কলকাতায় একজোট তিন প্রধান ডুরান্ড সেমিফাইনাল ফাইনাল ফেরাতে মরিয়া
ডার্বি বাতিল। কোয়ার্টার ফাইনাল চলে গিয়েছে শিলং এবং জামশেদপুরে। এবার ডুরান্ড কাপের সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল কলকাতায় ফেরাতে একজোট তিন প্রধান মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল এবং মহমেডান। মঙ্গলবার সন্ধেয় ঐক্যবদ্ধ হয়ে একসঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন তিন প্রধানের কর্তারা। কলকাতার একশো বছরের ক্লাবের ইতিহাসে যা আগে কখনও হয়নি। ছিলেন তিন সচিব দেবাশিস দত্ত, রূপক সাহা এবং ইসতিয়াক আহমেদ। এছাড়াও ছিলেন ইস্টবেঙ্গলের শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার। সমর্থকরা যেমন একজোট হয়ে প্রতিবাদে নেমেছিল, তেমনই তাঁরাও একত্রিত হয়ে কলকাতায় খেলা ফেরাতে নেমেছে। তিন প্রধানের কর্তাদের দাবি, আন্দোলন যেমন চলছে চলুক, তাঁরাও ন্যায় চায়। তবে খেলা কলকাতাতেই হোক। সমর্থকরা যেন ফুটবল থেকে বঞ্চিত না হয়। ডুরান্ড কমিটি এবং প্রশাসনকে তাঁদের এই আর্জি জানিয়েছে তিন ক্লাবের কর্তারা। ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে অনুরোধ করা হয়েছে। প্রশাসনিক জটিলতা এবং নিরাপত্তার কারণে ডার্বি বাতিল করতে বাধ্য হলেও, ডুরান্ড কাপের সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল কলকাতায় করার চেষ্টা চলছে।
রবিবার সমর্থকদের মিছিলে যে সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল, তাতে অনায়াসেই কি ডার্বি আয়োজন করা যেত? এই প্রশ্নের উত্তরে বাগান সচিব দেবাশিস দত্ত বলেন, ‘আমরা সবাই বিচার চাইছি। ডার্বি আয়োজন করার পুলিশের নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। পুলিশ মনে করেছে এই পরিস্থিতিতে ডার্বি করা সম্ভব নয়। সমালোচনা যে কেউ করতেই পারে। তবে পুলিশের নিজস্ব আইবি টিম থাকে। ওরা সেখান থেকে নিশ্চয়ই কোনও তথ্য পেয়েছিল। কীভাবে ডার্বি আয়োজন করা যায় সেটা পুলিশই জানবে। আমাদের সমর্থকরা দুটো জিনিস চেয়েছে। এক, আরজি কর কাণ্ডে জাস্টিস। দ্বিতীয়, কলকাতায় খেলা ফিরুক। আমরাও চাই তাড়াতাড়ি তদন্ত হোক। তবে কলকাতায় ডুরান্ড চলছে। খেলা অন্য রাজ্যে চলে যাক আমরা চাই না। তাই ক্রীড়ামন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি। ডুরান্ড কমিটিকেও আমাদের আর্জি জানিয়েছি।’
রবিবার মিছিলে সামিল হয় ইস্ট-মোহনের সমর্থকরা। মিছিলে লাঠি চার্জ হয়। একাধিক সমর্থককে আটক করা হয়। কিন্তু দেখা মেলেনি দুই প্রধানের কর্তাদের। বরং একা দাঁড়িয়ে থেকে পরিস্থিতি সামলান ফেডারেশন সভাপতি কল্যাণ চৌবে। যারা উঠতে বসতে দাবি করেন, মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, মহমেডান সমর্থকদের ক্লাব, তাঁরা কেন এই সময় সমর্থকদের পাশে ছিলেন না? এই প্রসঙ্গে দেবব্রত সরকার বলেন, ‘খেলা খেলার জায়গায় হোক। সেই দাবিতেই এখানে এসেছি। সবার সহযোগিতা চাই। বাকিটা যেরকমভাবে চলছে, চলবে। আমরা সবাই চাই দ্রুত দোষীর শাস্তি হোক। সেদিন ফেডারেশন সভাপতি ছিল। উনি সামলে নিয়েছেন। তাই আমাদের যাওয়ার প্রয়োজন পড়েনি। আমরা সমর্থকদের পাশে দাঁড়াব। কোনও সমর্থক সহযোগিতা চাইলে তাঁকে সাহায্য করব। আমরা সরকারের বিচার করতে আসিনি। সরকার চালানো আমাদের কাজ নয়। আমি ম্যাচটা ২০ তারিখ শিফট করতে বলেছিলাম। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি।’
লাঠি চার্জের পক্ষে নয় কলকাতার তিন প্রধানের কর্তারা। গত দু’দিন ধরে ফুটবল মাঠেই আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ চলছে। গোল করার পর ব্যানার, জার্সির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানায় মহমেডান এবং ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা। এই বিষয়ে দুই ক্লাব দুই মেরুতে। ইস্টবেঙ্গলের কর্তা দেবব্রত সরকার বলেন, ‘ফুটবলাররা আমদের অনুমতি নিয়ে করেনি। তবে এই নিয়ে ওদের কিছু বলাও যাবে না। সবাই স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক। যে কেউ প্রতিবাদ করতে পারে। প্রতিষ্ঠানের দায়বদ্ধতা থাকে না। ওদের মনে হয়েছে প্রতিবাদ করা উচিত, ওরা করেছে।’ এদিকে মহমেডান সচিব ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘আমাদের অনুমতি ছাড়াই প্রতিবাদ করেছে ফুটবলাররা। প্লেয়ারদের অধিকার আছে। তবে যে জায়গাতে করেছে, সেটা করা উচিত হয়নি।’ আরজি কর কাণ্ডে ফাঁসির দাবি চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তাঁর সঙ্গে সুর মেলান মহমেডান সচিব।