February 17, 2025

মাথা, গলা, হাত, যৌনাঙ্গে গভীর ক্ষত ছিল, ফুসফুসে রক্তক্ষরণ, নিহত চিকিৎসকের কোনও হাড়, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট

0
Post Mortem

দুর্নীতির পর্দা ফাঁস ঠেকাতেই কি নৃশংস এই ঘটনা আরজি করে? বিস্ফোরক প্রাক্তন কর্তা

তরুণী চিকিৎসককে গলা টিপে, নাক-মুখ চেপে ধরে খুন করা হয়। ফরেন্সিক মেডিসিনের বিশেষজ্ঞদের কথায়, এমন নৃশংস কাজ করতে গেলে একাধিক ব্যক্তির প্রয়োজন। কারও একার পক্ষে একইসঙ্গে গলা টিপে, নাকমুখ চেপে ধরে খুন করা সম্ভব নয়। হাড় ভাঙার কোনও কথা ময়নাতদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ নেই বলে জানা যাচ্ছে। এদিকে এই পিএম রিপোর্টে বলা হয়েছে, নিহতের শরীর ও গোপনাঙ্গে সব আঘাতই ছিল মৃত্যুর আগে। ভিসেরা, রক্ত ও অন্যান্য সংগৃহীত নমুনা বিশ্লেষণের জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এদিকে রিপোর্ট অনুযায়ী, নির্যাতিতার যৌনাঙ্গের ওজন ১৫১ গ্রাম ছিল। মৃত চিকিৎসকের শরীরের কোনও হারই ভাঙেনি। ময়নাতদন্তে বলা হয়েছে, নির্যাতিতার শরীরে ১৪ জায়গায় ক্ষত ছিল। রিপোর্ট অনুযায়ী, মাথা, গলা, হাত, যৌনাঙ্গে গভীর ক্ষত ছিল নিহত চিকিৎসকের।

ময়নাতদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, নির্যাতিতার ওপরে যৌন হেনস্থা হয়েছে, তা স্পষ্ট। জোর করে যৌনাঙ্গে ‘পেনিট্রেশন’ করা হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে। যৌনাঙ্গে সাদা ঘন তরল পদার্থ মিলেছে। এদিকে নির্যাতিতার নাক, ডান থুতনি, বাঁহাত, কাঁধে গভীর আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। ফুসফুসে রক্তক্ষরণ হয়েছিল বলে উল্লেখ আছে রিপোর্টে। এদিকে নির্যাতিতার শরীরের বহু জায়গায় রক্ত জমাট বেঁধেছিল বলে বলা হয়েছে। দেশের ফরেনসিক মেডিসিনের প্রবীণ অধ্যাপকের কথায়, খুন করার আগে বা পরে ধর্ষণের শিকার হতেই পারে। কারণ মৃত্যুর খানিক পরেও শরীর গরম থাকে। নির্যাতিতার শরীরে জমে থাকা বীর্যের ডিএনএ পরীক্ষা করলেই জানা যাবে গণধর্ষণ না একই ব্যক্তি এই ঘৃণ্য অপরাধের সঙ্গে যুক্ত।

আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের যোগ থাকার অভিযোগ উঠেছে প্রথম থেকেই। সন্দীপের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় সামনে এসেছে। সন্দীপের প্রাক্তন সহকর্মী আখতার আলি মুখ খুলেছেন। এবার নতুন করে সামনে এসেছে তার ১ বছর পুরনো অভিযোগপত্র। আখতার আলি কী কী অভিযোগ করেছিলেন? বড় অঙ্কের বরাতকে ছোট ছোট বরাতে ভেঙে অনলাইন টেন্ডার এড়িয়ে পছন্দের সংস্থাকে বরাত দিতেন সন্দীপ ঘোষ। খারাপ গুণমানের ওষুধের অর্ডার দিয়ে সেই সংস্থাকে লাভবান করতেন এবং পরে সেই সংস্থা থেকে কমিশন নেওয়া হত। এদিকে কোভিড ফান্ড ব্যবহার করে চেয়ার-সোফা-আসবাব কেনা হত বলেও অভিযোগ। পাশাপাশি হাসপাতালের চিকিৎসা-বর্জ্য মোটা টাকার বিনিময়ে নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে পাচার করে দেওয়া হত বলে দাবি।

২০২৩-এর ১৪ জুলাই রাজ্য ভিজিলেন্স কমিশনে চিঠি দিয়েছিলেন আরজি করের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি। আখতার আলির কথায়, ‘আমি অভিযোগ করার পরে ভিজিলেন্স কমিশন কয়েক বার আমাকে ডেকেছিল। এরপর আমি মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে বদলি হয়ে যাই। এদিকে সন্দীপ ঘোষও বদলি হয়েছিলেন মুর্শিদাবাদে। তবে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ওঁর বদলির অর্ডার বাতিল হয়ে যায়।’ আখতারের দাবি, সন্দীপের হরেক দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি সরব হওয়ার পর তিনি প্রাণনাশের আশঙ্কাও করেছিলেন একসময়ে। তখন তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হন। তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর নেপথ্যেও ‘সদ্যপ্রাক্তন অধ্যক্ষ সব জানেন বলেই আমার বিশ্বাস। আশা করি, সিবিআই তাঁকে জেরা করলে অনেক তথ্য জানতে পারবে।’ হাসপাতাল বা কলেজের অর্থ খরচ হত অ‌্যাকাডেমিক বিল্ডিংয়ের অঙ্গুলিহেলনে। ওয়েস্ট বেঙ্গল অর্থোপেডিক অ‌্যাসোসিয়েশন বিবৃতি জারি করে বলেছে, আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় নির্দোষ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তাঁর সদস‌্যপদ রদ করা হচ্ছে। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে নিজের অবস্থান জানাতে হবে ডা. সন্দীপ ঘোষকে। গত বছর যক্ষ্মা (T.B) পরীক্ষার কিটের গুণগত মান নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছিল।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed