অলিম্পিকে ইতিহাস ভিনেশ ফোগাটের, নিশ্চিত পদক!প্যারিস থেকে পদক নিয়ে দিল্লি ফেরার পর কী করবেন দিল্লি পুলিশের সেই কর্মীরা?

‘ভিনেশের পারফরম্যান্স ব্রিজভূষণের গালে সপাটে চড়’। প্যারিস অলিম্পিকে ভিনেশের এই দুর্দান্ত লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়ে তাঁর একসময়ের সতীর্থ বজরং পুনিয়া বলেন, “ভিনেশের কাছে সব মেডেল ছিল। শুধু অলিম্পিক মেডেলটাই বাকি ছিল। আশা করি সেটাও আসবে। ওঁর এই পারফরম্যান্স ব্রিজভূষণের জন্য সপাটে চড়। আইটি সেলের যারা ভিনেশের পিছনে ভকভক করছিল, যারা বলছিল ভিনেশের দ্বারা কিছু হবে না, এই লড়াই তাঁদের গালেও থাপ্পড়। এবার তাঁরা নিজেদের মা-বোনেদের কী জবাব দেবেন?”

দিল্লির রাজপথে দেশের সেরা কুস্তিগিরদের বেধড়ক মার। ভিনেশের গায়েও পড়ছে একের পর এক লাঠির আঘাত। সেই দৃশ্য দেশের ক্রীড়াপ্রেমীরা ভুলবেন না। রাজধানীর বুকে দীর্ঘ লড়াই পিছনে ফেলে হাজার প্রতিকূলতা কাটিয়ে অলিম্পিকের মঞ্চে দাপিয়ে পারফর্ম করছেন সেই ভিনেশ। কুস্তিতে নিজের ইভেন্টের সেমিফাইনালে ভিনেশ।
হরিয়ানার দঙ্গল কন্যা মহিলাদের ৫০ কেজি ফ্রি স্টাইল বিভাগের ফাইনালে। অলিম্পিকের রুপোর পদক নিশ্চিত করে ফেলেছেন ভিনেশ। বুধবার লড়বেন সোনা জেতার লক্ষ্যে। ভিনেশের প্রথম অলিম্পিক পদক জয় নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি চলতি অলিম্পিকে ভারতের চতুর্থ পদক জয়ও নিশ্চিত হয়ে গেল। সেমিফাইনালে ভিনেশ কিউবার কুস্তিগির গুজম্যান লোপেজকে উড়িয়ে দেন। সেমিফাইনাল বাউট জিতলেন ৫-০ পয়েন্টে। শুরু থেকেই ভিনেশ ছিলেন বিধ্বংসী মেজাজে। প্রথমে তিনি হারিয়েছেন টোকিও অলিম্পিকের সোনাজয়ী সুসাকি উই-কে। গত অলিম্পিকের সোনাজয়ীই চলতি অলিম্পিকের সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ ছিল। তাঁকে হারানোর পর আবার বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় তারকা ওকসানা লিভাচকে হারিয়ে সেমিতে জায়গা করেন। গুজম্যান লোপেজ ছিলেন অনেক সহজ প্রতিপক্ষ। প্রথম মিনিট থেকে দাপিয়ে খেলে গেলেন ভারতীয় কুস্তিগির। পাত্তা পেলেন না গুজম্যান। ভিনেশ জিতলেন ৫-০ পয়েন্টে।
বিনেশ ফোগট প্যারিস থেকে পদক নিয়ে দিল্লি ফেরার পর কী করবেন দিল্লি পুলিশের সেই কর্মীরা? যাঁরা যন্তর মন্তর থেকে প্রতিবাদী বিনেশকে প্রায় পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে গিয়ে আটক করেছিলেন! ২৯ বছরের কুস্তিগিরের সঙ্গে একটা নিজস্বী তুলে রাখতেই পারেন। সর্বভারতীয় কুস্তি সংস্থার প্রাক্তন সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অন্যতম প্রধান মুখ ছিলেন বিনেশ। তিনিই আবার প্যারিস অলিম্পিক্সে ভারতীয় কুস্তিরও অন্যতম প্রধান মুখ। কুস্তি ঠান্ডা ঘরে হয় না। ম্যাটে লড়াই করতে হয়। প্রস্তুতি নিতে হয় আখড়ায়। ভারতীয় কুস্তিতে হরিয়ানার ফোগট পরিবারের অবদান কম নয়। কাকা মহাবীর সিংহ ফোগট প্রাক্তন কুস্তিগির। বিনেশের প্রথম কোচ। বাবা রাজপাল ফোগটও প্রাক্তন কুস্তিগির। গীতা ফোগট এবং ববিতা ফোগট তাঁর তুতো বোন। আমির খানের ছায়াছবি ‘দঙ্গল’ তুলে ধরেছিল ফোগট বোনেদের কুস্তিগির হয়ে ওঠার লড়াইয়ের কাহিনি। সংগ্রামের কাহিনি। গ্রাম, সমাজের কটাক্ষ উপেক্ষা লড়াইটা ঢুকিয়ে দিয়েছিল ফোগট বোনেদের মজ্জায়। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন দিল্লি পুলিশই তো টেনে হিঁচড়ে বিনেশকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল যন্তর মন্তর খালি করার জন্য। সুসাকি কেহারানোর পর প্যারিসের ম্যাটে শুয়ে বিনেশের কান্না দেখেছে দেশ। টোকিও অলিম্পিকের সোনাজয়ী অ্যাথলিট নীরজ চোপড়া বলেছিলেন, “এক কথায় অসাধারণ। অবিশ্বাস্য। ও যে কতটা পরিশ্রম করছে, সেটা বোঝা যাচ্ছে। ওঁর সঙ্গে যা যা হয়েছে…, আমার প্রার্থনা ও যেন পদক পেয়েই অলিম্পিক শেষ করে।”