October 7, 2024

আর জি কর কাণ্ডের বিশ্বব্যাপি প্রতিবাদ, মুখ্যমন্ত্রী ১০ লাখের ‘‌টোপ’‌?‌ আজ দেশ জুড়ে চিকিৎসকদের কর্ম বিরতি

0

শ্রীলেখা লিখেছেন, ‘ওঁর কণ্ঠস্বরে এত্ত স্বর্ধা! মানুষের প্রাণের মূল্য ঠিক করার উনি কে? দয়া করছেন নাকি? আপনাকে মৃতার বাবা-মা ও আমাদের কাছে জবাবদিহি করতেই হবে। এবার আপনাকে আমরা এত সহজে ছেড়ে দেব না।

আর জি কর কান্ড নাড়িয়ে দিয়ে গেছে সমস্ত দেশকে। এমন কি এর প্রতিবাদের ঢেউ ইংল্যান্ড, আমেরিকা, বাংলাদেশেও পৌঁছেছে। আর আজ সারা ভারত জুড়ে চিকিৎসকদের কর্ম বিরতি। ওই নির্মম কাণ্ডের প্রতিবাদে ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন আইএমএ আজ দেশ জুড়ে ২৪ ঘন্টা কর্মবিরতির দাক দিয়েছে। সংগঠনের পক্ষে এক প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, আজ সকাল ৬ টা থেকে আগামীকাল সকাল ৬ টা পর্যন্ত জরুরী বিভাগ ছাড়া আর কোনো বিভাগে কাজ হবে না। বহির্বিভাগ এবং সার্জারিও বন্ধ থাকবে। স্বাভাবিক কারণেই অসুবিধায় পড়বে বহু রুগী। কিন্তু প্রতিবাদটা প্রয়োজনীয়।

আইএমএ-‌র ডাকা দেশব্যাপী এই কর্মবিরতি তে ইন্ডিয়ান ডেন্টাল এসোসিয়েশন সহ বিভিন্ন সংগঠন যুক্ত হয়েছে। ফলে চিকিৎসার সমস্ত ক্ষেত্রই হয়তো শনিবার স্তব্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু এখনও প্রকৃত অপরাধী ধরা পরে নি। এই লজ্জা বাংলার। FAIMS এর প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন বেহেরা এবং সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার অমরিন্দর সিং মালহি গতকাল নতুন দিল্লির AIIMS এর ডিরেক্টরকে চিঠি দিয়ে এই কর্ম বিরতির কথা জানান। এই ঘটনার প্রতিবাদে দিল্লীর রামমোহন লোহিয়া হাসপাতাল, লেডি হার্ডিঞ্জ মেজিকেল কলেজ সহ অন্য হাসপাতালের ডাক্তার ও মেডিকেল পড়ুয়ারাও প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন। এদিকে বাংলায় শাসক ও বিরোধীরা একে অপরকে দোষারোপ করে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রী অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো এ ক্ষেত্রেও ১০ লাখের ‘টোপ’ দিয়েছেন। কিন্তু সব মেরুদন্ড বাঁকা হয় না!

