February 18, 2025

খুন এবং ধর্ষণ অন্য কোথাও,‘ক্রাইম স্পট’ সাজানো, উত্তর খুঁজছে সিবিআই!‌ সেমিনার রুমে অন্য ভাল শয্যা থাকা সত্ত্বেও কেউ কেন পোডিয়ামে, ধুলো ভরা মেঝেতে শুতে যাবেন?

0
CBI

সেমিনার রুম-এ অন্য ভাল শয্যা থাকা সত্ত্বেও কেউ কেন পোডিয়ামে, ধুলো ভরা মেঝেতে শুতে যাবেন? শুলেও পোডিয়ামে একেবারে দেওয়ালের গা ঘেঁষে কেন বিছানা পাতবেন? সেখানে শুতে সমস্যা হওয়ার কথা! সমস্যা হবে পাশ ফিরতেও! তরুণী যে বিছানায় ছিলেন, তার নীচ দিয়েই গিয়েছে বিদ্যুতের তার। যা যুক্ত হয়েছে একটি সুইচ বোর্ডে। সেটিও পোডিয়ামের উপরেই তরুণীর শয্যার ঠিক পাশে পড়ে। কেউ কি জেনেবুঝে বিদ্যুতের তারের উপর বিছানা পাতবেন? প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে সিবিআই।

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসককে খুন এবং ধর্ষণ করা হয়েছে অন্য কোনও স্থানে? ঘটনার তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই গোয়েন্দারাও সংশয়ী। তরুণীকে ডাকতে এসে এক জন নাকি ফিরে গিয়েছিলেন, তরুণী ঘুমোচ্ছেন মনে করে। প্রশ্ন উঠছে, যে অবস্থায় তরুণীর দেহ উদ্ধার হওয়া নিয়ে। সেমিনার রুমে পোডিয়ামের উপর পড়ে থাকা তরুণীর ময়না তদন্তের রিপোর্টে অনেক আঘাত তরুণীর শরীরে মিলেছে। এমন কাউকে দেখে, তিনি ঘুমিয়ে রয়েছেন মনে হতে পারে? এই বক্তব্যের আড়ালে অন্য কোনও সত্য ঢাকার চেষ্টা হচ্ছে না তো, এখানেও প্রশ্ন?‌ সেমিনার রুম-এ দরজা থেকে ঢুকেই সোজাসুজি সাদা বোর্ড টাঙানো। তার নীচে লাল পোডিয়াম। সামনে পর পর চেয়ার পাতা। পোডিয়ামের উপরেই সাদা বোর্ডের নীচে আলোয় এক্স-রে রিপোর্ট ধরে দেখার বাক্স। সেই বাক্সের ধার ঘেঁষেই নীল কাপড়ে ঢাকা শয্যা মেঝেতে পাতা। তার পাশেই উঁচু কাঠের বেঞ্চ। এই দুইয়ের মাঝখানেই পড়ে ছিল মৃতদেহ। দু’পা ছড়ানো ছিল দু’দিকে। একটি পা শয্যার বাইরে। লাল রঙের একটি কম্বল আলগোছে ফেলা ছিল তরুণীর গায়ে। মাথার চুল ছিল খোলা। উর্ধ্বাঙ্গের পোশাক ছেঁড়া। নিম্নাঙ্গের পোশাক পড়ে ছিল পোডিয়ামের মেঝেতে। এক জোড়া জুতো পড়ে ছিল মৃতদেহের পাশেই।

মৃতদেহের একটি হাত এমন ভাবে কপালের উপর রাখা ছিল, যা দূর থেকে এক ঝলক দেখলে মনে হতে পারে, কেউ ঘুমিয়ে আছেন। তাতেই নাকি বুঝতে ভুল হয়েছিল! কিন্তু এই বয়ান ঘিরেই এখন নানা প্রশ্ন উঠছে। কারণ, সেমিনার রুমের দরজা থেকে পোডিয়াম যে দূরত্বে সেখান পর্যন্ত না পৌঁছে কার্যত কাউকে ডাকা সম্ভব নয়। কাছে গিয়ে ডাকলে ওই অবস্থায় দেখে মনে হওয়ার কথা নয় যে ঘুমাচ্ছেন। প্রশ্ন উঠছে, যিনি ডাকতে এসেছিলেন, তিনি কি দরজায় দাঁড়িয়ে এক বার দেখেই ফিরে গিয়েছিলেন? পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘুমোচ্ছেন ভেবে ফিরে যাওয়া চিকিৎসক নাকি দাবি করেছিলেন, মৃতদেহের সামনেই যেহেতু পোডিয়ামের উপরে বেঞ্চটা রাখা ছিল, তাই তিনি বেঞ্চের আড়াল থেকে শুধু মৃতদেহের কপালের উপরে রাখা হাতটাই দেখেছিলেন। প্রশ্ন উঠছে, পোডিয়ামের উপরে বেঞ্চটি কি তবে ইচ্ছে করেই এমন ভাবে রাখা হয়েছিল, যাতে দরজা থেকে মৃতদেহ কিছুটা আড়াল করা যায়? অথবা যিনি দেখেছেন তিনি না দেখার ভান করে অভিনয় করেছেন?‌ এই প্রশ্ন পুলিশি তদন্তে নেই কেন?

ডাক্তারদের একাংশের দাবি, ওই ভাবে কপালে হাত রাখা অবস্থায় কারও মৃত্যু হলে বুঝতে হবে ঘুমের মধ্যেই মারা গিয়েছেন। মৃত্যুর সময়ে কিছু টের পাননি। তা হলে মৃতদেহে এত আঘাতের চিহ্ন থাকার কথা নয়। সে ক্ষেত্রে ধর্ষণের তত্ত্বও দাঁড়ায় না। কারণ, কাউকে ধর্ষণ করা হলে তিনি প্রতিরোধ করবেনই। এ ক্ষেত্রেও যে প্রতিরোধের চিহ্ন মিলেছে ময়না তদন্তের রিপোর্টে। তা হলে কি খুনের পর পরই তরুণীর হাত ওই ভাবে রেখে দেওয়া হয়েছিল? অন্য কোথাও খুন-ধর্ষণ করে মৃতদেহ সেমিনার রুমে রেখে গোটাটাই সাজিয়ে ফেলা হয়নি তো! একাধিক প্রশ্ন উঠে আসছে বারাবার।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed