ক্ষমা চেয়ে অবসর বিনেশ ফোগাটের, কুস্তিগির হেরে গিয়েছেন কুস্তির কাছেই, প্যারিস ছাড়ার নির্দেশ অন্তিমকেও

রুপোর দাবি নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতের দ্বারস্থ কুস্তিগির বিনেশ ফোগাট। প্যারিস অলিম্পিক্স বাতিল। সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। আন্তর্জাতিক আদালতের রায় ঘোষণার আগেই অবসর ঘোষণা। বিনেশ জানালেন, তিনি হেরে গিয়েছেন কুস্তির কাছে। নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে বিনেশ লেখেন, “মা, কুস্তির কাছে আমি হেরে গেলাম। আমাকে ক্ষমা কোরো। তোমার স্বপ্ন, আমার সাহস সব শেষ হয়ে গিয়েছে। আর শক্তি বাকি নেই। কুস্তি, তোমাকে বিদায়। ২০০১-২০২৪। সবসময় তোমার ঋণী হয়ে থাকব। ক্ষমা করে দিও।”
অলিম্পিক্সে মহিলাদের ৫০ কেজি বিভাগে ফাইনালে উঠেই বিনেশ প্যারিস থেকে ভিডিয়ো কলে মাকে জানিয়েছিলেন, সোনা জিতেই ফিরবেন। কিন্তু ভারতীয় অলিম্পিক্স সংস্থা জানিয়ে দেয়, ১০০ গ্রাম ওজন বেশি হওয়ায় বাতিল করা হয়েছে বিনেশকে। ২ কেজি ওজন বেড়ে যাওয়ায় ওজন কমাতে সারা রাত পরিশ্রম করেছিলেন। চুল কেটে ফেলেন। শরীর থেকে রক্ত বার করেন। তার পরেও ১০০ গ্রাম ওজন বেশি হয়ে যায়। শরীরে জলের ঘাটতি হওয়ায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় বিনেশকে।
কুস্তিতে ৫০ কেজি বিভাগ বিনেশের ইভেন্টই নয়। তাঁর আসল ইভেন্ট ৫৩ কেজি বিভাগ। দিল্লির রাস্তায় আন্দোলনে শামিল হওয়া বিনেশ ৫৩ কেজির ট্রায়ালে যেতেই পারেননি। তাঁর বদলে অলিম্পিক্সের ৫৩ কেজি বিভাগে যোগ্যতা অর্জন করেন অন্তিম পঙ্ঘাল। বিনেশকে তার পর বলা হয়েছিল, তিনি যদি ট্রায়ালে পঙ্ঘালকে হারাতে পারেন, তা হলে তাঁকে পছন্দের ৫৩ কেজিতে নামতে দেওয়া হবে। কিন্তু কুস্তি থেকে দূরে থাকার জন্য স্বাভাবিক ভাবেই বিনেশ সেই ট্রায়ালে হেরে যান। শেষ পর্যন্ত ৫০ কেজি বিভাগ। বেছে নিতে হয়েছিল
ভারতীয় কুস্তি সংস্থা বিনেশের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক্স সংস্থার কাছে আবেদন করলেও আন্তর্জাতিক সংস্থা জানিয়ে দেয়, নিয়ম সকলের জন্য সমান। তার পরেও বিনেশ আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে রুপোর দাবিতে মামলা করেন। মামলার রায় ঘোষণা হওয়ার আগেই কুস্তি থেকে অবসর ঘোষণা করলেন বিনেশ।
ভারতীয় অলিম্পিক্স সংস্থার প্রধান পিটি ঊষা হাসপাতালে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। বিনেশের কোচ বীরেন্দ্র দাহিয়া, মনজিৎ রানিও হাসপাতালে যান। আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতের উচিত ফাইনালে না খেলতে পারায় তাঁকে অন্তত রুপো দেওয়া উচিত। রুপোর আবেদন করা হলেও ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড রেস্টলিংয়ের (ইউডব্লিউডব্লিউ) সভাপতি নেনাদ লালোভিচ মোটামুটি বলেই দেন, তাতে খুব একটা লাভ হবে না। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সকলের উচিত নিয়মকে মান্য করা। যা ঘটেছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিনেশের জন্য আমারও খারাপ লাগছে। ওর ওজন সামান্য বেশি ছিল। কিন্তু নিয়ম তো নিয়মই। সব কিছুই পরিষ্কার। সবার সামনে সব কিছু হয়েছে। সেখানে অন্য খেলোয়াড়েরাও ছিল। অনুমোদিত ওজন বজায় রাখতে ব্যর্থ এক জনকে কী করে অনুমতি দেওয়া যায়? প্রতিযোগিতা নিয়ম অনুযায়ী চলবে। অসম্ভব। এ ভাবে পদক দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। ওজনের জন্য ও অন্য ক্যাটেগরিতে চলে যাচ্ছে। আমরা কেউ নিয়মের বাইরে যেতে পারি না। সবাইকে এক নিয়ম মেনে চলতে হয়। এ রকম ক্ষেত্রে সকলেই একটা শেষ চেষ্টা করে। ভারতও আবেদন করলেও কিছু বদল হওয়া সম্ভব নয়।’’
হারের পরে গেমস ভিলেজ ছেড়ে অন্তিম পাঙ্ঘালের চলে যাওয়ার অভিযোগ। তাঁর পরিচয়পত্র ব্যবহার করে গেমস ভিলেজে ঢুকতে গিয়ে আটক হয়েছেন অন্তিমের বোন। নিজের বিভাগে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে হারের পরে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ কুস্তিগির অন্তিমের বিরুদ্ধে। পরিচয়পত্র কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। ৫৩ কেজি বিভাগে নেমে অন্তিম প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে ০-১০ পয়েন্টে হেরে বাদ যাওয়ার পর তার পরে আর গেমস ভিলেজে ফেরেননি অন্তিম। তাঁর কোচ ও বোন নিশা একটি হোটেলে রয়েছেন। সেখানেই যান অন্তিম। সন্ধ্যায় অনুশীলনেও যাননি। বোনের হাতে নিজের পরিচয়পত্র দিয়ে গেমস ভিলেজ থেকে তাঁর জিনিসপত্র ফেরত নিয়ে যেতে বোনকে পাঠান। গেমস ভিলেজে ঢোকার সময় প্যারিস পুলিশ নিশাকে আটক করে। ভারতীয় অলিম্পিক্স সংস্থা সিদ্ধান্ত নিয়েছে শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য অন্তিমকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। ইতিমধ্যেই প্যারিস ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিচয়পত্রও নিয়ে নেওয়া হয়েছে।