রাজ্যজুড়ে বন্ধ, ধিক্কার দিবস, চিকিৎসকদের কর্মবিরতি! ‘মুখ্যমন্ত্রী এ বছর ক্লাবগুলোর পুজোর অনুদানের টাকা হাসপাতালকেই দিন’ : টলিউড শিল্পীরা
“শুনলাম, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তান্ডব চলেছে। অনেক যন্ত্র, রোগীদের শয্যা নষ্ট হয়েছে। সেগুলো সারানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রী না হয় এ বছর ক্লাবগুলোকে পুজোর অনুদান না দিয়ে হাসপাতালকেই সেই অর্থ দিলেন। আরজি কর হাসপাতাল আবার নতুন করে সেজে উঠুক।” আরজি কর-কাণ্ডে সৃজিত মুখোপাধ্যায়, বিদীপ্তা চক্রবর্তী, শোভন গঙ্গোপাধ্যায়, লগ্নজিতা চক্রবর্তী, শোলাঙ্কি রায়, অলিভিয়া সরকার, সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় আন্দোলরত চিকিৎসকদের পাশে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করলেন। স্বাধীনতা দিবসের আগের রাতে হাসপাতালে ভাঙচুর নিয়ে প্রতিবাদে মুখর তাঁরা। স্বাধীনতা দিবসের রাতে এঁরা রাত জাগছেন হাসপাতাল চত্বরে। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছে তাঁদের এই দাবি। স্বাধীনতা দিবসের রাতে প্রতিবাদের সমাবেশ থেকে আওয়াজ তোলেন অবস্থানকারী চিকিৎসক পড়ুয়ারা, “আর কোনও মধ্যস্থতা নয়। এ বার পুলিশমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চান তাঁরা।”
রাজ্যজুড়ে কোথাও বন্ধ, ধিক্কার দিবসের ডাক দেওয়া হয়েছে। তাতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অচলাবস্থা তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। আর এই বন্ধের মোকাবিলায় পালটা কড়া বিবৃতি জারি করল নবান্ন। মুখ্যসচিবের তরফে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শুক্রবার দিনভর সচল থাকবে রাজ্য। ওইদিন সরকারি কর্মীদের সমস্ত ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বিভিন্ন পরিবহণ সংস্থাকে নোটিস পাঠিয়ে যানবাহন পরিষেবা চালু রাখার কথা বলা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার বন্ধ বিরোধী। কর্মসংস্কৃতি সচল রাখতে সবরকম ব্যবস্থা নেবে সরকার। মধ্যরাতে মেয়েদের রাস্তা দখলের ডাক দিয়ে আন্দোলন চলছিল, সেই সুযোগে শতাধিক বহিরাগত হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে মারধর, তাণ্ডব চালায় বলে অভিযোগ। এমনকী পুলিশকেও আত্মরক্ষার্থে লুকিয়ে যেতে হয়। এর মধ্যে হামলা ঠেকাতে গিয়ে কয়েকজন পুলিশ আধিকারিক জখম হন। সেসময় হাসপাতালে কর্তব্যরত ডিসিও মারধরের মুখে পড়েন। মাঝরাতে হামলার ঘটনায় যুক্ত সন্দেহে ১৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বাকিদের সন্ধান পেতে সোশাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে।
আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত সেই রাতে কখন, কোথায় গিয়েছিলেন? বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য মিলিয়ে দেখছে সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, আরজি করের ওই ঘটনার আগে তিনি কলকাতার বাইরে ছিলেন। কোনও কাজে বেরিয়েছিলেন। সেখান থেকে কলকাতায় ফিরেই এই ঘটনা ঘটান। অভিযুক্ত কোথায় গিয়েছিলেন, ফেরার পর হাসপাতালে কখন, কোথায় যান, কার সঙ্গে দেখা করেন, সবটাই সিবিআইয়ের নজরে রয়েছে। হাসপাতালের একাধিক আধিকারিককে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। সিবিআই সূত্রে খবর, সে রাতের ‘টাইমলাইন’ ধরে মেলাচ্ছেন গোয়েন্দারা। সিসিটিভি ফুটেজ খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনার আগে কলকাতার বাইরে কী প্রয়োজনে, কোথায় গিয়েছিলেন অভিযুক্ত, তা-ও সিবিআইয়ের নজরে রয়েছে।মামলাকারীদের হয়ে সওয়াল করতে গিয়ে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আরজি করে হামলার পর পুলিশ কমিশনার বলেছেন, সারা শহর জুড়ে প্রতিবাদ হচ্ছে। আমরা কী করতে পারি? অর্থাৎ, পুলিশের তরফে কোনও সমর্থন নেই! কমিশনারের বক্তব্যের ভিডিয়ো রেকর্ড রয়েছে। এ সব কী হচ্ছে? সরকারি হাসপাতালে ভাঙচুর করা হচ্ছে!’’আরজি কর-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। তার পরেই দেখা যায়, সেমিনার হলের কাছে সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। ভেঙে ফেলা হচ্ছে একটি ঘর। কেন তা করা হল? আদালতে প্রশ্ন তুলেছেন মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। আরজি করে হামলার ঘটনায় পুলিশের গোয়েন্দাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলল আদালত। রাজ্যের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘সাধারণত ১০০ জনের জমায়েত হলেই গোয়েন্দারা নজর রাখেন। সাত হাজার মানুষের জমায়েতে তাঁরা কী করছিলেন? এত লোকের জমায়েত হল আর পুলিশের গোয়েন্দারা কিছু জানলেন না, এটা বিশ্বাস করা কঠিন।’’