October 7, 2024

‘পুলিশ দুর্নীতিগ্রস্ত, মানুষের বিশ্বাস হারিয়েছে রাজ্য সরকার’হাসপাতালের নিরাপত্তা কাঠামো ঢেলে সাজাতে হবে! আরজি করে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের!

0

আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে রাজভবনে একটি কন্ট্রোল রুমও খোলা হয়েছে। আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে সাধারণ মানুষ ০৩৩২২০০১৬৪১ এবং ৯২৮৯০১০৬৮২— এই দু’টি নম্বরে ফোন করে মতামত জানাতে পারবেন। কন্ট্রোল রুম থেকে মঙ্গলবার সকালে প্রথম ফোনটি করেন রাজ্যপাল স্বয়ং নিহত তরুণীর বাবার সঙ্গে কথা বলেন।

‘রাজ্য সরকারের প্রতি আস্থা হারিয়েছে বাংলার মানুষ’। কলকাতা পুলিশ ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ এবং ‘রাজনৈতিক মদতপুষ্ট’। মন্তব্য করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের আরজি কর-কাণ্ডের পর সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ, ‘‘এই ঘটনা সমাজের কাছে সবচেয়ে লজ্জাজনক মুহূর্ত। মুখ্যমন্ত্রীর এই সব ভাষণ নানা অলঙ্কারে খচিত। তবে এই ঘটনায় তাঁর সামগ্রিক অবস্থান কী? শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ শুনে দেশ স্বস্তি পেল। এই মুহূর্তে বাংলার অবস্থা উদ্বেগজনক। ছাত্ররা সরকারের উপর বিশ্বাস হারিয়েছেন, যুবকেরা ভীতসন্ত্রস্ত, আর মহিলারা রয়েছেন হতাশায়। নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়া সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠছে সরকারের ভূমিকা নিয়েই। সাম্প্রতিক ঘটনাটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সরকারের গাফিলতি।’’

আরজি কর-কাণ্ডের অভিঘাত। দেশ জুড়ে হাসপাতালগুলির নিরাপত্তা কাঠোমা ঢেলে সাজানোর নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের। সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের মামলা শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকের নিরাপত্তায় টাস্ক ফোর্স গঠন করার প্রস্তাব দেয়। টাস্ক ফোর্সে থাকবেন ৯ জন চিকিৎসক। টাস্ক ফোর্স মূলত দু’টি বিষয়ে কাজ করবে। এক, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকের উপর হিংসা এবং লিঙ্গগত বৈষম্য দূর করা। দুই, হাসপাতালের চিকিৎসক, ইন্টার্ন, রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের নিরাপদ কাজের পরিবেশ তৈরি করার জন্য একটি প্রোটোকল বা নিয়মবিধি তৈরি করা। সুপ্রিম কোর্ট টাস্ক ফোর্সকে তিন সপ্তাহের মধ্যে অন্তর্বর্তী রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ। চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দিতে হবে ৬০ দিনের মধ্যে। হাসপাতালের নিরাপত্তা, পরিকাঠামো উন্নয়ন, সঙ্কটজনক পরিস্থিতি মোকাবিলায় কর্মী নিয়োগের বিষয়টি টাস্ক ফোর্স তদারকি করবে। কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের উপর যৌন নির্যাতন রুখতে যে আইন, তা সরকারি হাসপাতালগুলির পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলিতেও কার্যকরী ব্যবস্থা খতিয়ে দেখবেন টাস্ক ফোর্সের সদস্যেরা। চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকের নিরাপত্তায় একটি হেল্পলাইন নম্বর চালু করারও প্রস্তাব শীর্ষ আদালতের। হাসপাতালের সব জায়গায় পর্যাপ্ত আলো এবং সিসি ক্যামেরার নজরদারি রয়েছে কি না, ভিড় আটকাতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখবে টাস্ক ফোর্স। চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত পরিবহণ ব্যবস্থা চালু রাখা যায় কি না, তা-ও টাস্ক ফোর্সের বিবেচনায় থাকছে। রোগী বাদ দিয়ে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যার কেউ যাতে হাসপাতালে ঢুকতে না পারে, হাসপাতালগুলিকে তা নিশ্চিত করার কথা জানাবে টাস্ক ফোর্স। নয় সদস্যবিশিষ্ট টাস্ক ফোর্সে রয়েছেন ১) শল্যচিকিৎসক ভাইস অ্যাডমিরাল আরকে সারিয়ান, ২) এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ন্যাশনাল গ্যাস্ট্রোলজির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডক্টর রেড্ডি, ৩) দিল্লি এমসের ডিরেক্টর এম শ্রীবাস, ৪) বেঙ্গালুরু ‘নিমহান’-এর চিকিৎসক প্রতিমা মূর্তি, ৫) জোধপুর এমসের ডিরেক্টর ডক্টর পুরী, ৬) গঙ্গারাম হাসপাতালের পরিচালন কমিটির সদস্য ডক্টর রাভাত, ৭) পণ্ডিত বিডি শর্মা কলেজের উপাচার্য অনিতা সাক্সেনা, ৮) ডক্টর পল্লবী এবং ৯) ডক্টর পদ্ম শ্রীবাস্তব।

