হকি কিট কিনতে বিক্রি করেছিলেন বাড়ির গরু, আন্তর্জাতিক হকিতে গ্লাভস হাতে আর দেখা যাবে না শ্রীজেশকে
প্যারিস অলিম্পিকে হকিতে ব্রোঞ্জ জয়ী ভারত। স্পেনকে ২-১ গোলে হারিয়ে ব্রোঞ্জ ভারতের দখলে। জয়ের পিছনে ভারতীয় হকি দলের কিপার পিআর শ্রীজেশের অবদান সবথেকে বেশি। প্রত্যেক ম্যাচের শেষে শ্রীজেশের সমর্থনে ভরে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। গ্যালারিতে দেখা গিয়েছে পোস্টার। শ্রীজেশ হয়ে উঠেছে ভারতীয় হকি দলের ‘দ্যা ওয়াল’। আর এদিন ব্রোঞ্জ পদকের ম্যাচে আরও একবার ভারতকে জেতালেন তিনি। স্পেনের মুহুর্মুহু আক্রমণের সামনে এক পাঁচিল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। অলিম্পিকে দেশকে পরপর দুবার পদক জিতিয়ে গ্লাভস তুলে রাখলেন। আন্তর্জাতিক হকিতে আর দেখা যাবে না শ্রীজেশকে। হরমনপ্রীত বলেন, “শ্রীজেশ যত বছর ধরে খেলছে, আমাদের দলের কয়েক জন খেলোয়াড়ের বয়স তত। এত দিন ধরে ও দেশের হকি সামলেছে। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। তাই এ বার আমরা ঠিক করেছিলাম, শ্রীজেশের জন্য পদক জিততে হবে। সেটা করতে পেরেছি।”৪১ বছর পরে ২০২১ টোকিয়ো অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ জিতেছিল ভারত। তিন বছর পরে সেই ব্রোঞ্জই এল। এখানেই থামতে নারাজ হরমনপ্রীতের মতে হকিতে আরও উন্নতি করুক দেশ। আগামী অলিম্পিক্সে পদকের রং বদল করতে চান।
ভারতের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ হকি খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন হয়ে মাঠ ছাড়লেন দ্যা ওয়াল। জয়ের পর আবেগপ্রবণ হয়ে এদিন কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায় শ্রীজেশকে। কেরালাইট কিপার দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গেছেন। গোলের সামনে অতিমানবিক পারফরম্যান্সের জন্য অর্জন করেছেন সুপারম্যান ডাকনাম। কিছুদিন আগেই গ্রেট ব্রিটেনের সামনে অপ্রতিরোধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন শ্রীজেশ। পেনাল্টি শুট আউটে ম্যাচ গেলে একা হাতে জিতিয়েছেন ভারতকে।
কেরালার কোচি শহরতলি এলাকার কিজককাম্বালামে জন্মগ্রহণকারী শ্রীজেশের উঠে আসা কৃষক পরিবার থেকে। শ্রীজেশের বাবা ছেলেকে হকি কিট কিনে দেওয়ার জন্য তাঁদের গরু বিক্রি করে দিয়েছিলেন। ছোট থেকেই হকিতে আগ্রহ থাকার জন্য পরিবারও পাশে ছিল শ্রীজেশের। ভারতের হয়ে একাধিক জয়ের সাক্ষী কেরালাইট কিপার। ২০২২ সালের হ্যাংঝৌ এশিয়ান গেমসে সোনা সহ দেশকে তিনটি এশিয়ান গেমসের পদক জিতেছিলেন শ্রীজেশ। যা প্যারিস অলিম্পিকে ভারতের স্থান সুরক্ষিত করেছিল। অলিম্পিকে গ্রেট ব্রিটেনের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে ১৫টি শটের মধ্যে ১৩টি সেভ করেছিলেন ভারতীয় কিপার।
ধারাবাহিক ভাবে ভারতের হয়ে নিজের সেরাটা দিয়ে গেছেন তিনি। ২০২১ এবং ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক হকি ফেডারেশনের সেরা গোলরক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন। সেমিফাইনালে হারের পর ভেঙে পড়েছিলেন ভারতীয় খেলোয়াড়রা। জয়ের পর ফের চেনা মেজাজে দেখা গেল হরমনপ্রীতদের। শ্রীজেশকে কাঁধে তুলে মাঠ প্রদক্ষিণ করেন অধিনায়ক হরমনপ্রীত। গোটা দল শ্রীজেশকে সামনে রেখে স্যালুট জানায়। এমনকি কোচ ক্রেগ ফুলটনও ছুটে এসে শ্রীজেশকে জড়িয়ে ধরেন। গোটা স্টেডিয়াম উঠে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানায় শ্রীজেশকে।