জনরোষের জন্মের কারণ খুঁজতে মরিয়া শাসক? সর্বস্তরে ক্রমাগত চুরি, দুর্নীতি, প্রতারণার শিকার হয়েই ক্ষুব্ধ নাগরিক! রাজ্যবাসীর বার্তা
হরেক প্রশ্ন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। গণ-ক্ষোভের ব্যাখ্যা খুঁজতে মরিয়া। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরেই সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের নেপথ্যে বাংলাদেশের প্রভাব? শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিয়োগ, অর্থমন্ত্রক থেকে শুরু করে ম্যারাথন দুর্নীতির পাহাড়? দল ও প্রশাসনের ‘দূরত্ব’ কি বেড়ে গিয়েছে অনেক? আরজি করের নৃশংসতা ছাড়িয়ে গেছে সবকিছুই? তার উপর দুর্নীতির অভিযোগে আবৃত ব্যক্তিকেও পুরস্কার স্বয়ং রাজ্যের রাজার। আড়াল করার প্রভাবশালী কর্মকাণ্ড চোখের সামনে স্পষ্ট। ধর্ষন ও খুন হওয়া কন্যার কন্যাশ্রী মূল্য রাতারাতি বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় দশ লাখ টাকায়। অর্থ প্রলোভন দেখিয়ে নৃশংসতায় প্রলেপ দেওয়ার প্রচেষ্টা। প্রতিবাদের তরঙ্গ বাড়তে বাড়তে পৌঁছে গেছে শিখরে। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ঘটনা জনরোষের জন্ম দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরেই সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের নেপথ্যে বাংলাদেশের প্রভাব। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের পাল্টা দাবি, ‘‘স্বাস্থ্য দফতর এবং পুলিশকে দিয়ে অপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলেই মানুষের এত বেশি রাগ, অনাস্থা। মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে আতঙ্ক বোধ করছেন কিন্তু বাংলাদেশ দেখে শিক্ষা নিচ্ছেন না! সমাজের সব অংশ থেকে প্রতিবাদ হচ্ছে, এই প্রতিবাদ আরও বাড়বে।’’ পুলিশ-প্রশাসন তাদের কৃতকর্মের জন্যই রোষের মুখে পড়ছে বলে দাবি করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য, ‘‘উঠিয়েছো লাঠি এ বার যবে, দেখবে কেমন খেলা হবে!’’
ক্রীড়া ক্ষেত্রেও দুর্নীতির পাহাড়ের অভিযোগ। ইন্ডিয়ান আর্মি অর্থাৎ সেনা চেয়েছিলেন ডার্বি নিজেরাই পরিচালনা করবেন পুলিশ ছাড়াই। রাজ্যের পুলিশ ফের অযোগ্য প্রমাণ হয়ে যাওয়ার ভয়ে আর্মিকে ডার্বি করার অনুমতি দেয় নি শাদক। সল্টলেকে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের সামনে ফুটবল সমর্থকদের জমায়েতে পুলিশি দমনের বিরুদ্ধে আরও জোরালো প্রতিবাদের দাবি। ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগানের সমর্থকদের একত্রে আবার প্রতিবাদে সামিল হওয়ার আহ্বান ফের। পুলিশ রবিবারের শান্তিপূর্ণ অবস্থানের উপর লাঠিচার্জ করেছে, ফুটবল সমর্থকদের যে ভাবে আটক করা হয়েছে, তাতে ক্ষুব্ধ ফুটবল মহল। কলকাতার বহু প্রতীক্ষিত ডার্বি ডুরান্ড কাপে মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগানের। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের সব টিকিটও বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। শেষ মুহূর্তে ডার্বি বাতিল করে দেওয়া হয় স্রেফ নিজের অকৃতকার্যতার স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে বলে অভিযোগ। ডার্বি চলাকালীন আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রতিবাদের ডাক দেওয়া হয়েছিল।
মাঠেই প্রতিবাদ জানাতেন সমর্থকেরা। ডার্বি বাতিলের পর যুবভারতীর সামনে সেই প্রতিবাদ জানাবেন বলে জমায়েত হয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগানের হাজারো সমর্থক। পরে জমায়েতে যোগ দেন মহামেডান ক্লাবের কিছু সমর্থক। যুবভারতী সংলগ্ন এলাকায় ১৬৩ ধারা জারি করে বিধাননগর পুলিশ। তবে তাতে দমেননি বিক্ষোভকারীরা। অভিযোগ, ফুটবল সমর্থকদের শান্তিপূর্ণ জমায়েতের উপর পুলিশ লাঠিচার্জ করে। বেশ কয়েক জনকে আটক করে প্রিজন ভ্যানে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রতিবাদে যখন গত ১৪ অগস্ট মেয়েদের ‘রাত দখল’ কর্মসূচির ডাক দেওয়ার মতোই বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে ক্রীড়াক্ষেত্র।