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের নিরাপত্তা দায়িত্বে এ বার কেন্দ্রীয় বাহিনী। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, ‘‘আমরা আরজি কর হাসপাতালে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করছি।’’ সিআইএসএফ বাহিনী, বিমানবন্দর, কয়লা খনির মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে। ভোটের সময়ও। আরজি করে সিআইএসএফ মোতায়েনের নির্দেশ দিয়ে ওই হাসপাতালের নিরাপত্তাকেও সুপ্রিম কোর্ট তেমন গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে উন্নীত করল। আন্দোলনরত চিকিৎসকদের এ বার কাজে ফেরার অনুরোধ করলেন প্রধান বিচারপতি। আরজি কর মামলার শুনানিতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ে পুলিশ-প্রশাসন। শহর জুড়ে মেয়েদের ‘রাত দখল’ কর্মসূচি চলাকালীন এক দল দুষ্কৃতী আরজি করে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভাঙচুর করা হয়। সেই ঘটনার পর নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। শুনানিতে বিষয়টি উত্থাপন করেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। উদ্বেগপ্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, “আমরা খুবই চিন্তিত। প্রতিবাদকারীদের বাধা দিতে বলপ্রয়োগ করে রাজ্য। আমরা কিছুতেই বুঝতে পারছি না, স্বাধীনতা দিবসের দিন রাজ্য কী ভাবে হাসপাতাল ভাঙচুর করতে দিল?” পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভপ্রকাশও করেন প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘পুলিশ নিরাপত্তা দিতে না পেরে পালিয়ে গিয়েছিল।’’

আরজি কর মামলার প্রথম দিনের শুনানিতেই সুপ্রিম কোর্টে প্রশ্নের মুখে কলকাতা পুলিশের ভূমিকা এবং আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ভূমিকা। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ কেন প্রথমে এফআইআর করেননি, সে নিয়ে উষ্মাপ্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, “ঘটনাটি যে খুন, তা স্পষ্ট।” সে ক্ষেত্রে প্রথম এফআইআরে খুনের কথা উল্লেখ ছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন করেন তিনি। আরজি করের তৎকালীন অধ্যক্ষ কী করছিলেন, তা-ও জানতে চান প্রধান বিচারপতি। রাজ্যের আইনজীবী জানান, ঘটনার দিন (শুক্রবার) বেলা ১১টা ৪৫মিনিটে মৃতার বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে প্রথম এফআইআর করা হয়েছিল। পরে অধ্যক্ষ অভিযোগ জানান। এ কথা শুনেই প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, সে ক্ষেত্রে অধ্যক্ষ কেন প্রথমে অভিযোগ জানাননি? যেহেতু ঘটনার সময় মৃতার মা-বাবা সেখানে উপস্থিত ছিলেন না, তাই এফআইআর দায়ের করার দায়িত্ব আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের উপরেই বর্তায়। প্রধান বিচারপতি বলেন, “বিকালে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয় খুন। এফআইআর দায়ের হয়েছিল বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে। তার আগে কী করছিলেন অধ্যক্ষ ও কলেজ কর্তৃপক্ষ?”
প্রশ্নের মুখে রাজ্য প্রশাসন।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed