February 17, 2025

তিলোত্তমা ভালো নেই!‌ চোখে তাঁর বেদনা, লজ্জা ও ক্রোধের জল, বিদ্রোহ চারিদিকে, বিদ্রোহ আজ?‌

0
Prescription

এমন বেদনা মেশানো ক্রোধের জল যখন গরম হয়ে ওঠে তখনই সেই ক্রোধের জল আগুনে পরিনত হয়ে ছাড়খাড় করে দেয় সমস্ত অশুভ শক্তিকে। আবার কি কলকাতায় তথা বাংলায় সঞ্চিত হচ্ছে সেই ক্রোধের জল? প্রশ্ন উঠেছে নাগরিক মহলে। কর্মরত একজন মহিলা চিকিৎসককে আর জি কর হসপিটালের মধ্যে ধর্ষণ করে হত্যা। প্রতিবাদে সোচ্চার সারা বাংলা সহ সারা ভারত। তোলপাড় সমস্ত মানবিক হৃদয়।সিসিটিভি ফুটেজের ভিত্তিতে সেই দিনই একজনকে আটক করা হয়। তিনি কলকাতা পুলিশের একজন সিভিক ভলেন্টিয়ার। তার পর?

ইতিমধ্যে গঙ্গা দিয়ে বহু জল প্রবাহিত হয়েছে। এই মুহূর্তে কবি সুকান্তের সেই লাইন খুব প্রাসঙ্গিক -” বিদ্রোহ চারিদিকে, বিদ্রোহ আজ।”
এই ঘটনায় সামনে এসেছে অজস্র প্রশ্ন। একথা সর্বজন স্বীকৃত যে কোনো একজনের পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব না। রাজ্য পুলিশের সীট তিন দিন সময় পেয়েও কেন আর কাউকে ধরতে পারলো না? পুলিশ কি কাউকে রক্ষা করতে চাইছে?

নাটকীয়ভাবে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী পৌঁছে গেছিলেন মৃতার বাড়ি। আগে কখনো মুখ্যমন্ত্রীর এই তৎপরতা কিন্তু দেখা যায় নি। যেমন চালচিত্র বাংলার মানুষ দেখে এসেছেন সিঙ্গুর আন্দোলন থেকে। মঞ্চের সামনে অনশন। পিছনে ক্যাডবেরী খেয়ে পেটপুজো?‌ ইতিমধ্যে আদালতের নির্দেশে সিবিআই চিকিৎসক খুনে কেসের দায়িত্ব নিয়েছে।

ঘটনা আর শুধু বাংলায় সীমাবদ্ধ নয়, ছড়িয়েছে সারা ভারতে। প্রতিবাদ উঠেছে দিল্লিতে। সর্বভারতীয় ফেডারেশন অফ ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন সোমবার থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি গ্রহণ করছে। রেসিডেন্স ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনও দেশজুড়ে বিক্ষোভের ডাক। তাদের তরফে প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া হবে বলে খবর। তাদের বক্তব্য, স্বাস্থ্য-শিক্ষা যৌথ দায়িত্বের বিষয়। তাই আর জি করের মতো ঘটনার দায় এড়াতে পারে না কেন্দ্রও।

সারা বাংলা জুড়ে পালিত হয় ‘মহিলাদের রাত দখল’ কর্মসূচি। আর ঠিক সেই সময় (পুলিশ রিপোর্ট অনুযায়ী) ৫ থেকে ৭ হাজার র্দুবৃত্তের আর জি কর হসপিটালে প্রবেশ করে প্রায় তিন ঘন্টা ধরে ভাঙচুর। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল সমস্ত তথ্য প্রমাণ লোপাট করা। আর পুলিশ ছিল নীরব দর্শক। কিন্তু কেন পুলিশ তাদের তিন ঘন্টা ভাঙার সুযোগ দিলো?


অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আর জি করের প্রিন্সপালকে আর জি কর থেকে সরিয়ে পুরস্কার স্বরূপ প্রিন্সিপাল করা হলো ন্যাশনল মেডিকেল কলেজে। কিন্তু ছাত্রদের তীব্র প্রতিবাদে তাঁকে ফিরে আসতে হয়। আদালত স্পষ্ট বলেন, প্রিন্সিপাল বিশাল প্রভাবশালী। তাই তাঁকে দীর্ঘ ছুটিতে পাঠিয়ে দিন। এদিকে সেই প্রিন্সিপাল নিজের নিরাপত্তা চেয়ে আদালতের স্মরণে আসেন। আর তারপরেই মধ্য রাস্তা থেকে সিবিআই তাঁকে একপ্রকার পাকড়াও করে তুলে নিয়ে যায় নিজাম প্যালেসে। দীর্ঘ জেরার পরে আজ শনিবার আবার তাঁকে জেরা শুরু করেছে।

আরজির কাণ্ডে অভিযুক্ত একজন নয়, আরও কেউ কেউ আছেন! এরকম দাবিতে সরব হয়েছেন অনেকেই। ভাইরাল হয়েছে একাধিক ফোনালাপের অডিয়ো রেকর্ডও। সব মিলিয়ে কিছুটা সন্দীগ্ধ আমজনতা ও পুলিশ। খুবই বিপাকে পড়েছেন পুলিশ মন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী। এই দায় কিছুতেই এড়িয়ে যেতে পারেন না মুখ্যমন্ত্রী।

এবার প্রশ্ন, কবে ঠিক মতো চালু হবে সারা বাংলার চিকিৎসা ব্যবস্থা। একজন চিকিৎসককে আমরা হারিয়েছি। সেই আঘাত বড়োই নির্মম। কিন্তু তার প্রতিবাদে যদি অন্যান্য চিকিৎসকেরা কর্ম বিরতি পালন করেন তাহলে হয়তো আরো বহু মানুষের মৃত্যু হতে পারে! সেই দিকেও নজর দিতে হবে চিকিৎসক মহলকে। এরপর মৃতার বাড়িতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য করেন, ‘হয়তো ভিতরেরই কেউ আছে এই ঘটনায়। নির্যাতিতার পরিবার সেটাই অভিযোগ করছে।’ মমতা বলেন, ‘যেই জড়িত থাক না কেন, তাকে শাস্তি পেতে হবে। ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে আমরা ফাঁসির দাবি জানাব।’ ব্যাস তার পরেই শুরু রাজনীতি। তিনি সোজা আঙুল তুললেন বিজেপি ও সিপিএমের দিকে। তাঁর ফলোয়ার্স মহিলাদের নিয়ে পথে নামলেন। নেউ কোনও সাধারন মানুষের। সমর্থন। নির্মম ভাবে বললেন-‘ মৃতার পরিবারকে তো ১০ লক্ষ টাকা দেওয়া যেতেই পারে।’ বিরোধীদের সেই অভিযোগ -‘শুধুই টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করার চেষ্টা।’

এদিকে চিকিৎসকদের কর্ম বিরতি ও অবস্থান বিক্ষোভের জেরে হসপিটাল থেকে ফিরে আসতে হচ্ছে অনেক রুগীকে। তারা বড়ো অসহায়। তাই বলি, তিলোত্তমা ভালো নেই! ভালো নেই আম জনতা! ভালো নেই আমি ও আপনি এবং আমরা ও আপনারাও!

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed