আরজি কর মামলায় জড়িত ‘পুরস্কৃত অধ্যক্ষ ছুটিতে’?রাজ্যকে হাই কোর্টের কড়া ধমক! কঠিন পরীক্ষা পুলিশের?
আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে স্বেচ্ছায় ছুটিতে পাঠাতে বললেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম। শুধু তা-ই নয়, সময়ও বেঁধে দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘বিকেল ৩টে পর্যন্ত সময় দিলাম। এর মধ্যে অধ্যক্ষকে স্বেচ্ছায় ছুটিতে চলে যেতে বলুন। না হলে আমরা নির্দেশ দিতে বাধ্য হব।’’ মঙ্গলবারের শুনানিতে কর্মবিরতির বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন প্রধান বিচারপতি বলেন,‘একটি আবেদনে বলা হয়েছে দেখলাম, চিকিৎসকরা ধর্না দিচ্ছেন। এটা সত্যি হলে রোগীরা ভুক্তভোগী হবেন। এটা উচিত নয়। ওই ঘটনা শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে। খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা।’ আরজি করের মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে উত্তাল গোটা দেশ। কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে। সোমবার থেকে দিল্লি, মুম্বই, লখনউ, কর্নাটক-সহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মবিরতি শুরু। আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় কলকাতা হাই কোর্টে একাধিক জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল। হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়েরের অনুমতি প্রধান বিচারপতির।
১৫০ পুলিশ খাটবে ২৪ ঘণ্টা! কঠিন পরীক্ষা পুলিশের। একজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশ। ধৃত একাই এই কাজ করেছে, নাকি তার সঙ্গে ছিল আরও কেউ? এই সংশয়ের সপক্ষে এখনও কোনও তথ্যপ্রমাণ মেলেনি। কিন্তু ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে যে বীভৎস অত্যাচারের নিদর্শন সামনে এসেছে, তাতে এই সম্ভাবনা আরও উস্কে গিয়েছে। সোদপুর পানিহাটিতে নিহত তরুণীর বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে দেখা করার পরে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, রবিবারের মধ্যে এই খুনের তদন্ত শেষ করতে হবে। তা না করা গেলে তদন্তভার সিবিআইকে দিয়ে দেওয়া হবে। ফলে এই মুহূর্তে বড় পরীক্ষার সামনে কলকাতা পুলিশ।
বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট সদস্য সংখ্যা ৭ থেকে বাড়িয়ে ১২ করল কলকাতা পুলিশ। সিটের তদন্তকারী অফিসারদের সাহায্য করতে থাকছেন ১৫০ জন পুলিশকর্মী। এই টিম কি রবিবারের মধ্যে খুঁজে বার করতে পারবে, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সমস্ত অপরাধীকে, প্রশ্নই সকলের মনে। তদন্তে আরও গতি আনতে ১৫০ জন পুলিশকর্মী এবং ১২ জন বিশেষ অফিসারের দল আগামী কয়েক দিন ২৪ ঘণ্টাই কাজ করবে। তিনটি শিফটে ভাগ করে কাজ চালানো হবে। তন্নতন্ন করে খতিয়ে দেখা হবে সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজ।
লালবাজারে ডেকে জেরা আরজি কর হাসপাতালের সাতজন ইন্টার্নকে। ডেকে পাঠানো হয়েছে আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারকেও। তিনিই সেদিন নির্যাতিতার বাড়িতে ফোন করে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ছাত্রীর মৃত্যুর খবর জানিয়েছিলেন। ডেকে পাঠানো হয়েছে চেস্ট মেডিসিনের এইচওডিকেও। লালবাজারে ডেকে পাঠানো হয়েছিল এক তরুণীকে। তাঁর সঙ্গেও দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন পুলিশ কর্তারা। পুলিশ জানতে পেরেছে, প্রায় তিনমাস ধরে এই তরুণীকে অনবরত ফোনে উত্যক্ত করত ডাক্তারির ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়। ওই তরুণীর মা জানান, সদ্য সন্তান প্রসব করেছে তাঁর মেয়ে। নিজেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাঁর মেয়েকে অশালীন প্রস্তাব দিত সঞ্জয়। সঞ্জয়ের কল লিস্ট ঘেঁটেই এই মহিলাকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। ক্রমেই তীব্র আকার নিচ্ছে প্রতিবাদ আন্দোলন। নজরকাড়া তৎপরতা লালবাজারেও। সন্ধের মধ্যে জানানো হয়েছে ময়নাতদন্তের তথ্যও। ঘটনার পর পুলিশ যেভাবে আত্মহত্যার কথা বলেছিল, তা নিয়ে এদিন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নিহত ছাত্রীর বাবা-মা। জানা যাচ্ছে, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে বলেন, মেয়ের রক্তমাখা দেহ দেখেও পুলিশ ময়নাতদন্তের আগেই কেন বলেছিল, যে এটি আত্মহত্যার ঘটনা। জানা যাচ্ছে, এরপরই পরিবারকে মুখ্যমন্ত্রী আশ্বস্ত করেন, পুলিশ দ্রুত বাকি অপরাধীদের ধরতে না পারলে সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার তুলে দেওয়া হবে।
আরজি করের অন্দরের খবর, এই ঘটনায় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দিকে আঙুল উঠছে ছাত্রদের তরফেই। আর তা ধামাচাপা দিতেই তদন্তের অভিমুখ ঘোরানোর চেষ্টা চলছে। দু-এক জন ইন্টার্ন চিকিৎসকের নামও সামনে এসেছে, তাদের মধ্যে একজন পলাতক বলেও শোনা যাচ্ছে। কিন্তু এই নিয়ে স্পষ্ট কোনও অভিযোগ কেউই কোথাও দায়ের করেননি। পুলিশও এখনও ঘোলা জলে মাছ ধরতে মরিয়া।