সংবিধান অনুযায়ী হাসিনা এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী! ‘প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দেননি হাসিনা, হামলার আশঙ্কায় দ্রুত দেশ ছাড়তে হয়’!
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে এখনও ইস্তফা দেননি শেখ হাসিনা! দাবি হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ অসাংবিধানিক। কারণ, সাংবিধানিক ভাবে এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হাসিনা। বললেন জয়। হাসিনা সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা জয় এখন আমেরিকায়। সেখান থেকে ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থাকে বলেন, ‘‘আমার মা আনুষ্ঠানিক ভাবে কখনওই পদত্যাগ করেননি। তিনি সময়ই পাননি। তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু তত ক্ষণে বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে মিছিল নিয়ে আসতে শুরু করে। তাই সময় ছিল না। আমার মা নিজের ব্যাগ পর্যন্ত গোছাতে পারেননি। সংবিধান অনুযায়ী তিনি এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।’’
ঢাকা ছেড়ে ভারতের উদ্দেশে যাত্রা করার আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদে শেখ হাসিনা ইস্তফা দিয়েছিলেন বলে জানান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। সেই দাবি খারিজ করলেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর পুত্র। হাসিনা সরকারের পতনের পরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ শাহাবুদ্দিন জেনারেল জামান এবং ছাত্রনেতাদের সঙ্গে বৈঠকে স্থির করেন, নোবেলজয়ী ইউনূসকে প্রধান করে আপাতত অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হবে। অন্তর্বর্তী সরকার শপথে ‘প্রধান উপদেষ্টা’ ইউনূসের সরকারে ১৬ জন উপদেষ্টা। মন্ত্রক বণ্টন করা হয়েছে।
বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারকে আক্রমণ করে শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় জানালেন, এই সরকার অসাংবিধানিক। কারণ এই সরকারের কাছে বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন নেই। কেউ এই সরকারকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেননি। বাংলাদেশে অবিলম্বে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা চেয়েছেন জয়। জয় বলেন, ‘‘আমরা সকলে চাই বাংলাদেশে দ্রুত গণতন্ত্র ফিরে আসুক। যে অন্তর্বর্তী সরকার তৈরি হয়েছে, তা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক। সামান্য কয়েক জনের মাধ্যমে নির্বাচিত কোনও সরকারের কথা উল্লেখ নেই সংবিধানে। বাংলাদেশে ১৭ কোটি মানুষ রয়েছেন। সেখানে ২০ থেকে ৩০ হাজার আন্দোলনকারী তো সংখ্যালঘু। তাঁরা সরকার ঠিক করতে পারেন না। এই সরকারের জন্য কেউ ভোট দেননি। এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে এক সপ্তাহও হয়নি। তারা আদৌ বাংলাদেশে শান্তিশৃঙ্খলা ফেরাতে পারবে কি না, তা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। ক্ষমতায় আসা এক জিনিস, আর সরকার চালানো আর এক জিনিস। এই সরকারের কথা কে শুনবে? আমাদের দলের ১০ কোটি সমর্থক রয়েছেন বাংলাদেশে। তাঁরা তো এই সরকারকে সমর্থন করেননি। তাঁদের সমর্থন ছাড়া সরকার চলতে পারে না। কী ভাবে কী হয়, আমরা দেখব।’’ইতিমধ্যে এই সরকার ভুল করতে শুরু করেছে। তারা জানিয়েছে, নির্বাচন তাদের অগ্রাধিকার নয়। অগ্রাধিকার হল আগের সরকারের ভুলের বিচার। কিন্তু তাঁদের এই দেশ সংস্কারের অধিকার তো কেউ দেননি! বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন তাঁদের কাছে নেই। এ ভাবে দেশ চলতে পারে না।’’
এদিকে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দল বিএনপির তরফে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে মদত দিলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের সুসম্পর্ক স্থাপন হওয়া কঠিন। বাংলাদেশের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিএনপির ‘হিন্দু মুখ’ হিসাবে পরিচিত গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘‘আমরা ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার প্রতি আস্থাশীল। কিন্তু ভারত সরকারকেও সেই চেতনা এবং ভাবাবেগ বুঝতে হবে। সেই মতো আচরণ করতে হবে। আপনি যদি আমাদের শত্রুকে সাহায্য করেন তা হলে সেই পারস্পরিক সহযোগিতাকে সম্মান করা কঠিন হয়ে পড়ে।’’
কোটা সংস্কারের দাবিতে গত ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হওয়া ছাত্রবিক্ষোভ ধীরে ধীরে যে ভাবে হাসিনার অপসারণের লক্ষ্যে ‘এক দফা দাবির’ আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল, তার নেপথ্যে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির মদত রয়েছে বলে অভিযোগ। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মদতের পাশাপাশি উঠে এসেছে জামাতে ইসলামির নাম। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল ওই কট্টরপন্থী দল। জামাত কর্মীদের একাংশকেই পাক সেনা সপ্তাহ দুয়েকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়ে রাজাকার এবং আল বদর ঘাতক বাহিনী বানিয়েছিল বলে অভিযোগ। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অশান্তি এবং ক্ষমতার পালাবদলের জন্য পাকিস্তানের সামরিক গুপ্তচর বিভাগ আইএসআই-কে দুষলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেশে অশান্তি সৃষ্টি করতে ধারাবাহিক ষড়যন্ত্র করেছে আইএসআই।’’