October 5, 2024

তিলোত্তমা ধর্ষন-‌খুন কাণ্ডে জড়িত রাজনৈতিক প্রভাবশালী?‌ আর জি করের তরুণী চিকিৎসককে অচেতন করে ধর্ষণ!

0

কমপক্ষে ২ বা তিনজন রয়েছে। দাদা, আমরা সন্দেহ করছি এটা ইন্টার্নের কাজ। যে ইন্টার্নের যথেষ্ট রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে। তাঁর পরিবারের সদস্যরাও যথেষ্ট উচ্চপদস্থ। নাম নিতে পারব না।

আরজি কর হাসপাতালে তিলোত্তমাকে ‘ধর্ষণ’ ও খুনে এক জন নয়, একাধিক জন জড়িত। এই দাবি নিরিখে প্রকাশ্যে আসে একটি ভাইরাল অডিয়ো। তিলোত্তমা খুনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার ডাক্তারকে নোটিস। ঘটনার রাতে ওই চার ডাক্তার তিলোত্তমার সঙ্গে ডিনার করেছিলেন। তারপর তিলোত্তমা সেমিনার রুমে ঘুমোতে গিয়েছিলেন। ঘটনার রাতে তিলোত্তমা একটি ফুড ডেলিভারি অ্যাপের মাধ্যমে খাবার অর্ডার করেছিলেন। তাঁরা এক সঙ্গে পাঁচ জন রাতের খাবার খেয়েছিলেন। তিলোত্তমা বাদে বাকি চার ডাক্তার ছিলেন সেই রাতে, তাঁদের মধ্যে একজন হাউজস্টাফ আর বাকি তিন জন চিকিৎসক। অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়র গ্রেফতার হলেও। পুলিশের হাতে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।আরজি কর হাসপাতালে তিলোত্তমাকে ‘ধর্ষণ’ ও খুনে এক জন নয়, একাধিক জন জড়িত। এই দাবি নিরিখে প্রকাশ্যে আসে একটি ভাইরাল অডিয়ো।
ওই ভাইরাল ওই অডিয়ো চাঞ্চল্যকর দাবি করলেন আরজি কর হাসপাতালেরই এক ইন্টার্ন। তাঁর সঙ্গে অন্য এক মেডিক্যাল কলেজের পিজিটি ডাক্তারের ফোনালাপ ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল অডিয়োতে ইন্টার্ন দাবি করেছিলেন, “একজন সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁকে বলির পাঁঠা করা হয়েছে। যেটা নিয়ে আমরা সরব হই। কর্তৃপক্ষ চেয়েছিল, আমরা ওটা ভুলে যাই। কিন্তু, ওরা তো জানে না, সেইটুকু আইকিউ রয়েছে, যে ওটা ওর পক্ষে করা সম্ভব কি না। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে যেরকম ইনজুরি রয়েছে দিদির(তিলোত্তমা), তাতে তো একজনের কাজ নয়, কমপক্ষে ২ বা তিনজন রয়েছে। দাদা, আমরা সন্দেহ করছি এটা ইন্টার্নের কাজ। যে ইন্টার্নের যথেষ্ট রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে। তাঁর পরিবারের সদস্যরাও যথেষ্ট উচ্চপদস্থ। নাম নিতে পারব না।” সংবাদমাধ্যমে এই অডিয়ো সম্প্রচারিত।

তদন্তকারী সূত্রের দাবি, অভিযুক্তকে বৃহস্পতিবার রাত ১১টা নাগাদও হাসপাতালে দেখা গিয়েছিল। বেশ কিছু ক্ষণ হাসপাতালে থাকার পর বেরিয়ে যান। পরে আবার শুক্রবার ভোর ৪টে নাগাদ আসেন। ৩০-৩৫ মিনিট ছিলেন হাসপাতালে। তার পর বাড়ি চলে যান। ঘটনার দিন হাসপাতালে অবাধ ঘোরাফেরা ছিল অভিযুক্তর। খোঁজ করছেন তদন্তকারীরা। জরুরি বিভাগের চার তলায় যাওয়া ছাড়াও। হাসপাতালের ট্রমা বিভাগে ও চেস্ট বিভাগের পাঁচ তলাতেও উঠেছিলেন অভিযুক্ত। ওই সব জায়গায় কেন গিয়েছিলেন?‌ সেখানে গিয়ে কী করেছিলেন?‌ কার সঙ্গে দেখা করেছিলেন?‌ সব বিষয়ই খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে অবাধ ঘোরাফেরা ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের। আরজি করের চার তলার সেমিনার হলে এক চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় এমনই তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা। ঘটনার দিনে হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেরিয়েছিলেন অভিযুক্ত। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে এবং অন্যান্য সূত্র থেকে ধৃতের গতিবিধি জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।

আর জি করের তরুণী চিকিৎসকের ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টে সামনে এল একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ধৃত সঞ্জয় রায় প্রথমে অচেতন করে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করেছে। তার পর তাঁকে খুন করা হয়ে। মূলত মদ্যপ অবস্থায় পর্ন ভিডিও দেখার ফলে উত্তেজনার বশে এই কাজ করেছে বলে এখনও পর্যন্ত মনে করা হচ্ছে। তদন্তে উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী পুলিশ মনে করছে, একাই ওই তরুণী চিকিৎসকের উপর নারকীয় অত্যাচার চালিয়েছে সঞ্জয়। অন্য কেউ আর যুক্ত নেই বলেই অনুমান।

৮ আগস্ট নাইট ডিউটি ছিল তরুণী চিকিৎসকের। খাওয়াদাওয়ার পর জরুরি বিভাগে চার তলার সেমিনার হলে ঘুমিয়ে পড়েন। পুলিশ সূত্রে খবর, কিছুক্ষণ পর ওই ঘরে ঢোকে সঞ্জয়। সেমিনার হলে ঢুকে দরজা বন্ধের চেষ্টা করে। লক খারাপ থাকায় দরজা যদিও বন্ধ করা যায়নি। কম্বল চাপা দিয়ে সেই সময় ঘুমিয়েছিলেন তরুণী চিকিৎসক। কম্বল সরিয়ে তাঁকে দেখে সঞ্জয়। প্রথমে তরুণী চিকিৎসকের গলা টিপে ধরে অভিযুক্ত। ঘুম ভেঙে যায় তরুণীর। তিনি সঞ্জয়ের মুখ চেপে ধরেন। সে কারণে ধৃতের মুখেও একাধিক ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। প্রবল শক্তিতে তরুণী চিকিৎসকের মুখ চেপে ধরে সঞ্জয়। সেই সময় সঞ্জয়ের দু’হাতের নখের আঁচড়ে তরুণী চিকিৎসকের মুখে একাধিক ক্ষত তৈরি হয়। ততক্ষণে সঞ্জয় তরুণী নিঃশ্বাস চেপে ধরে। রীতিমতো খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয় দুজনের। সঞ্জয়ের হাত চেপে ধরেন নির্যাতিতা। তাই অভিযুক্তের দু’হাতেও ৬-৭টি নখের দাগ পাওয়া গিয়েছে।

পুলিশ সূত্রে আরও খবর, ধস্তাধস্তির জেরে চশমার কাচ ভেঙে যায়। সেই ভাঙা কাচে তরুণীর চোখে আঘাত লাগে রক্তপাত হয়। যন্ত্রণায় কাতরে ওঠেন তরুণী চিকিৎসক। চিৎকার করার চেষ্টা করেন। চিৎকার বন্ধ করে মুখ আরও জোরে চেপে ধরে তরুণী চিকিৎসকের দেওয়ালে মাথা ঠুকে দেওয়া হয়। এত জোরে গলা টিপে ধরা হয় যে তাঁর থাইরয়েড কার্টিলেজ ভেঙে যায়। অচেতন হয়ে পড়েন। সেই অবস্থায় তাঁর পোশাক খোলা হয়। যৌন নির্যাতন করা হয় তাঁকে। এর পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। তরুণীর যৌনাঙ্গে গভীর ক্ষত রয়েছে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, কুমারী (Virgin) ছিলেন তরুণী চিকিৎসক। গোড়ালিতে আঘাত রয়েছে তাঁর। বিকৃতকাম হওয়ার ফলে এমন নৃশংসভাবে কোনও তরুণীকে সঞ্জয় অত্যাচার করতে পেরেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। এই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত থাকার সম্ভাবনা এখনও পুরোপুরি উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা।

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসক মৃত্যুর ঘটনায় এবার কলকাতা হাই কোর্টে মামলা দায়ের। এখনও পর্যন্ত মোট তিনটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। রাজ্য়ের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, বিজেপি নেতা কৌস্তভ বাগচি, আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি তিনটি পৃথক মামলা দায়ের করেন। প্রতিটি মামলাই প্রধান বিচারপতির এজলাসে দায়ের করা হয়েছে।

আরজি কর মেডিক্যালে কর্তব্যরত অবস্থায় তরুণী চিকিৎসককে খুন ও ধর্ষণের অভিযোগে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। সোমবার নিহত চিকিৎসকের বাড়িতে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সোদপুরে গিয়ে নিহত চিকিৎসকের পরিবারের সঙ্গে দেখা করলেন। দুপুর পৌনে একটা নাগাদ ওই মহিলা চিকিৎসকের বাড়িতে পৌঁছন মমতা। বেরিয়ে বলেন, ‘‘পুলিশ তদন্ত করছে। রবিবারের মধ্যে তদন্ত শেষ না হলে সিবিআইকে তদন্তভার তুলে দেওয়া হবে।’’ এর পরেই জুড়ে দেন, ‘‘যদিও সিবিআইয়ের সাফল্যের হার খুব কম। রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার চুরি যাওয়ার মামলাও সিবিআইকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার কিনারা হয়নি। তবে এ ক্ষেত্রে মানুষের সন্তুষ্টির জন্য সিবিআইকে তদন্তভার দেব।’’ আরও বলেন যদিও সিবিআইয়ের সাফল্যের হার খুব কম। রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার চুরি যাওয়ার মামলাও সিবিআইকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার কিনারা হয়নি। তবে এ ক্ষেত্রে মানুষের সন্তুষ্টির জন্য সিবিআইকে তদন্তভার দেব।’’

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed