থানকুনি পাতা ও জিরা বহুরোগ বিনাশক, হরেক রোগের উপশম এই সবুজ উপাদানের
থানকুনি পাতার বৈজ্ঞানিক নাম সেনটেলা এশিয়াটিকা।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র বহুদিন আগেই থানকুনি পাতার অশেষ গুণের কথা বলেছেন। আমরা তেমনভাবে গুরুত্ব দিইনা এই থানকুনি পাতাকে। সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে এই পাতার অশেষ গুণ। পুকুরপাড় বা জলাশয়ে হামেশাই দেখা মেলে। কথায় বলে, পেট ভালো থাকলে মনও ফুরফুরে থাকে। চিকিত্সকরাই বলছেন, থানকুনি পাতার এমন ভেষজ গুণ রয়েছে, মিয়মিত খেতে পারলে, পেটের অসুখে কোনও দিনও ভুগতে হবে না। শরীর-স্বাস্থ্য তো সতেজ থাকেই, ছোট থেকে খাওয়াতে পারলে বুদ্ধিরও বিকাশ হয়।
১) পেটের রোগে – পেটের রোগ নির্মূল করতে থানকুনির বিকল্প নেই। নিয়মিত খেলে যে কোনও পেটের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। একই সঙ্গে পেট নিয়ে কোনও দিনও সমস্যায় ভুগতে হয় না। Asiaticoside নামে একটি উপাদান রয়েছে থানকুনি পাতায়, যা হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়। সেই সঙ্গে স্টমাক আলসারের মতো রোগের প্রকোপ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
২) ত্বকের সতেজতা – শুধু পেটই নয়, আলসার, এগজিমা, হাঁপানি-সহ নানা চর্মরোগ সেরে যায় থানকুনি পাতা খেলে। ত্বকেও জেল্লা বাড়ে। ত্বকের ওজ্জ্বল্য বাড়ায় থানকুনি পাতা ৷ প্রতিদিন থানকুনি পাতা খাওয়ার অভ্যাস করলে বড় বড় রোগের থেকে জয় পাওয়া সম্ভব ৷ অ্যাংজাইটি এবং মানসিক অবসাদের প্রকোপ কমায়।
৩) মস্তিষ্কের বিকাশ – থানকুনি পাতায় থাকে Bacoside A ও B। Bacoside B মস্তিষ্কের কোষ গঠনে সাহায্য করে ও রক্ত চলাচল বাড়ায়। থানকুনি পাতা নিয়মিত খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়া শুরু করলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং Pentacyclic Triterpenes নামক একটি উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যে কারণে ব্রেন সেলের ক্ষমতা এতটাই বেড়ে যায় যে স্মৃতিশক্তির উন্নতি তো ঘটেই, সেই সঙ্গে বুদ্ধির ধারও বাড়ে চোখে পড়ার মতো।
৪) অনিদ্রা দূর করে – রাতে কি ঠিক মতো ঘুম হয় না? তা হলে আজ থেকেই খাওয়া শুরু করুন থানকুনি পাতা। দেখবেন, উপকার (মিলবে একেবারে হাতে-নাতে। কারণ, এতে রয়েছে একাধিক অ্যান্টিঅক্সিডান্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা স্ট্রেস লেভেল কমায়। সঙ্গে নার্ভাস সিস্টেমকে শান্ত রাখে।
৫) শরীরকে বিষমুক্ত করে – প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠা মাত্র ২ চামচ থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে যদি ১ চামচ মধু মিশিয়ে খাওয়া যায়, তা হলে রক্তে মিশে থাকা টক্সিক উপাদানগুলি প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। ফলে শরীরের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আর থাকে না।
হাজার বছরের আয়ুর্বেদ শাস্ত্র ‘জিরা’কে মানব দেহের মহৌষধ বলে আসছে। আধুনিক পুষ্টি বিজ্ঞানের গবেষণায় তার সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে। জিরায় পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন বিদ্যমান, যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং রোগপ্রতিরোধে বিশেষ কার্যকর। জিরায় আয়রনের পাশাপাশি ভিটামিন-এ ও সি আছে। জিরায় আয়রন বিদ্যমান থাকায় হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধিতে রক্তশূন্যতা দূর করে। এছাড়াও জিরায় আছে এমন অনেক উপাদান যা মানব দেহেকে বহুদিক থেকে সুস্থ রাখে। জিরার উপকারিতা নিয়ে পুষ্টি বিশারদেরা বলছেন –
১) ওজন কমাতে সাহায্য করে।
২) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৩) রক্ত শূন্যতা দূর করে।
৪) অম্বল বিনাশ করে।
৫) কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করে।
৬) গ্যাস্ট্রিক নিরাময়ে সাহায্য করে।
৭) বমিভাব দূরীকরণে উপকারী।
৮) দেহের জলশূন্যতা দূর করে।
৯) অনিদ্রা দূর করে।
১০) স্মৃতিশক্তি উন্নতি করে।
এছাড়াও জিরাতে আছে প্রচুর বিবিধ উপকার। যেমন –
শরীরের জ্বালাপোড়া দূর করে,বার্ধক্য রোধ ও ব্রণ নিরাময়ে জিরা বিশেষ উপকারী।
জিরা ব্যবহারের নিয়ম।
রান্নায় যেভাবে জিরা ফোড়ন দেওয়া হয়,তা ভালো। তবে প্রত্যক্ষ উপকার পাওয়ার জন্য ২ ভাবে জিরা-জল বানাতে পারেন।
১) রাতে ১ গ্লাস জলে ১ চামচ জিরা ভিজিয়ে রেখে সেই জল সকালে খেয়ে নেওয়া।
২) জিরার আরো ভালো উপকার পেতে গেলে ১ লিটার জলে ২ চামচ জিরা গরম জলে ১০ মিনিট ফুটিয়ে ঠান্ডা করে সকালে ও বিকেলে ওই জল খেয়ে নিন।
হাতেনাতে উপকার বুঝতে পারবেন।