসবেন। কেননা আমরা এখনও এই প্রশ্নের উত্তর পাইনি যে, কখন অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়েছে।’ এর পরেই এক বিচারপতি বলেন, রাজ্যের আইনজীবীর কথায় অনেক ফাঁক রয়ে গেছে। তাই সব প্রশ্নের উত্তর উনি দিতে পারছেন না। যদিও রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল একাধিক যুক্তি খাড়া করেন, যদিও তা ধোপে টেকেনি সেঅর্থে। আর এই ইস্যুতেই তাঁর সঙ্গে সলিসেটর জেনারেল তুষার মেহেতার একাধিক প্রেক্ষিতে বাগবিতণ্ডা হতে দেখা যায়। সেই সময় কপিল সিব্বল একটু হেসে ওঠেন। সেই সময় সময়ে রেগেই সলিসেটর জেনারেলকে রাজ্যের আইনজীবীর উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘দয়া করে হাসবেন না। একটা মেয়ের প্রাণ গিয়েছে।’ স্বাভাবিক কারণেই কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায় সম্পূর্ণ আদালত।
আদালতে শুনানি চলাকালীন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় গোটা ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, এই বিষয়ে কি রাজ্য কিছু গোপন করতে চাইছে? তা নাহলে কেন সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর তারা দিতে পারছে না। কেন প্রথমে আত্নাহত্যা বলা হলো? কেন এতো দেরিতে FIR হলো? কেন ১৪ আগস্ট ৫/৬ হাজার দূরবৃত্ত ওখানে ভাঙচুর করার সাহস পেলো? কি উদ্দেশ্যে তারা ভাঙচুর করলো? কেন পুলিশ তাদের আটকাতে পারলো না? এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে খুবই বিব্রত হয়ে ওঠেন রাজ্যের আইনজীনীর দল