স্বাধীনতা দিবসের দিন মুখ্যমন্ত্রীকে মৃতার বাবা-মায়ের উদ্দেশ্যে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘মেয়ে কিন্তু আর ফিরে আসবে না। ওর নামে যদি কিছু আপনারা করতে চান, করতে পারেন, যা টাকা লাগবে আমি দেব। কেন ১০ লক্ষ টাকা তো দিতেই পারি পরিবারকে।’ মুখ্যমন্ত্রীর এই ভিডিয়ো পোস্ট করে শ্রীলেখা লিখেছেন, ‘ওঁর কণ্ঠস্বরে এত্ত স্বর্ধা! মানুষের প্রাণের মূল্য ঠিক করার উনি কে? দয়া করছেন নাকি? আপনাকে মৃতার বাবা-মা ও আমাদের কাছে জবাবদিহি করতেই হবে। এবার আপনাকে আমরা এত সহজে ছেড়ে দেব না।’ নিজের এই পোস্টের হ্যাজট্যাগ, ‘Wewantjustice #rgkarmedicalcollege’ জুড়েছেন শ্রীলেখা মিত্র। ‘ আরে ধনধান্যে পুষ্পে ভরা, আপনি ছাড়ুন তো দিদি। আপনি অনেক নাটক করেন। আপনি ওই সিরিয়ালে, ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে সাদা পোশাক পরে চশমা পরে গিয়ে বসে থাকেন। অনেক নাটক করেছেন। আমি জানি এরপরে আপনারা আমার আরও খারাপ অবস্থা করবেন। এমনিতেই করেছেন। আরও করবেন আমি জানি। কিন্তু সবাইকে আপনি কিনতে পারেননি। আর তাঁদের মধ্যে একজন শ্রীলেখা মিত্র। সরি।এই যে কন্যাশ্রী প্রকল্পের যে টাকাটা দিচ্ছেন, এই যে ৮৫ হাজার টাকা ক্লাবে দিচ্ছেন মাটির দুর্গাপুজো করার জন্য আর এখানকার মেয়েরা, ওরা কেউ দুর্গা সেটা বলছি না, সাধারণ মেয়ে। সাধারণ মেয়ে একজন, তার কোনও নিরাপত্তা নেই। তার আরেকটা বাড়ি হল তার ওয়ার্ড যেখানে সে কাজ করছে সেখানে তার কোনও নিরাপত্তা নেই। আপনি কি কন্যাশ্রী করছেন? ওই টাকায় হাসপাতালগুলোকে উন্নত করুন না। আসল অপরাধীদের ধরুন না, নিজের দলের হলেও একটা উদাহরণ তৈরি করুন না।’

আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় দোষীর শাস্তি। নারীর সুরক্ষার দাবিতে বাংলার ‘মেয়েদের রাত দখল’ কর্মসূচির অনুকরণে এ বার রাত জাগল ওপার বাংলার রাজধানী ঢাকা এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের ডাকে পালিত হয় ‘মেইফুয়া অক্কল রাইত দহল গরো’ (মেয়েরা রাত দখল করো) কর্মসূচি। শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়ারা এই কর্মসূচিতে যোগ দেন। বাংলাদেশের রাজধানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও হয় একই কর্মসূচি। সব জায়গাতেই মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
আরজি কর-কাণ্ডে দোষীদের শাস্তি এবং কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে বুধবার মধ্যরাতে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পথে নেমেছিলেন মেয়েরা। একই স্লোগান ওঠে চট্টগ্রামেও। প্রতিবাদীদের একাংশ নানা পোস্টার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিপ্লব উদ্যানে জড়ো হয়েছিলেন। আরজি করের দোষীদের বিচার চেয়ে স্লোগান দেন তাঁরা। পালিত হয় মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচি। সংহতির বার্তা এল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েরা ডাক দিল রাত দখল করো কর্মসূচির। ১৬ অগস্ট শুক্রবার রাত ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে জমায়েতের ডাক দিয়েছিলো। সন্ত্রাস বিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্যের সামনে জমায়েত হয়েছিল কয়েক হাজার মহিলা। সকলের মুখে সেই এক শ্লোগান – ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস।’

১৫ তারিখ থেকেই সমাজ মাধ্যমে প্রচার হয়েছে এই কর্মসূচির। সেখানে লেখা হয়েছিল -‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে পূর্বের প্রতিটি ধর্ষণ মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে এবং কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে চলমান প্রতিবাদের সংহতিতে মেয়েরা রাত দখল করো।’ বাংলাদেশের কোটা বিরোধী আন্দোলনকে পশ্চিমবঙ্গের যুব সমাজ সমর্থন জানিয়েছিল। এবার আর জি করের পাশে বাংলাদেশের মহিলারা। রাত ১০ টার অনেক আগেই ভিড় জমাতে শুরু করে। ওখানেও ছিল না কোনো রাজনৈতিক দলের ফেস্টুন। কোনো রঙ ছাড়াই প্রতিবাদে সামিল হয় সমস্ত মহিলা। বিশাল পুলিশের উপস্থিতিতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় মহিলাদের রাত দখল অভিযান।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed