জন্মদিনেই অভিষেক ম্যাচে ছয় গোলে জয়, ডার্বির ভাবনার প্রবেশ সবুজ মেরুন শিবিরে
অভিষেক ম্যাচের দিনেই জন্মদিন। ছয় গোল দিয়ে কলকাতায় দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হোসে মোলিনার। ডার্বির মহড়া সারাই লক্ষ্য ছিল হাবাসের উত্তরসূরির। ডার্বির আগে বড় জয়ে খুশি সবুজ মেরুনের স্প্যানিশ কোচ। ঘরের মাঠে ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সকে ৬-০ গোলে হারাল মোহনবাগান। পরের ম্যাচই ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে। ডার্বির আগে আধ ডজন গোলে জয় আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বাড়িয়ে দেবে সবুজ-মেরুন ব্রিগেডের। ডুরান্ডের প্রথম ম্যাচে একমাত্র টম অলড্রেডকে খেলিয়েছিল মোহনবাগান। জেসন কামিংস শুরু থেকে খেলেন এই ম্যাচে। ম্যাচের ৪ মিনিটের মাথায় প্রথম গোল করেন কামিংস। সাহাল আব্দুল সামাদের কাছ থেকে বল পেয়ে কামিংস বক্সে ঢুকে ঠান্ডা মাথায় গোল করেন। ৬ মিনিট পরে ব্যবধান বাড়ান অলড্রেড। লিস্টন কোলাসোর ক্রসে হেড করেন কামিংস। সেই বল গোলরক্ষক বাঁচালেও ফিরতে বলে গোল করেন অলড্রেড।
মোহনবাগানের এই ম্যাচ দেখতে গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন কার্লেস কুয়াদ্রাত। ডার্বির আগে প্রতিপক্ষকে দেখে নিতে চাইছিলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। ৩৮ মিনিটের মাথায় দলের তৃতীয় গোল করেন লিস্টন। সাহালের কাছ থেকে বল পেয়ে জোরালো শটে গোল করেন। ৪৭ মিনিটেই গোল করতে পারতেন সুহেল ভাট। গোলরক্ষককে একা পেয়েও বাইরে মারেন। ৫১ মিনিটের মাথায় গোল করতে পারেননি লিস্টন। ৬৫ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ের জোরালো শটে দলের চতুর্থ গোল কররেন অনিরুদ্ধ থাপা। ম্যাচে ৭২ শতাংশ বলের দখল ও প্রতিপক্ষের গোল লক্ষ্য করে ১৮টি শট। ৭৬ মিনিটের মাথায় নিজের দ্বিতীয় ও দলের পাঁচ নম্বর গোল করেন কামিংস। সাহালের কাছ থেকে বল পেয়ে মনবীর সিং বল বাড়ান কামিংসকে। গোল করতে ভুল করেননি অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকার। ৮২ মিনিটের মাথায় গোলের সুযোগ নষ্ট করেন সাহাল। বাগানের নতুন বিদেশি গ্রেগ স্টুয়ার্ট তা নষ্ট করেননি। সংযুক্তি সময়ে কামিংসের সঙ্গে পাস খেলে বক্সে ঢুকে গোল করায় আধ ডজন গোলে ম্যাচ জিতে মাঠ ছাড়ে মোহনবাগান।
মোলিনা বলেন, ‘ছয় গোল হওয়ায় খুশি। ডার্বির আগে এই জয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাত্র ১০ দিনের প্রস্তুতিতে আমাদের নামতে হয়েছে। এখনও দল পুরোপুরি ফিট নয়। আমি ট্রেনিংয়ে যা করতে চেয়েছিলাম, সেটা মাঠে প্রতিফলন হয়েছে। তবে ডার্বি ভিন্ন ম্যাচ। আশা করব আমরা একই ছন্দ অব্যাহত রাখতে পারব।’ দলের সেরা ফুটবলার জেমি ম্যাকলারেন ছাড়াই হাফ ডজন গোল। তাঁর সঙ্গে দিমিত্রি পেত্রাতোসের জুটি দেখার অপেক্ষায় বাগান ভক্তরা। চলতি মরশুমে প্রথম নেমেই জোড়া গোল জেসন কামিন্সের। সবুজ মেরুন জার্সিতে অভিষেকেই গোল গ্রেগ স্টুয়ার্টের। গোল পান টম অ্যালড্রেডও। মরশুমের শুরুতেই তিন বিদেশির গোল পাওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ? মোলিনা বলেন, ‘ম্যাকলারেন পুরো ফিট নয়। চোট আছে। দিমি সবে এসেছে। তবে আমি প্লেয়ারদের মধ্যে পার্থক্য করতে চাই না। মাঠে এগারোজন খেলেছে। সবাই আগ্রাসী ফুটবল খেলেছে। আমরা ছয় গোল দিয়েছি। গোল হজম করিনি। তাই অবশ্যই খুশি। আমার দলের সব প্লেয়ারই সেরা। আলাদা করে কাউকে সেরা বাছতে চাই না।’
বিশেষ দিনে কাকে গোল উৎসর্গ করলেন বাগানের নতুন কোচ? মোলিনা বলেন, ‘যারাই মোহনবাগানকে ভালবাসে, আমি তাঁদের এই জয় উৎসর্গ করছি। আশা করব এই রেজাল্ট ওরা উপভোগ করবে। আমরা সমর্থকদের আরও আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করব।’ এদিন নিজের সহকারীকে নিয়ে মোহনবাগানের খেলা দেখতে এসেছিলেন কার্লেস কুয়াদ্রাত। এই প্রসঙ্গে মোলিনা বলেন, ‘আমরা ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ টিভিতে দেখেছি। মাঠে যাইনি। ওরা এখানে এসে খেলা দেখল। যা স্বাভাবিক ব্যাপার। আমাদের মাপতে এসেছিল। ইস্টবেঙ্গল খুবই ভাল দল। তবে আমি অন্য দল নিয়ে কথা বলতে চাই না। নিজেদের দলেই ফোকাস করতে চাই।’ বাগান জার্সিতে অভিষেক হয় আপুঁইয়ার। চোট সারিয়ে দীর্ঘদিন পরে নামেন আশিক কুরুনিয়ন। দু’জনের খেলায় খুশি বাগানের নতুন কোচ।
দ্বিতীয় মরশুমের শুরুতে নেমেই জোড়া গোল। স্বভাবতই খুশি জেসন কামিন্স। স্টুয়ার্টের সঙ্গে খেলাও উপভোগ করেছেন। কামিন্স বলেন, ‘আমি নিজের খেলা উপভোগ করি। গোল করাই আমার লক্ষ্য। নতুন ম্যানেজার, নতুন প্লেয়াররা এসেছে। আমরা সবে শুরু করেছি। তবে শুরুটা দারুণ হল। এর থেকে ভাল হতে পারত না। আমি প্রথমবার স্টুয়ার্টের সঙ্গে খেললাম। জানি ও কোয়ালিটি প্লেয়ার। ভারতে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। আশা করছি আমাদের জুটি জমে যাবে।’ ডার্বির জন্য তৈরি অজি স্ট্রাইকার। কামিন্স বলেন, ‘ডার্বির জন্য তৈরি। ছেলেরা আত্মবিশ্বাসী। ছয় গোলে জয় মনোবল আরও বাড়িয়ে দিল। ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচের গুরুত্ব সবাই জানে। ওই ম্যাচটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের নিজেদের প্রমাণ করতে ম্যাচটা জিততে হবে।’ সবুজ মেরুন জার্সিতে অভিষেকেই গোল পেয়ে সন্তুষ্ট গ্রেগ স্টুয়ার্ট। এবার ডার্বিতেও গোল চান। স্টুয়ার্ট বলেন, ‘আমি মাত্র ছ’দিন হল এসেছি। দু’দিন টেনিং করেছি। ১৫ মিনিট খেলেছি। ম্যাচ জেতায় খুশি। আমরা আরও গোল করতে পারতাম। তবে একসঙ্গে প্রথম ম্যাচ খেললাম। তাই রেজাল্টে সবাই খুশি। পরের ম্যাচের আগে আরও পরিশ্রম করব। ডার্বির গুরুত্ব জানি। আশা করছি তার আগে আমরা তৈরি হয়ে যেতে পারব। আমি ডার্বিতেও গোল করতে চাই।’ ডার্বির ভাবনা ঢুকে পড়েছে বাগান শিবিরে। এদিন রক্ষণ সামলানোর পাশাপাশি গোলও করেন টম অ্যালড্রেড। দিমিত্রিয়স ডিয়ামানটাকোস, মাদি তালালদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে তৈরি স্কটিশ ডিফেন্ডার।