ধৃতের একার পক্ষে যে ওই ঘটনা ঘটানো কঠিন! উত্তাল সারা দেশ! অত্যাচারে ক্ষতবিক্ষত যোনি, মাথা ঠুকে চশমা ভেঙে চোখে, ভেঙে যায় থাইরয়েড কার্টিলেজ, গলার হাড়েও নির্যাতন!
আরজি কর কাণ্ডের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ভয়াবহ। চশমার কাচ ভেঙে চোখে গভীর ক্ষত তরুণীর। অপরাধীর হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে প্রতিরোধ করতে গিয়ে প্রবল ধস্তাধস্তিতেই কাচ ভেঙে যায় এবং চোখে ঢুকে রক্ত বেরিয়ে যায়। মাথাতেও আঘাত রয়েছে। রিপোর্ট বলছে, ধস্তাধস্তির সময়ে নির্যাতিতার মুখ চেপে দেওয়ালে ঠুকে দেওয়া হয়েছিল মাথা। মুখে আঁচড়ের ক্ষত রয়েছে। আরজি করে খুন হওয়া তরুণী চিকিৎসকের দেহের কোনও হাড় ভাঙেনি, ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানিয়েছিল পুলিশ। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী মৃতার কলার বোন ও পেলভিক বোন ভাঙার তত্ব খারিজ। হাড় না ভাঙলেও আঘাত এবং তার বীভৎসতার কথা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখে শিউরে উঠতে হয়। সন্দেহ আরও দঢ় হতে বাধ্য, যে সে রাতে তরুণীর উপর একজন মাত্র নির্যাতন করেনি।
যৌনাঙ্গে গভীর ক্ষত। ভয়ানক পেনিট্রেশনে যার জেরে বিপুল রক্তপাত এবং হাইমেন ফেটে যায়! যোনির ভিতরে ১৫০ গ্রাম বীর্য মিলেছে, যা ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে পরবর্তী পরীক্ষার জন্য। পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃতের একার পক্ষে যে ওই ঘটনা ঘটানো কঠিন। গ্রেফতার অভিযুক্তর ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে ল্যাবে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজ। ঘটনায় ধৃত সন্দেহভাজন পুলিশকে জানিয়েছে, ধর্ষণের সময়ে তরুণী চিৎকার করে সবাইকে ডেকে দিত, তাই তাঁকে খুন করেছে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় সব কথা স্বীকার করেছে এমনকি, ভাবভঙ্গি দেখে বোঝার উপায় নেই যে সে এত বড় জঘন্য কাজ করেছে। পুলিশের অনুমান, খুব ঠান্ডা মাথাতেই এই ঘটনা ঘটিয়েছে অপরাধী। এখনও নির্বিকার অপরাধী পুলিশকে বলেছে, ‘আমাকে ফাঁসি দিলে দিন’! ঘটনার দিন মদ্যপ অবস্থায় গভীর রাতে ঘুম থেকে টেনে তুলে তরুণীর ওপর ভয়ানক অত্যাচার করে অপরাধী। হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট তরুণী যে সেমিনার হলে শুয়েছিলেন সেখানে রাত ৩টের কিছু পরে ঢোকে সঞ্জয়। প্রায় ৪৫ মিনিট পর তাকে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়।ঢোকার সময়ে তার কানে হেডফোন ছিল, কিন্তু বেরিয়ে আসার সময়ে ছিল না। পুলিশ ওই হেডফোনের সূত্র ধরেই তাকে গ্রেফতার করে।
আরজি করের মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে উত্তাল গোটা দেশ। কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ছাড়াও সোমবার থেকে দিল্লি, মুম্বই, লখনউ, কর্নাটক-সহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। মঙ্গলবারের শুনানিতে কর্মবিরতির বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘একটি আবেদনে বলা হয়েছে দেখলাম চিকিৎসকরা ধর্না দিচ্ছেন। এটা সত্যি হলে রোগীরা ভুক্তভোগী হবেন। এটা উচিত নয়। ওই ঘটনা শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয় সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে। খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা।’’ আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় কলকাতা হাই কোর্টে একাধিক জনস্বার্থ মামলা দায়ের। সোমবার মামলা করতে চেয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে। মামলা দায়েরের অনুমতি দেন প্রধান বিচারপতি।