‘চরণযুগল ধরে বলছি, এবার কাজে ফিরুন’ চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের অনুরোধ মুখ্যমন্ত্রীর
আর জি কর কাণ্ডে উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। হাই কোর্টের নির্দেশে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে। আর জি কর কাণ্ডে পথে নেমেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চড়া সুরে আক্রমণ প্রাক্তন বিচারপতি তথা তমলুকের বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। তাঁর অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী নিজে আর জি কর ধর্ষণ কাণ্ডের সব তথ্যপ্রমাণ লোপাট করিয়েছেন। এমনকী রাজ্যে অবিলম্বে ৩৫৬ ধারা প্রয়োগ করা উচিত বলেও দাবি করেছেন। অভিজিতের কথায়, ‘‘ রাজ্যে নারীদের নিরাপত্তা নেই, অথচ অভিযুক্তকে শাস্তি দেওয়ার পরিবর্তে তাকে আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে নেমে পড়েছেন তথ্য লোপাটের কাজে। রাজ্যে আইনের শাসন চলছে না। বিচারপতি থাকার সময়েই আমি বলেছিলাম, এই রাজ্যে আইনের শাসনের পরিবর্তে শাসকের আইন চলছে। এ বার সেটা ফের প্রমাণিত হল।” অভিজিতের দাবি, প্রমাণ লোপাটের লক্ষ্যে ধৃত সঞ্জয় রায়ের উপযুক্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করায়নি রাজ্য সরকার।
প্রাক স্বাধীনতার অনুষ্ঠানে বেহালা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রবিবারের মধ্যে সিবিআইকে ফাঁসির আবেদন করতে হবে। পুলিশ অর্ধেক কাজ করে দিয়েছে। পুলিশ না পারলে আমি সিবিআইকে কেস টা দিতাম। আমাকে দিতে হয়নি। দোষীর ফাঁসি হোক। কোনও নির্দোষের সাজা যেন না হয়।” ১৬ তারিখ আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে দোষীর ফাঁসির দাবি জানিয়ে পথে নামতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মৌমালি মোড় থেকে ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত মিছিল করবেন মুখ্যমন্ত্রী। রাত ৯ টা বাজতে না বাজতেই জেলায় জেলায় শুরু হল রাত দখল। প্রতিবাদে পথে নেমে প্রতিবাদ জানায় মহিলারা। মেয়েদের রাত দখল। পথে নামলেন মহিলারা। মেদিনীপুর, হুগলি, বাঁকুড়া, ডায়মন্ড হারবার থেকে শুরু করে কলকাতার কলেজ স্ট্রিট সর্বত্র ধরা পড়ল এক ছবি। কলকাতার নিউ টাউনে দেখা দিল প্রতিবাদের ঢেউ। শুধু মহিলারা নয়, তাদের সঙ্গে সমানতালে পথে নামলেন পুরুষরাও। ডায়মন্ড হারবার জেনেক্স ভ্যালি আবাসিকদের মোমবাতি মিছিল ।ইতিমধ্যেই জেলায় জেলায় শুরু হয়ে গেছে রাত দখল। পাশাপাশি বারাসাত, বীরভূম সহ বিভিন্ন জেলায় ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে রাত দখল। মাঝরাতের অনেক আগেই দেখা গেল রাত দখল। শিলিগুড়ি, হাবড়াতে মহিলারা নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই পথে নেমে প্রতিবাদ করতে শুরু করেন। উত্তর থেকে শুরু করে সর্বত্র শুরু হয় রাত দখল। হাসপাতালে উপযুক্ত নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে অন্য চিকিৎসকরা। এরপরই এই রাত দখলে নামল জেলার মহিলারা।
আর জি কর কাণ্ডের জেরে রাজ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থা কার্যত শিকেয়। দিনভর জুনিয়র চিকিৎসক এবং ইন্টার্নদের কর্মবিরতির জেরে আউটডোর পরিষেবা কার্যত স্তব্ধ। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার বিশেষ সম্ভাবনা নেই। এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের কাজে ফেরার জন্য কার্যত কাতর আবেদন জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘চিকিৎসকরা পরিষেবা দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ।’ মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “বারবার আবেদন করছি চিকিৎসকদের যারা এখনও ডিউটি জয়েন করেননি। ইতিমধ্যেই ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বিনা চিকিৎসায়। এর মধ্যে একটি শিশু এবং অন্তঃসত্ত্বা মহিলাও রয়েছে। সাধারণ মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে বলছি, আপনারা কিন্তু চিকিৎসা দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। পাঁচ দিন তো হয়ে গেল এবার পরিষেবা দিন। চিকিৎসাটা দিন।” মমতার আর্জি, “আপনাদের পায়ে ধরছি। তাতে যদি আপনাদের চরণযুগল শান্ত হয়। আন্দোলন করেছেন তো চার পাঁচদিন। কেউ কিছু বলেনি। এবার পরিষেবা দিন। আপনারা প্র্যাকটিস করলেও একটা জায়গায় চাকরি করেন সেটা মনে রাখুন। এখন সিনিয়র ডাক্তাররা অনেক জায়গায় পরিষেবা দিচ্ছেন। তাঁদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।”