October 12, 2024

‌সিভিক ভলান্টিয়াররা এত দাপুটে হওয়ার সাহস পান কোথা থেকে? আনিস খানের হত্যা থেকে আরজি করের ধর্ষন-‌হত্যা কাণ্ডের বাড়বাড়ন্তে ‘উর্দি পরা ক্যাডার’

0

নিত্যনৈমিত্তিক কাজেও সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। ‘তোলাবাজি’ থেকে নির্বাচনের সময়ে শাসকদলের হয়ে ‘শাসানি’ দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার মধ্যে। যানবাহন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অনেক সময়ে পুলিশের চেয়েও বেশি দাপট দেখান অনেক সিভিক ভলান্টিয়ার। ‘বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়’ বলেও অভিযোগ।

‘‘রাজ্য জুড়ে সিভিক নিয়োগ বন্ধ রাখা উচিত!’’ বাম জমানায় পশ্চিমবঙ্গে সিভিক ভলান্টিয়ার বা ‘উর্দি পরা ক্যাডার’ ছিল না। এই বাহিনীর শুরু ২০১২ সালে। রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের পরে। প্রায় তখন থেকেই শুরু তাঁদের একটি বড় অংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার। হাওড়ার আমতায় আনিস খান হত্যাকাণ্ডের সময়ে এক জন সিভিক ভলান্টিয়ারের নাম উঠে এসেছিল। সেই মামলায় হাই কোর্টে দাঁড়িয়ে ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’ মন্তব্য করে তৎকালীন অ্যাডভোকেট জেনারেল গোপাল মুখোপাধ্যায় ২০২২ সালের মে মাসে বলেছিলেন এই কথাটাই। ‘‘রাজ্য জুড়ে সিভিক নিয়োগ বন্ধ রাখা উচিত!’’

২০০৮ সালে বাম আমলে কলকাতায় যান নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘গ্রিন পুলিশ’ নামে একটি বাহিনী তৈরি করে পুরসভা। পরে গোটা রাজ্যে তা চালু করে সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের ওয়েবসাইট বলছে, পুলিশে পর্যাপ্ত কর্মী না থাকায় ২০১৩ সালে রাজ্যে ৪০,০০০ পুলিশ এবং ১,৩০,০০০ হাজার ‘সিভিক পুলিশ ভলান্টিয়ার’ নিয়োগের সিদ্ধান্ত। ওই ওয়েবসাইট বলছে, এই মুহূর্তে রাজ্যে এই বাহিনীতে ১ লাখ ২০ হাজারের মতো নিয়োগ হয়ে গিয়েছে। প্রথমে নাম ছিল ‘সিভিক পুলিশ ভলান্টিয়ার’। প্রধান বিরোধিতা পুলিশ বাহিনীর তরফে আসাতেই ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে বাহিনীর নাম থেকে ‘পুলিশ’ শব্দটি ছেঁটে দেয় রাজ্য সরকার। করা হয় ‘সিভিক ভলান্টিয়ার’। বিরোধীরা বাহিনীকে শাসকদলের ‘উর্দি পরা ক্যাডার’ বলে উল্লেখ করেছে। কোনও এক ‘প্রভাবশালী’র ছত্রছায়ায় থাকার জন্যই সিভিক ভলান্টিয়ার হয়েও ব্যাপক ক্ষমতা ভোগ করতেন আর জি কর কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত।

ভিন্নমত পোষনে, সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগের অন্যতম শর্ত হল শাসক তৃণমূলের প্রতি ‘আনুগত্য’। বিভিন্ন এলাকার তৃমমূল নেতারা তাঁদের পছন্দের এবং অনুগত লোকজনকে ওই চাকরি ‘পাইয়ে দেন’। তার ফলেই সিভিকদের ‘দাপট’ নিরবচ্ছিন্ন পর্যায়ে পৌঁছয়। ভুক্তভোগীরা অনেকেই এই সমস্ত সিভিকদের ‘শাসক দলের হার্মাদবাহিনী’র সঙ্গেও তুলনা করে থাকেন। নিত্যনৈমিত্তিক কাজেও সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। ‘তোলাবাজি’ থেকে নির্বাচনের সময়ে শাসকদলের হয়ে ‘শাসানি’ দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার মধ্যে। যানবাহন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অনেক সময়ে পুলিশের চেয়েও বেশি দাপট দেখান অনেক সিভিক ভলান্টিয়ার। ‘বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়’ বলেও অভিযোগ।

প্রথমে যখন এই বাহিনী তৈরি হয়, বলা হয়েছিল পুলিশের অপ্রতুলতার জন্য ‘সাহায্যকারী’ হিসেবে এই বাহিনীর সদস্যেরা কাজ করবেন। চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করবে স্বরাষ্ট্র দফতর। ছ’মাস অন্তর ওই চুক্তি পুনর্নবীকরণও হওয়ার কথা। কলকাতার বাইরে বিভিন্ন রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণ ও মেলা-পার্বণে ভিড় সামলানো। সরকারি নির্দেশে এটাও বলা হয়ে যে, জেলা স্তরে কমিটি তৈরি করে ভলান্টিয়ার্স বাছাই করা হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক হলেই চলবে। পরে সেই নিয়ম বদলে যায়। নতুন নিয়মে ২০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে যে কোনও বয়সিরাই সিভিক ভলান্টিয়ার পদের জন্য আবেদন করতে পারেন। সর্বনিম্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে অষ্টম শ্রেণি পাশ। বেতন মাসে ৯ হাজার টাকা। যে থানার অধীনে নিয়োগ হবে, সাধারণ ভাবে সংশ্লিষ্ট সিভিক ভলান্টিয়ারকে সেখানকারই বাসিন্দা হতে হয়। তবে কাছাকাছি বাড়ি হলে সমস্যা হয় না। অস্থায়ী সরকারি কর্মী হিসাবে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া আবেদন থেকে নিয়োগ অফলাইনে।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed