মমতার পদত্যাগ! ঘটনার অভিঘাতে ব্যাকফুটে তৃণমূল, বাংলাদেশ হওয়ার আশঙ্কায় ক্ষতে মলমের প্রলেপ দিতে মরিয়া নেত্রী! বাংলার সম্মান রক্ষার অজুহাতই অস্ত্র
আরজি কর-কান্ডের প্রতিবাদে স্বাধীনতা দিবসের আগের রাতে ১১টা ৫৫ থেকে ‘মেয়েদের রাত দখল’ নামে আন্দোলনের ডাক। কলকাতার প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ এলাকাতেই জমায়েত। ফেসবুকে পোস্ট করে মেয়েদের রাত দখলের আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী রিমঝিম সিংহ। ক্রমে ক্রমে তা আন্দোলনের রূপ নেয়। রিমঝিমও রাত ৯টার খানিক আগে ৮বি বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে গিয়েছিলেন। হাতে সাতরঙা পতাকা। কপালে বেগুনি ফেট্টি। কলেজ স্ট্রিট, যাদবপুর এইটবি বাস স্ট্যান্ড এবং অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস চত্বরে জমায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছিল। পরে ছড়িয়ে পড়ে কলকাতার বিভিন্ন এলাকা-সহ জেলায় জেলায়। আরজি কর হাসপাতালের সামনে জমায়েত। কেউ জাতীয় পতাকা হাতে, কেউ মুখে কালো কাপড় বেঁধে রাতের শহর দখলের জমায়েতে। একই ছবি কলেজ স্ট্রিট ও অ্যাকাডেমি চত্বরেও।
বাংলাদেশের মতো আমার সরকারও ফেলবে ভাবছে? আমি ক্ষমতার মায়া করি না! আরজি কর আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে অধিকাংশই বাংলাদেশের শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে চলা আন্দোলনের তুলনা টানতে শুরু করেছেন। একাধিক বিরোধী দলের নেতারা যখন বাংলাদেশের আদলে স্লোগান বানাতে শুরু করেছেন, একই ধরনের প্রচার যখন সংবাদমাধ্যমেও চলছে, তখন স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে দেওয়া বক্তৃতায় সেই প্রসঙ্গ তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। মমতার কথায়, ‘‘আরজি করের ঘটনা নিয়ে সিপিএম এবং বিজেপি রাজনীতি করছে। বাংলাদেশে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে। অনেকে ভাবছেন, বাংলাদেশের ঘটনা টেনে এনে এখানেও ক্ষমতা দখল করবেন। কিন্তু মনে রাখবেন, আমি ক্ষমতার মায়া করি না। যত দিন বাঁচব, মানুষকে ন্যায়বিচার এনে দেব। এই ঘটনা জানার পরেও আমি পুলিশকে দিয়ে অনেক কাজ করিয়েছিলাম। কিন্তু ওঁরা হাই কোর্টে গেলেন।’’ অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে এক যোগে সিপিএম এবং বিজেপিকে আক্রমণ করেছেন মমতা। এই ‘রাজনৈতিক চক্রান্তের’ বিরুদ্ধে তৃণমূলের পাল্টা কর্মসূচির ডাকও দিয়েছেন।
‘আমাকে অসম্মান করুন, কিন্তু বাংলা মাকে অসম্মান করবেন না’ প্রাক্-স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান থেকে বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মধ্যরাতে শহর জুড়ে মহিলাদের যে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে, সেই আন্দোলনকেই পরোক্ষে মমতা বার্তা দিতে চেয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানেও। দিল্লি থেকে মুম্বই কিংবা চেন্নাই, বিভিন্ন প্রান্তে হাসপাতালে চিকিৎসকেরা আরজি করের ঘটনার বিচার চেয়ে এবং কর্মস্থলে নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। সার্বিক ভাবে কলকাতা শহরের প্রতিটি হাসপাতালে জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলছে। প্রভাব পড়েছে বেসরকারি হাসপাতালেও। আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে স্বাধীনতার মধ্যরাতে পথে নামছেন মহিলারা। কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে ‘রাত দখল’। কলকাতা তথা সারা বাংলা থেকে এই কর্মসূচির সপক্ষে সাড়া মিলেছে। এমনকি, তৃণমূলের অনেক নেতাও মধ্যরাতের জমায়েতে থাকবেন বলে জানিয়েছেন। রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় মঙ্গলবার জানিয়েছেন, তিনিও মধ্যরাতের প্রতিবাদে শামিল হচ্ছেন। তৃণমূলের বেশ কয়েকটি পদ থেকে বরখাস্ত প্রাক্তন সাংসদ শান্তনু সেনের স্ত্রী কাকলি সেন কলকাতা পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বুধবার মহিলাদের রাত দখলের কর্মসূচিতে তিনি এবং তাঁর মেয়ে থাকবেন। যা নিয়ে অস্বস্তিতে তৃণমূল।