ডুয়ার্সের ‘সামসিং’, প্রকৃতি যেখানে কথা বলে
ডুয়ার্স দাঁড়িয়ে আছে তার অনন্ত সৌন্দর্য নিয়ে। এতেই বাঙালির মন উড়ুউড়ু। কিন্তু মনে খুঁতখুঁতানি। বর্ষায় আবার পাহাড়ে কেউ যায় নাকি? ধস নামে যখন তখন, জঙ্গল সাফারিও বন্ধ থাকে। আসলে গরম কিংবা পুজোর ছুটিতে পাহাড়ে ঘুরতে যাওয়া বাঙালিদের অনেকেই এই সমস্ত কারণেই জুন-জুলাইতে পাহাড়ের রূপ প্রত্যক্ষ করেননি। তাঁদের জন্য বর্ষায় ঘুরতে যাওয়ার আদর্শ ঠিকানা হল ডুয়ার্স। আজ আপনাদের ডুয়ার্সের এমন একটি জায়গার কথা বলব, যেখানে পাহাড়ের কোলে হোমস্টে কিংবা হোটেলে বসে অবিশ্রাম জলধারায় ধুয়ে যাওয়া জঙ্গলের রূপ চাক্ষুষ করার সুযোগ মিলবে। এমন নীরব নৈশব্দিক সৌন্দর্য আপনি আগে কখনো দেখে নি।
আমরা বলছি সামসিং গ্রামের কথা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২,৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত সামসিং হল ঘন জঙ্গল, নুড়ি পাথরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পাহাড়ি নদী, আর চা-বাগান পরিবেষ্টিত একটি ছোট্ট গ্রাম। মূলত শিমুল আর শাল গাছের জঙ্গলে ঘেরা সামসিংয়ে রয়েছে অজস্র প্রজাতির পাখি। তাই পক্ষীপ্রেমীদের জন্য এই জায়গা একেবারে আদর্শ। গ্রামে যাওয়ার রাস্তায় দেখা মিলবে দিগন্তবিস্তৃত চা বাগানের। বর্ষায় গ্রামটিকে সারাক্ষণ ঘিরে থাকে মেঘ আর কুয়াশার আস্তরণ। বিকেলবেলা দিনের আলো থাকতে থাকতেই বেরিয়ে পড়ুন। ভেজা পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে কখন যে ২ কিলোমিটার পেরিয়ে যাবেন, বুঝতেই পারবেন না। তখনই চোখের সামনে দেখতে পাবেন সুন্দরী মূর্তি নদীকে। বর্ষায় অন্য রূপ ধারণ করে এই আপাত শান্ত নদী। পাশেই রয়েছে মূর্তি গ্রাম। নদীর পার ঘেঁষে আরও কিছুটা হাঁটলে পড়বে রকি আইল্যান্ড। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি এক বছরের আনন্দের রসদ মনে ভরে আপনি ফিরে আসবেন বাড়িতে।
যাওয়া – একাধিক পথে আপনি সামসিং যেতে পারেন। শিলিগুড়ি থেকে সামসিংয়ের দূরত্ব ৮১ কিলোমিটার। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নেমে ভাড়ার গাড়িতে শিলিগুড়ি হয়ে যেতে হবে এই গ্রামে। বাসও রয়েছে। এছাড়া নিউ মাল স্টেশন থেকে সামসিং যাওয়া সবচেয়ে সহজ। এখান থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে সামসিং যাওয়ার জন্য ট্যাক্সি এবং অন্যান্য ভাড়ার গাড়ি পাওয়া যায়।
থাকা – এখানে সরকারি বিভিন্ন লজ রয়েছে। এছাড়া অজস্র হোটেল এবং হোমস্টে রয়েছে। থাকা খাওয়া মিলিয়ে হোমস্টের ভাড়া শুরু হয় মাথাপিছু মোটামুটি ১২০০ টাকা থেকে।